২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০১:৪৩:৪২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের (এক পক্ষের) সংবাদ সম্মেলন
ভবন ফোরক্লোজারের তথ্য উপস্থাপন : পেমেন্ট দিয়ে যাচ্ছি মইনুল
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১২-২০২৩
ভবন ফোরক্লোজারের তথ্য উপস্থাপন : পেমেন্ট দিয়ে যাচ্ছি মইনুল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ


প্রবাসের অন্যতম আঞ্চলিক সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের অচলাবাস্থা যেন কাটছে না। দুটি কমিটি থাকলেও একপক্ষের সঙ্গে অন্যপক্ষের বিরোধ যেন লেগেই আছে। একটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন সভাপতি বদরুল হোসেন খান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম। অন্যপক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন সভাপতি শাহীন কামালী এবং সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম। মূলত এই ভবন ক্রয়কে কেন্দ্র করেই বিভক্তির জন্ম। সভাপতি বদরুল হোসেন খানের নেতৃত্বাধীন কমিটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় গত ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিমের পরিচালনায় জ্যাকসন হাইটসের মাম’স রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছদরুন নূর, বদরুন নাহার খান মিতা, সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন লকু ও শফিউদ্দিন তালুকদার। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান এবং সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বদরুল হোসেন খান এস্টোরিয়ায় অবস্থিত জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের ভবন ফরক্লোজারে চলে গিয়েছে বলে তথ্য উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে এ ব্যাপারে সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম বলেন, আমরা নিয়মিত পেমেন্ট করে যাচ্ছে। সাময়িক যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে সেজন্য বদরুল হোসেন খানের কমিটিই দায়ী। তারা হার্ডল্যান্ডারের ওপর মামলা করেছে এবং বাড়ির ওপরে লিন বসিয়েছে। যে কারণে হার্ডল্যান্ডার নিজেও লিন বসিয়েছে তার অর্থ সিকিউর করার জন্য। তিনি আরো বলেন, বাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় নিশ্চয় আইনজীবীর মাধ্যমে লিখিত চুক্তি হয়। সেই চুক্তি এবং আইনজীবীর পরামর্শ অনুযায়ীই আমরা কাজ করছি। সুতরাং বাড়ি চলে যাচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলন করে বিভ্রান্তি তৈরি করার কোনো অবকাশ নেই।

লিখিত বক্তব্যে বদরুল হোসেন খান বলেন, প্রাকৃতির সৌন্দর্যের লীলাভূমি হজরত শাহজালাল ও শহ্পরাণের স্মৃতিবিজড়িত বৃহত্তর সিলেট মানুষের প্রাণের সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনকের পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। আমরা আজ অত্যন্ত বিষণ্ণ মন নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনকের অর্থ আত্মসাৎ করে ক্রয়কৃত ভবন আজ ফর ক্লোজে। ২০২২ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করা ও নানাবিদ সমস্যা নিয়ে এই সংগঠনের দ্বিধা বিভক্তি কারো অগোচর নয়। কিন্তু এসব কাঠিয়ে উঠে সংগঠনকে স্বমহিমায় দ-ায়মান করতে বর্তমান কার্যকরি কমিটি পুরো জালালাবাদবাসীর সহযোগিতায় আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ, সব বাধা-বিপত্তি কাঠিয়ে স্বগৌরবে মহিমান্বিত হবোই। এ লক্ষ্যে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম গং কর্তৃক জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে জালায়াতির মাধ্যমে তুলে নেওয়া ৩,৩২,৮০৬.৬৯ সেন্ট আদায়ের জন্য কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে যার (Index ৭১৮১৯২/২০২৩)। বিচারাধীন মামলার বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু অবহিতকরণ সম্ভব নয়।

বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম কর্তৃক জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের ব্যাংক একাউন্ট থেকে সকল সাংগঠনিক নিয়ম রীতি ও সংবিধানকে পদদলিত করে জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে নেওয়া ৩,৩২,৮০৬.৬৯ সেন্ট ব্যবহার করে নিউ ইয়র্কের 31st Street, Astoria, NY 11106 এ অবস্থিত বসত ঘর তার একান্ত নিজের প্রতিষ্ঠিত ‘জালালাবাদ ইউএসএ ইনক’ নামক কর্পোরেশনের নামে কিনে- সেই ঘরকে ‘জালালাবাদ ভবন’ নামকরণ করে প্রবাসী জালালাবাদবাসীর ঐতিহ্যের সঙ্গে ঠাট্টা মশকরায় লিপ্ত হন। আজ আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ করছি যে, পূর্বোল্লেখ্য বিচারাধীন মামলায় নথিভুক্ত এ ঘরটি Washington Equity and Funding Corp. এর অনুকূলে ফর ক্লোজার এ নথিভুক্ত হয়েছে যার (Index ৭২১২৫০/২০২৩)। যা প্রমাণাদি সাপেক্ষে আমরা আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরছি। একই সঙ্গে এই সমালোচিত-আলোচিত ভবনের নানাবিধ আর্থিক দিক ও এ ভবনকে ঘিরে ব্যক্তি বিশেষ বা সমষ্টি কর্তৃক প্রবাসী বৃহত্তর জালালাবাদবাসীর প্রাণের সংগঠন ঐতিহ্যবাহী জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনকে ধ্বংস করার নীল নকশার নানা দিক আপনাদের সম্মুখে উপস্থাপন করছি। 

আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, ‘তথাকথিত জালালাবাদ ভবন’ 3607 31st Street, Astoria, NY 11106 নিউইয়র্ক স্টেট নিবন্ধিত ফর প্রফিট করপোরেশন ‘জালালাবাদ ইউএসএ ইনকের মালিকানাধীন একটি বসত বাড়ি। যে করপোরেশনের একমাত্র ওনার এবং প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম। এ ঘরটি ২০২২ সালের ১৭ অগস্ট কেনা হয় এবং পরবর্তী সময়ে জালালাবাদ ভবন নামে একটি সাইনবোর্ড সেখানে টাঙানো হয়। এরই সূত্র ধরে নিউইয়র্কের বাঙালি কমিউনিটির সামাজিক অঙ্গনে নানাবিধ ভাঙা গড়ার কাজে সিদ্ধহস্ত অপরিণামদর্শী কিছু অতি উৎসাসী এ ভবনকে ‘জালালাবাদ ভবন’ নামে প্রচারণায় লিপ্ত হন। আজ যখন ব্যাংক জালিয়াতি এর নিষ্কণ্টক প্রমাণ তথাকথিত এ জালালাবাদ ভবন ফরক্লোজারে চলে গিয়েছে- তখন তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন- বৃহত্তর জালালাবাদবাসীর ঐক্য-সংহতির প্রাণকেন্দ্র জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনকে ধ্বংসের পাঁয়তারায় আপনারা আর কতকাল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকবেন? আমাদের হাতে থাকা প্রমাণাদি সাপেক্ষে আপনাদের মাধ্যমে পুরো কমিউনিটিকে অবগত করতে সুপ্রিমকোর্টের পাবলিক রেকর্ড অনুযায়ী Washington Equity and Funding Corp. (Index 721250/2023) এর অনুকুলে ফরক্লোজারে নিবন্ধিত হওয়া আলোচ্য ভবনের নানাবিধ আর্থিক দিক আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরছি। 

১. রেকর্ড অনুযায়ী মর্টগেজ পেমেন্ট দেওয়া হয়নি মোট ৮ মাস। জানুয়ারি ২০২৩ থেকে আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত। অদ্যাবধি পরবর্তী মাসগুলোও এর সঙ্গে যোগ হবে। ২. আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত হিসাবে অনাদায়ী মর্টগেজ পেমেন্ট সর্বমোট (651,618.06 as of August 23, 2023) Washington Equity and Funding Corp. যা নিবন্ধনের উল্লিখিত। ৩. মোট মাসিক মর্টগেজ ৫৩৩৭.৫০ সেন্ট। ৪. ভবনের মাসিক রেন্টাল ইনকাম ৫৮০০, যা ভবনের মালিক বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম কর্তৃক বিভিন্ন সময় দেওয়া বক্তব্য থেকে প্রতিয়মান। ৫. প্রপার্টি ক্লোজিং তারিখ ১৭ অগাস্ট ২০২২। ৬. অসাংবিধানিকভাবে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৩৩২,৮০৬.৬৯ সেন্ট উত্তোলন করে এই ঘর কিনতে ব্যবহার করা হয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, আমরা পূর্বেই বলেছিলাম যে, নানান ধরনের জালিয়াতির মাধ্যমে এই ঘরটি কেনা হয়েছে একান্ত ব্যক্তিস্বার্থে, যা জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে সমর্থনযোগ্য নয়। আজ এই ঘরটি ফরক্লোজারে নিবন্ধিত হওয়ার মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হলো যে, সন্তুষ্টজনক রেন্টাল ইনকাম থাকা সত্ত্বেও এ বাড়িটি ফর ক্লোজার এ যাওয়া প্রশ্ন সাপেক্ষ। আমরা মনে করি, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের অজুহাত দেখিয়ে এই ঘর কেনার একান্ত উদ্দেশ্যেই ছিল-জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের যাবতীয় অর্থ আত্মসাৎ করার হীন মানসিকতা। আরেকটি বিষয় অবগতিতে আপনারা আশ্চর্য হবেন যে, এই ভবন কেনার সময় রিয়েল এস্টেট এজেন্ট প্রতিষ্ঠান ছিল ‘মেগা হোম রিয়েলিটি ইনক’। এই ঘর কেনা হয় জালালাবাদ ইউএসএ ইনক’ করপোরেশনের নামে, যার একমাত্র ওনার এবং প্রেসিডেন্ট হলেন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম এবং মইনুল ইসলামই আমাদের কমিউনিটিতে মেঘা হোম রিয়েলিটির একজন রিয়েল স্টেট এজেন্ট। কথিত জালালাবাদ ভবন ক্রয়ে বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম সেলার কমিশন বাবদ ১৭,৪০০ এবং বায়ার কমিশন বাবত ২৬,১০০ সর্বমোট ৪৩,৫০০ মেগা হোম রিয়েলটি নামে নিজেই গ্রহণ করেণ। এ ছাড় কমিশন বাবত প্রিন্স রিয়ালটি নামে আরো একটি প্রতিষ্ঠান ৩৪,৮০০ এবং ৮,৭০০ যার সর্বমোট ৪৩,৫০০ দুটি প্রতিষ্ঠান মিলে সর্বমোট ৮৭,০০০ হার্ড লোন থেকে কমিশন হিসেবে গ্রহণ করেন। এ ধরনের নজির ইতিপূর্বে কোন বাড়ি ক্রয় করতে হয়েছে কি না আমাদের জানা নেই। যে বিষয়টি জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনকের এটর্নি’র ডকুমেন্ট ডিসকভারি মাধ্যমে সেলার ও বায়ার Financial Closing Statements পরিষ্কার হয়। যার একটি কপি আপনারাদের কাছে দেওয়া হলো। সুতরাং গোটা বিষয়ে অন্তর্নিহিত স্বার্থ ও লাভ লোকসানের বিষয়টি সহজেই অনুমেয়।

তিনি আপনাদের মাধ্যমে নিউইয়র্কের বৃহত্তর জালালাবাদবাসীকে আমরা অবগত করতে চাই যে, সার্বিক বিষয় অবলোকনে তাদেরকে হতাশ হলে চলবে না, আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখুন, আমরা আপনাদের প্রাণের সংগঠনের ঐক্য, সংহতি এবং সুনামকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি, আপনাদের সঙ্গে নিয়েই ভবিষ্যৎ সফলতার সোপানও রচিত হবে, ইনশাআল্লাহ।

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বদরুল হোসেন খান ও রোকন হাকিম। যদিও তারা অনেক প্রশ্নের সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন।

শেয়ার করুন