২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৩:৫২:২০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বিএনপি’র চুপচাপেও স্বস্তিতে নেই সরকার
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০১-২০২৩
বিএনপি’র চুপচাপেও স্বস্তিতে নেই সরকার


বিএনপি’র চুপচাপেও স্বস্তি পাচ্ছে না আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক মাঠে দলটির হঠাৎ ধীরে চলা নীতিতেও বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষ করে শীর্ষ পর্যায়ে অজানা আশঙ্কা বিরাজ করছে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে। আর একারণে এখন আওয়ামী সরকার বিএনপি’র ডাকে দেয়া সাধারণ কর্মসূচিতেও মাঠে পাহাড়াদারের ভূমিকায় থাকছে। নিজ দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড ফেলে আওয়ামী লীগ বিএনপি’র গতিবিধি পর্যবেক্ষণেই দিন পার করে যাচ্ছে। এসব খবর পাওয়া গেছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে। 

ধীরে চলা নীতিতে বিএনপি 

গত বছর বিএনপি সব চেয়ে বড়ো কর্মসূচি দিয়েছিল ১০ ডিসেম্বর। গত বছর মূলত: আগস্ট থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামে দলটি। জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে সমাবেশ করছে বিএনপি। একর্মসূচিতে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, কুমিল্লা এবং রাজশাহীতে গণসমাবেশ করে দলটি। সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে এটি শেষ হয়। এরপর দলটি ৩০ ডিসেম্বর করে গণমিছিল। আর এবছর ১১ জানুয়ারি করে অবস্থান কর্মসূচি। ১০ ডিসেম্বরের পরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে ১৬ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ও সারা দেশে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ এবং মিছিল করে বিএনপি। এই দাবিতে ১৬ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ও সারা দেশে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ এবং মিছিলের ঘোষণা দিয়ে গণ-অবস্থান কর্মসূচি শেষ করে বিএনপি। মিছিলের আগে সমাবেশ থেকে আগামী ২৫ জানুয়ারি ’গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উল্লেখ করে ১০ দফা দাবিতে দেশব্যাপী সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়। 

আওয়ামী লীগ কি করছে..

আওয়ামী লীগ তাদের দলকে গোছানো বা সাংগঠনিক তৎপরতায না যেয়ে তারা এখন বিএনপি কি কি করছে তা নিয়ে চিন্তিত। গতবছরে বিএনপি’র ডাকে বিভাগীয় সমাবেশগুলি ব্যাপক জনসমাগম ঠেকাতে বলা যায় আওয়ামী লীগ সরকার প্রশাসনকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগিয়েছে। এটা খুব কাজ হয়েছে বলে দলটি তাদের রাজনৈতিক বিশ্লেষণে মনে করছে। আর এ জন্য সব হিসাব নিকাশ পাল্টে দিয়ে আওয়ামী লীগ গতবছর বিএনপি ঢাকা মহাসমাবেশে মারাত্মকভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। দলটি বিএনপি’র এমন কর্মসূচিতে একদিকে যেমন প্রশাসনকে কাজে লাগিয়েছে, তেমনি নেতাকর্মীদেরও চূড়ান্তভাবে মাঠে নামিয়েছে। বলা যায় গত বছরের ১০ ডিসেম্বরে বিএনপি’র ঢাকা মহা সমাবেশ সরকারের রাজনৈতিক দলটিকে এক ধরনের ঝাকুনি দিয়ে যায়। আর এর পর থেকেই আওয়ামী দল হিসাবে বিএনপি কর্মসূচি দিলেই তার বিপরীতে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। যদিও বলা হচ্ছে সরকার বিএনপি’র কর্মসূচি বাধা দিতে এসব করছে না। কিন্তু দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেই ফেলেছেন আগামী ১১ জানুয়ারি সারাদেশে বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগ সতর্ক প্রহরায় থাকবে বলে জানিয়েছেন। এদিকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে ২৫ জানুয়ারি ’গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উল্লেখ করে ১০ দফা দাবিতে দেশব্যাপী সমাবেশের ঘোষণা দেয়ার পর বেশ চুপ ছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু সব নিরবতা ভেঙ্গে বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলোর দেশব্যাপী সমাবেশের দিন আবারও পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, ২৫ জানুয়ারি বুধবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ব্যানারে রাজধানীতে সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন দলটি। এতে আরো বলা হয়েছে বুধবার সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হবে। এতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত থাকবেন। অন্যদিকে  বুধবার সকাল থেকে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ অবস্থান করারও ঘোষণা দিয়েছে। যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলটির অন্যান্য সহযোগী সংগঠনও রাজপথে সক্রিয় থাকার কথা জানিয়েছে। একইভাবে সারাদেশে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশে নেতাকর্মীদের মিছিল নিয়ে আসতে নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

কেনো এমন আচরণ আওয়ামী লীগের ও শেষ কথা..

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের দলের কর্মসূচির দিনে পাল্টা কর্মসূচি না দিতে আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন বেশ কয়েকবার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ মুখে গণতান্ত্রিক পরিবেশের কথা বললেও, বিরোধী দলের আন্দোলন বাধাগ্রস্থ করতে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করছে। বিএনপির কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগকে কর্মসূচি না দেওয়ার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব। তবে শেষ বিচারে দেখা গেছে বিএনপি’র এই ধরনের অনুরোধ বা দাবির ব্যাপার সায় মেলেনি সরকারি দলের পক্ষ থেকে। কিন্তু এর আগে বিএনপি সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি-ই গণমিছিলের তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। গত বছর ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন থাকায় দলটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিএনপির গণমিছিলের তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দলটি। কিন্তু শান্তির কথা বলেও আওয়ামী লীগ কেনো তা করছে না পা পারছে না? এমন প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সম্প্রতি করা কিছু উক্তিতে বোঝা যাবে কেনো দলটির এমন আচরণ। সম্প্রতি দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ১১ জানুয়ারি সারাদেশে বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগ সতর্ক প্রহরায় থাকার ঘোষণা দিয়ে কিছু কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে কী হবে জানি না। তবে আমরা সতর্ক পাহারায় থাকবো। আমরা কাউকে আক্রমণ করবো না। আক্রান্ত হলে উদ্ভূত পরিস্থিতি কী জবাব দেবে, প্রশাসন জবাব দেবে, নাকি পার্টি দেবে, সেটা সময় বলে দেবে। তার এমন বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে বিএনপিসহ বাকি সব দলগুলি যুগপৎ বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরকারের মধ্যে একটা অস্বস্তির পাশাপাশি অস্থিরতা কাজ করে। তারা এখন শুধু প্রশাসনেই ভরসা রাখবে না বিএনপি’কে মোকাবেলায়। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলটির অন্যান্য সহযোগী সংগঠনও রাজপথে সক্রিয় রাখবে। কারণ দলটির একেবারের শীর্ষ পর্যায় থেকে মনে করা হচ্ছে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ’গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ অভিযোগে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে প্রশাসনকে ঢালাও ব্যবহারে সরকারের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তাই রাজনৈতিকভাবেই এটি মোকাবেলা করা হোক বলেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে। অন্যদিকে দলটি বিএনপিসহ সমমনা দলগুলির নেয়া যেকোনো কর্মসূচি এখন সর্তকভাবেই নেবে। ভবিষ্যতে ক্ষমতাসীন এই দলটি মনে করে বিএনপি’র যে কোনো কর্মসূচিতে সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দিতে পারে, সেক্ষেত্রে তাদের সব সময়ই রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। অন্যদিকে এক হিসাবে বিএনপি তার রাজনৈতিক কর্মসূচি চালিয়েই যাচ্ছে। তবে সরকারের বিভিন্ন মহলে এনিয়ে কানাঘুষা কেনো দলটি (বিএনপি) ধীরে ধীরে আগাচ্ছে? কিন্তু কেনো বিএনপি এমন করছে তার উত্তরেই ক্ষমতাসীনরা ব্যস্ত। তারা উত্তর পেতেই চুপ করে থাকবে না। মাঠেও থাকবে। কারণ ক্ষমতাসীনরা বিএনপি’র নিরবতাতেই স্বস্তি পাচ্ছে না বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

শেয়ার করুন