২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৩:৫৫:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বর্তমান সমাজের তৈলচিত্র
লিটু আনাম
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৩-২০২২
বর্তমান সমাজের তৈলচিত্র


জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাহেব ও মোসাহেব’ কবিতার প্রথম চরণ দুটি হচ্ছে-

সাহেব কহেন, চমৎকার! সে চমৎকার!

মোসাহেব বলে, চমৎকার সে হতেই হবে যে!

হুজুরের মতে অমত কার?

এটাই আজ আমাদের সমাজ। সফলদের পা চাটতে এবং কারো কোনো ভুলত্রুটি পেলে তাকে চাটি মারতে দ্বিধা বোধ করে না। আবার সেই সমাজেরই ভালো-মন্দ পরিমাপের কিছু মাপকাঠি রয়েছে।

একটি সত্য ঘটনা বলি তাতে আশা করি পরিষ্কার হবে আমাদের সমাজের দ্বৈতরূপ। আমি একজনকে চিনি এমন। আমাদের প্রতিবেশী। নাম বলবো না। আমার পাঠকের মধ্যে অনেকে তাকে চিনবেন। ছোটবেলায় মা যার উদাহরণ দিয়ে আমাদের পড়তে বলতেন। তাদের পূর্ব পুরুষের জমিদারি থাকা সত্ত্বেও বাবা মারা যাওয়ার পর তাদের ন্যায্য ভাগ কেউ দেয় নাই। তার মা চাচাদের বাসায় কাজ করে ছেলেমেয়ের পড়ালেখা করিয়েছেন। আজ সে বাংলাদেশের বড় অফিসার। বলতে পারেন আমাদের এলাকার সবচেয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। আজ সমাজ তাকে তোষামোদী করে। চায়ের দোকানে তার প্রশংসা কেটলির পানির সাথে ফোটে।

এবার আসি এই সমাজের মোসাহেবগিরির মাপকাঠি কি? বিসিএস ক্যাডার, জাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমেরিকান প্রবাসী, ইউনিভার্সিটির শিক্ষক, গুগল, ইন্টেল, মাইক্রোসফটে চাকরিধারী,  পিএইচডিহোল্ডারসহ সমাজের উচ্চপদস্থ সব কুতুব। আমার এক ক্লাসমেট বাংলাদেশের প্রথমসারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। দুর্ভাগ্যক্রমে তারই এক ছাত্রের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। বললাম, আমার ক্লাসমেট তোমার শিক্ষক ও বলল ক্লাসমেট কেন বন্ধু না? বললাম, ক্লাসমেট হলেই সবাই বন্ধু হয় না, সে কি আগের মতোই আছে, নাকি সময়ের সাথে বদলে একটু স্মার্ট হয়েছে? ও যে জবাব দিলো তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম- ‘উনি যেমন ক্ষেত, উনার পারসোনালিটি তেমন চিপ।’ কিন্তু এই সমাজের সে কিন্তু সাহেব। প্রফেসর হবে, প্রফেসর থেকে ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান হবে, কিন্তু ওর স্বভাব কি বদলাবে? তেমনি বউ পিটানো ডাক্তার, স্ত্রী-সন্তানের খোঁজ না করা আমেরিকার বড় প্রফেসর, প্রতিবন্ধী সন্তানের খোঁজ না নেয়া সমাজকর্মীর অভাব নেই। নাম বলবো? নাম বললে চাকরি থাকবে না। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আফসার আহমেদ, তানভীরসহ ছাত্রী নির্যাতনকারী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষক কিন্তু এই সমাজেরই সাহেব সেজে বসে আছেন। মানবাধিকারকর্মীর গৃহকর্মী পেটানোর ঘটনায় আমরা পত্রিকায় দেখি। আর বাংলাদেশের দুর্নীতির যে অবস্থা, তাতে সরকারি আমলাদের সম্পর্কে আমার আর কিছুই বলার নাই।

মানুষ সামাজিক জীব, সমাজ ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না। এই ডাহা মিথ্যা কথা ছোটবেলা থেকেই আমাদের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে সমাজ হচ্ছে মোসাহেব, সমাজ হচ্ছে একচোখা, সমাজ হচ্ছে স্বার্থপরতার লীলাভূমি। যাকে বলে শক্তের ভক্ত, নরমের যম কিংবা তথাকথিত সমাজের নিজস্ব তৈরি পারদে সফলদের অনুগত, যেখানে সত্য-মিথ্যার কোনো মূল্য নাই। এই সমাজ কি বদলাবে না?

শেয়ার করুন