২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৯:৩৫:০৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


সরকারের বোঝা উচিত ভারত নয়, আমেরিকাই আমাদের বন্ধু
৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১২-২০২৩
৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা


আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংবদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েই পুরো জাতি দারুণ উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকেন। বিশেষ করে যখন দলীয় সরকারগুলো ক্ষমতায় থাকে- তখনই এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পদত্যাগের পর বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই নির্বাচনের পর বিএনপি ক্ষমতায় আসে। পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। পরপর তিনটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। শেষ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বিএনপি। ক্ষমতায় এসে বিএনপিও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে গড়িমশি করে। কিন্তু চূড়ান্ত বিবেচনায় তারাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে বাধ্য হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে নানা কূটকৌশলের কারণে বিশেষ একটি সরকার ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসেই তারা সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনাসহ দুই দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং তাদের গ্রেফতার করে জেলেও পাঠানো হয়। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীদেরও গ্রেফতার করা হয়। তারাও চেয়েছিল দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকতে। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। মঈন-ফখরুদ্দীনের সরকারও নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। মূলত, তখন থেকেই বাংলাদেশে সমঝোতার নির্বাচন শুরু হয়। সমঝোতার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এবং শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি ক্ষমতায় এসে কোর্টের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমাধি রচনা করেন। যার রূপলাভ করে জাতীয় সংসদের মাধ্যমে।

বাতিল করা হয় বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি। ২০১৪ সালে তিনি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন করেন। নির্বাচনের পূর্বে বলেছিলেন এটা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। সেই নির্বাচনে নতুন ইতিহাস তৈরি করে ১৫৩ জন এমপি নির্বাচিত হন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়। নির্বাচনী বৈতরণী পার হবার পর শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে নির্বাচন করেন। দিনের ভোট রাতেই ডাকাতি করে আবারো ক্ষমতায় থাকেন। ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বয়কট করে কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে এবং ডাকাতির নির্বাচনে মাত্র ৬টি আসনে জয়লাভ করে।

২০২৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি আগে থেকেই দাবি করে আসছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল সমঝোতায় না গিয়ে আশ্রয় নেয় দমপীড়নে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর চালানো হয় হামলা, মামলা এবং গুম। সেই সঙ্গে ক্রসফায়ার। বিএনপি এবং বিরোধী দলকে রাস্তায় নামতেই দেওয়া হয়। বাংলাদেশে যেন এক দলীয় শাসন চলছিলো। যদিও আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ উন্নয়ন সহযোগি দেশগুলোও বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করে। কিন্তু সরকার সকলের দাবিকে উপেক্ষা করে এক তরফার নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যায়। এবারের নির্বাচনে নতুন স্টাইল চালু করে শেখ হাসিনার সরকার। জোর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচনে আনে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার অনুমতি দেওয়া হয়। এক দরফার এই নির্বাচন নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দারুণ উদ্বেগ এবং উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন। তাদের মধ্যে এখনো সময় আছে, সরকারের উচিত সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন করা। তানা হলে বাংলাদেশের কপালে চরম দুর্ভোগ নেসে আসতে পারে। তারা বলেন, ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভারত সহায়তা করলেও বিরোধ করেনি আমেরিকাসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশগুলো। কিন্তু এবার তার সোচ্চার সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের। তাদের মধ্যে এক তরফার নির্বাচন করলে এবার আওয়ামী লীগ সরকারকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে। বাংলাদেশে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন খড়গ নেমে আসতে পারে। যে কারণে বাংলাদেশে চরম বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। যদিও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের দলের প্রতি সমর্থন রেখেই বক্তব্য দিচ্ছেন কিন্তু সাধারণ প্রবাসী যারা দলকে নয় দেশকে ভালোবাসের তাদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন, বাংলাদেশে একতরফার নির্বাচন করা উচিত হবে না।

সাধারণ প্রবাসী মোসলে উদ্দিন বলেন, এক তরফা নির্বাচন করতে গেলে বাংলাদেশকে চরম মূল্য দিতে পারে। তিনি বলেন, বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালে তারা কী বসে থাকবে। তারা ইতিমধ্যে র‌্যাব, র‌্যাবের ৬ কর্মকর্তার উপর শ্যাংসন দিয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, আমেরিকাকে হুমকি দিয়ে লাভ নেই। সময় মতই আমেরিকা প্রদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এটা হতে পারে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্যাংশন এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। যা বাংলাদেশের জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হতে পারে।

আব্দুল জলিল বলেন, বর্তমান সরকারের উচিত সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথামতো নির্বাচন করা। তিনি বলেন, গার্মেন্টসে যদি নিষেধাজ্ঞা আছে তাহলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। গার্মেন্টস ব্যবসা হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি। আর গার্মেন্টের্সের অধিকাংশ পণ্য আসে আমেরিকা এবং ইউরোপে। গার্মেন্টেসে নিষেধাজ্ঞা আসলে হাজার হাজার মানুষ বেকার হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের গার্মেন্টর্স ব্যবসা ভারতের হাতে চলে যাবে।

আনিসুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকারের উচিত ভারতের গ্রীব থেকে বেরিয়ে আসা। ভারত কোনভাবেই চায় না বাংলাদেশ সাভলম্বি হোক। আপনারা নিশ্চয় মনে আছে, পাটকে এক সময় আমরা সোনালী আঁশ বলতাম। বাংলাদেশের সেই সোনালী আঁশ ভারতের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশে বন্ধ করা হয়। এখন সেই মার্কেট ভারতের দখলে। ভারতের নতুন ষড়যন্ত্র হচ্ছে আমাদের বাজার দখল করা এবং গার্মেন্টস ব্যবসা তাদের দখলে নেওয়া। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের উচিত ভারতের নয়, আমেরিকার দালালি করা বা সমর্থন করা। বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের স্বার্থ আছে, কিন্তু আমেরিকার কোন স্বার্থ নেই। তার সর্বশেষ নজির হচ্ছে- করোনার সময় ভারতে টাকা নিয়েও আমাদের করোনার টিকা দেয়নি, আমেরিকায় বিনা অর্থে আমাদের করোনার টিকা দিয়েছে। বর্তমান সময়ে আমাদের বুঝতে হবে আমাদের বন্ধু ভারত নয়, আমাদের বন্ধু আমেরিকা।

শেয়ার করুন