২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১১:৪৮:৩৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট পড়লে লজ্জ্বিত হই- মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৩-২০২৩
যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট পড়লে লজ্জ্বিত হই- মির্জা ফখরুল


সংবিধানের কথা বলে সরকার দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্র্রতিষ্ঠা করার চক্রান্ত করছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের সেই পুরনো চিন্তা বা স্বপ্ন যে, তারা একটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা  করেছিলো যেটাকে বাস্তবায়িত করতে চায়। সেই লক্ষ্যে তারা গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে দিয়েছে এবং মানুষের যে অধিকার, মানুষের যে ন্যুনতম অধিকারগুলো সেগুলো তারা সব কেড়ে নিয়েছে। এরা কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলে, এরা কথায় কথায় সংবিধানের কথা বলে। এমনভাবে বলে যে, তারাই একমাত্র এদেশের মালিক যে কিছুক্ষন আগে রব (আসম আবদুর রব) ভাই বলেছেন যে, এটা কি তালুদারি-জমিদারি আমরা লিখে দিয়েছি। আসলে তাদের ধারণা তাই।এটা আজকে নয়, ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময়েও আমরা লক্ষ্য করেছি।”


‘যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট পড়লে লজ্জ্বিত হই’


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে বাংলাদেশ এমন একটা অবস্থায় চলে গেছে যে বিদেশীরা আজকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২২ সালের যে হিউম্যান রাইটস-ডেমোক্রেসির ওপরে যে রিপোর্ট দিয়েছিলো এটা  পড়লে যে, এতো লজ্জ্বিত হই, যে কি দেশ আমার হলো যে, দেশে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টে আসছে যে, এটা গণতন্ত্রের লেশমাত্র এখানে নেই, মানবাধিকারের লেশমাত্র এখানে নেই। এখানে ক্রসফায়ারে মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে, এখানে বিনাবিচারে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, মানুষ গুম হয়ে যাচ্ছে, এখানে মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়া হচ্ছে, সাংবাদিকদের সত্য কথা লেখার কোনো ক্ষমতা নেই, তাদের সেই অধিকার নেই। এখানে একজনকে গ্রেফতার করতে না পেলে তার আত্বীয়-স্বজনকে অত্যাচার করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে, বিদেশে কেউ এই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে তার আত্বীয়-স্বজনকে এখানে নির্যাতন করা হচ্ছেৃ.. এই একটা ভয়াবহ চিত্র এই রিপোর্টের মধ্যে এসেছে।”


তিনি বলেন, ‘‘ এই রিপোর্ট বের হওয়ার পরে আওয়ামী লীগের নেতারা তারা এখন তাদের মতো করে বলতে শুরু করেছেন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের দিকে তাঁকায় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজের দিকে তাঁকায় বলেই তো এই রিপোর্ট সারা বিশ্বেজুড়ে তৈরি হয়েছে। তারা গণতন্ত্রকে তাদের রাষ্ট্রে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে এবং রুপ দিয়েছে বলেই শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয় সমগ্র বিশ্বের এখন গণতন্ত্রের নেতা হিসেবে তারা কাজ করছে। আজ আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সচেতনভাবে সেই গণতন্ত্রের জায়গা থেকে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে একনায়কোতন্ত্র, কর্তৃত্ববাদ, ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে।”


‘আওয়ামী লীগ এক ব্যক্তি ছাড়া কাউকে চিনে না’


মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের যারা পূর্বসূরী যারা আমাদের জন্য স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরি করেছেন, নির্মাণ করেছেন তাদেরকে আমরা স্মরণ করতে চাই না। আওয়ামী লীগের এই জায়গাটিতে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলব না, বলব একটা দুর্বৃত্তায়ন যে, তারা নিজেদের লোকটিকে ছাড়া আর কাউকে চিনে না। এখানে তারা সবাই ছোট করে দেখাতে চায়। যে ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্বে ছিলেন, দেশকে নেতৃত্ব দিলেন, মুক্তিযুদ্ধকে নেতৃত্ব দিলেন সেই তাজউদ্দিন আহমেদ সাহেবের নাম একবারও উচ্চারণ করে না, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নাম একবারও উচ্চারণ করে না, শহীদ হোসেন সোহরাওয়ার্দির নাম একবারও উচ্চারণ করে না, শেরে বাংলা ফজলুল হকের নাম একবারও উচ্চারণ করে না। এমনকি যিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমওজি ওসমানি সাহেবের নাম একবারও বলে না। আর জিয়াউর রহমান সাহেবের নাম তারা উচ্চারণ করবেই না কারণ তারা মনে করে যে, জিয়াউর রহমান তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ। এই কারণে যে, জিয়াউর রহমান সেই কাজটা করেছিলেন স্বাধীনতার ঘোষণা যা তারা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।”


রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির সাবেক মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের ১৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।


২০০৭ সালের ২১ মার্চ কেএম ওবায়দুর রহমান মারা যান।


‘যুদ্ধ শুরু করেছি’


ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ আমরা লড়াই শুরু করেছি, সেই লড়াই চলছে, আমরা যুদ্ধ করেছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয় সেই লড়াই শুরু করেছেন এবং লড়াই শুরু করে এখনো তিনি বন্দি হয়ে আছে, গৃহবন্দি হয়ে আছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব সেই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে নির্বাসিত হয়ে বিদেশ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।৩৫ লক্ষ মানুষ মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হচ্ছে। গোটা দেশ কারাগারে পরিণত হয়েছে।  আমরা যে আন্দোলন শুরু করেছি, আমরা যে লড়াই শুরু করেছি, আমরা যে যুদ্ধ শুরু করেছি। আসুন আমরা এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করি যেমন ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, যেমন ১৯৯০ সালে আমাদের ছাত্র নেতারা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলো সেইভাবে আবারো জনগনকে সংগঠিত করে, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে, সকল গণতন্ত্রমনা মানুষদের সঙ্গে নিয়ে আমরা একটা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করি এবং জনগনের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হই সেদিকে আমরা এগিয়ে যাই।”


প্রয়াত কেএম ওবায়দুর রহমানকে ‘পিপলস লিডার’ হিসেবে অভিহিত করে তার দর্শন থেকে শিক্ষা নিয়ে নেতা-কর্মীদের শিক্ষা নেওয়ার আহবানও জানান বিএনপি মহাসচিব।




‘দেশে পার্লামেন্টারি ডিডক্টেরশীপ চলছে’


জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ ভোটে বিশ্বাস করে না, নির্বাচনে বিশ্বাস করে না,গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে না, ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে না। তারা ভোট চুরি করে ব্যালট ডাকাতি করে নির্বাচিত হয়। নিজেরা ব্যালট বাক্সে ব্যালট ঢুকিয়ে দিয়ে বলে যে, জনগন আমাদেরকে ভোট দিয়েছে। মিথ্যা কথা। এটা পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি নয়, এখন চলছে পার্লামেন্টারী ডিকক্টেরশীপ, এক নায়কোতন্ত্র চলছে। সংবিধানের সর্বময় ক্ষমতা একজন। দেশের মালিক জনগন নেই্। এই সরকার হটাতে হবে।গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে হবে।”


তিনি বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগ ঐহিত্যবাহী দল। সব কিছু শেখ মুজিবের নামে। চুরি-ডাকাতি-লুট-ঘুষ-দুর্নীতি যা আছে সব শেখ মুজিবের না, বঙ্গবন্ধুর নামে। বঙ্গবন্ধু উপাধি কে দিয়েছে? পতাকা কোথায় পাইছো? পতকার রঙ কিভাবে হয়েছে বলতো পারো?যুবক বন্ধুরা আমার লড়াই করতে হবে, মরতে হবে। আমরা এখন লড়াই করতে পারবো না আমাদের বয়স হয়েছে আমাদের শক্তি কম। আপনারা মাঠে যাবেন। আমরা বুদ্ধি-পরামর্শ দেবো, সাহায্য করব।’


‘‘ সরকার যখন চূড়ান্ত করে ফেলেছে যে, উনি বলেন, আর কাউকে ক্ষমতায় যেতে দেবো না, দেয়া হবে না।তার অর্থ আপনারা যখন আর কাউকে ক্ষমতায় যেতে দেবেন না-আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, ক্ষমতা মাটিতে পড়ে থাকবে আপনাদেরকে ক্ষমতায় থাকতে দেয়া হবে না, তোমাদেরকে চলে যেতে হবে। কাউকে ক্ষমতায় যেতে দেয়া হবে না-এটা বাপের দিনের তালুক নাকী, আমরা কী লিখে দিয়েছি তোমাদেরকে।”


কেএম ওবায়দুর রহমানকে একজন ‘সার্থক রাজনীতিবিদ’ হিসেবে অভিহিত করে আলোচনা সভার সভাপতির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘ আসলে এদেশের জন্য যাদের অবদান আছে সেই সকল ব্যক্তিদেরকে আস্তে আস্তে বর্তমানে যারা সরকারে আছে তাদের হীনমন্যতার কারণে পরিকল্পিতভাবে তাদের নামগুলো ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য তারা(সরকার) হয়ত একটি মাত্র নামকে এদেশের স্বাধিকার সংগ্রাম, এদেশের আইয়ুব বিরোধী সংগ্রাম, এদেশের মুক্তিযুদ্ধ, এদেশের বিনির্মাণে দেখানোর জন্য দেশের কৃতি সন্তানদের তারা স্মরণে রাখতে চায় না।”


কেএম ওবায়দুর রহমান স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়া সম্রাটের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, শাহজাদা মিয়া, কেন্দ্রীয় নেতা খাযরুল কবির খোকন, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাজিম উদ্দিন আলম, কামাল উদ্দিন চৌধুরী, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, জাগপার আসাদুর রহমান খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, যুব দলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন, উলামা দলের মাওলানা শাহ মুহাম্মদ নেছারুল হক, মতস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সাইফুল ইসলাম, মাদারীপুর জেলা বিএনপির জাহান্দার আলী জাহান এবং প্রয়াত কেএম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ বক্তব্য রাথেন।


শেয়ার করুন