২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৩:৫৩:১২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


মাঠের আন্দোলনে ফিরছে বিএনপি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০১-২০২৪
মাঠের আন্দোলনে ফিরছে বিএনপি


দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপি এখন কী করবে-এমন বহু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা কী নতুন করে আন্দোলনের ছক আকবে, নাকি পুরোনোতেই স্থির-এ প্রশ্নটাও কম যাচ্ছে না। তবে বিএনপির যে নেতৃবৃন্দ এখন ফ্রন্টলাইনে, তাদের দৃঢ়তায় মনোবল চাঙ্গা এখন তৃণমূলেও। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যেমনটা বিজয় অর্জন করে ক্ষমতার মসনদে, তেমনি বিএনপিও ওই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে। কীভাবে? বিএনপি নির্বাচনের পরই জানান দিয়েছে তারা যে দীর্ঘ আহ্বান জানিয়ে এসেছিল, ভোট বর্জনের। সেটাতে মানুষ সাড়া দিয়েছে। মানুষ ভোটকেন্দ্রেই যায়নি। ফলে বিএনপির এ আহ্বানে মানুষ সাড়া দেওয়ার অর্থ বিএনপি রাজনীতির মাঠে শক্তিশালীই নয়, ভীষণ শক্ত অবস্থানে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘আজকের জালিয়াতির নির্বাচনে যেটি উন্মোচন হয়েছে, তাহলো বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা ও উদ্দীপনাকে সম্পূর্ণরূপে অপমান করা। নির্বাচন বলে দাবি করে শাসক দল আত্মশ্লাঘা লাভ করলেও ভোটকেন্দ্রের চরম অনিয়ম ও সহিংসতা ঢাকতে পারেনি। ঢাকার বাইরেও জনকূন্য কেন্দ্রে ভোটারদের নিয়ে আসতে পারেনি সরকার, নির্বাচন কমিশন ও দলীয় ক্যাডারদের নানা কারসাজি, হুমকি ও কাকুতি-মিনতি।’ 

তিনি বলেন, ‘বিএনপিসহ ৬৩টি গণতন্ত্রমনা রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করা সত্ত্বেও দেশের প্রতিটি আসন ও কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সংঘবদ্ধভাবে কারচুপি ও সংঘাত করেছে। একের পর এক যেসব ছবি, ভিডিও ও তথ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসেছে, তাতে এটিই পুনঃপ্রমাণিত। এ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, প্রতিযোগিতামূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব নয়।’ বিএনপির বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে ও সাহসিকতার সঙ্গে যেভাবে ডামি নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে, বিএনপি তার জন্য দেশবাসীকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। একই দিন (৮ জানুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে জনগণ নির্বাচন বর্জন করেছে বলে দাবি করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। জনগণকে স্যালুট জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা কোনো নির্বাচন না। এটা একটা ভুয়া নির্বাচন।’ 

মঈন খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিবেকবান লোকও আজ ভোট দিতে যায়নি বলেও খবর পেয়েছি। ২ শতাংশের বেশি ভোটার কেন্দ্রে নিতে পারেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে গরু-ছাগল দেখা গেছে, এবারের ভোটের দিন যুক্ত হয়েছে বানরও। প্রহসনের তামাশার ভোট, যেখানে নিজেরা নিজেরা ভোট করছে সেখানেও এ অবস্থা। আমরা কী কারণে ভোট বর্জন করেছি, তা প্রমাণিত।’ 

বিএনপি এখানে বসে নেই। শুরু করেছে তারা মাঠের আন্দোলন। ইতিমধ্যে নতুন কর্মসূচিও দিয়েছে দলটি। দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, অবৈধ সংসদ বাতিলসহ একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কালো পতাকা মিছিল হবে। আগামী ২৬ জানুয়ারি দেশের সব জেলা সদরে এবং ২৭ জানুয়ারি সব মহানগরে এই কর্মসূচি হবে।’ বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ধীরে ধীরে বিএনপি আন্দোলনে যাবে এবং সেটা জোরালো করবে। 

প্রশ্ন হচ্ছে, এ আন্দোলনে বিএনপি কতটা সফল হবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। এ সময়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলা-মোকদ্দমা, জেল-জরিমানা, ব্যবসা-বাণিজ্য নষ্ট করে ফেলাসহ কঠিন এক পরিস্থিতির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাদের। সেখান থেকে সরে আসার কোনো উপায় নেই। যে করেই হোক, কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে এ আওয়ামী লীগ সরকারকে পতন ঘটানোই বিএনপির একমাত্র পথ। সেটা যতোদিনই লাগুক, সেটা তারা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শুধু দলের শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য এমনটা নয়, তৃণমূলেও একই চিত্র। তাই বিএনপি আগের অবস্থানেই রয়েছে। দাঁড়িয়ে শক্ত ভিতে নির্বাচন হয়েছে বটে। আবারও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় বসলেও বিএনপির নেতাকর্মীদের আন্দোলন থেকে পেছনে ফেরার উপায় নেই। এটাই এখন বিএনপির মূলশক্তি। তাছাড়া ইতিমধ্যে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা চিন্তা করতে শুরু করেছেন যে শুধু বিএনপি একাই আর আন্দোলন নয়, সমমনা যে দলসমূহ তাদের নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার। এর উদ্দেশ্য বহির্বিশ্বকে দেখিয়ে দেওয়া বর্তমান সরকারের নির্বাচনের পরও এতোগুলো দল একই প্ল্যাটফর্মে সরকারবিরোধী আন্দোলনে। সারা বিশ্বের অনেক দেশ এখনো যখন সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেই যাচ্ছে অনবরত। 

তবে বিএনপি শুধু নিজেদের আন্দোলনেই চোখ নয়, দৃষ্টি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক বিশ্বেও। নির্বাচনের পরপর অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাজার মূল্য ঊর্ধ্বগতি। বহির্বিশ্বও নানাভাবে ব্যাখ্যা দাবি করছে নির্বাচনের। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও তেমন সুবিধার নয়, সংকট বাড়ছে প্রতিনিয়ত। আগামীতে বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বাড়ার ইঙ্গিত মিলছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ-গ্যাসও রয়েছে। সব মিলিয়ে মানুষ ক্ষিপ্ত হবে এসব সিদ্ধান্ত যদি আসে। এসব পরিস্থিতি বিএনপি কাউন্ট করে আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি কমবেশি করতে পারে। 

কেন আন্দোলনে যাবে বিএনপি 

২৮ অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত বিএনপি অহিংস আন্দোলনেই ছিল। কিন্তু ওই দিনের মহাসমাবেশ পন্ড হওয়ার পর থেকে বিএনপি চলে গেছে হরতাল-ধর্মঘটে। যদিও নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে বিএনপি লিফলেটে প্রচারণা করে। আপাতত সে রকম অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষকে জাগিয়ে তোলার কর্মসূচিতে থাকবে দলটি। অবস্থা বুঝে ক্রমশ আন্দোলনের তীব্রতা বাড়াবে দল। পাশাপাশি দলটির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডও পর্যালোচনা করছে। নজর রাখছে। নির্বাচনের আগেই দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা ছিল, দায়িত্বশীল কেউ দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত হলে তার পরবর্তী জন দায়িত্ব পরিচালনা করে যাবেন। এখনো সে নীতিতেই দল। অনেকেরই মনোবল দুর্বল বা কেউ কেউ মামলায় কারাগারে যেতে হচ্ছে। এসব কারণেই বিএনপির ওই নীতি। দল মনে করছে, এতে অধীনস্ত নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত চাঙ্গা থাকছেন এবং নেতৃত্বের দুর্বলতার সুযোগ থাকছে না।

শেয়ার করুন