২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৯:২২:২০ পূর্বাহ্ন


নতুন ধারার একদলীয় শাসনের ইঙ্গিত: সিপিবি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০২-২০২৪
নতুন ধারার একদলীয় শাসনের ইঙ্গিত: সিপিবি বক্তব্য রাখছেন রুহিন হোসেন প্রিন্স


সিপিবি’র দু’দিনব্যাপি কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বর্তমান এ অবস্থা বহাল থাকলে একদলীয়, কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচারী, দুঃশাসন আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। এর বিপরীতে জঙ্গীবাদ, চরমপন্থা, চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীল অব্যাহত থাকবে। আরও বলা হয়, গণতন্ত্রের মডেল সম্পর্কে সরকার প্রধান ও তাদের সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই একাধিকবার বলেছেন, “গণতন্ত্র একেক দেশে একেক রকম”। এ কথার মধ্য দিয়ে নতুন ধারার একদলীয় শাসনের ইঙ্গিত প্রকাশিত হয়েছে। এসব বিদেশি অপশক্তির বিরুদ্ধে সেচ্চার হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয় এবং নির্বাচন পর্যালোচনা উত্থাপন করেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। সাংগঠনিক রিপোর্ট ও পরিকল্পনা উত্থাপন করেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ। সভার শুরুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. সাজেদুল হক রুবেল।

সভায় বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান, অধ্যাপিকা এএন রাশেদা, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, মোতালেব মোল্লা, পরেশ কর, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক অ্যাড. আনোয়ার হোসেন রেজা, কন্ট্রোল কমিশনের সদস্য ডা. এমএ সাঈদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ডা. ফজলুর রহমান, কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, রফিকুজ্জামান লায়েক, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, আবদুল্লাহ ক্বাফি রতন, আহসান হাবীব লাভলু, ডা. দিবালোক সিংহ, অ্যাড. এমদাদুল হক মিল্লাত, জলি তালুকদার, অ্যাড. মন্টু ঘোষ, মনিরা বেগম অনু, অ্যাড. সোহেল আহমেদ, অ্যাড. মাকছুদা আক্তার লাইলি, এসএ রশিদ, রাগীব আহসান মুন্না, অ্যাড. হাসান তারিক চৌধুরী, লুনা নূর, মো: কিবরিয়া, আবিদ হোসেন, অ্যাড. আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, আসলাম খান, নিমাই গাঙ্গুলি, ড. কাবেরী গায়েন, সুব্রতা রায়, হাফিজুল ইসলাম, মানবেন্দ্র দেব, লাকি আক্তার, আশরাফুল আলম, মোহাম্মদ আলতাফ হোসাইন, ইসমাইল হোসেন, খন্দকার লুৎফর রহমান, ইদ্রিস আলী, জাহিদ হোসেন খান, মোসলেহ উদ্দিন, অ্যাড. রফিকুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল, হাসিনুর রহমান রুশো, সাদেকুর রহমান শামীম, নলিনী সরকার, পিযুষ চক্রবর্তী, সাজেদুল ইসলাম। 

সভায় বলা হয়, ভূ-রাজনৈতিক, আধিপত্য বিস্তার ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাগিয়ে নেওয়াকে সামনে রেখে সাম্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদী শক্তি নির্বাচনকে ঘিরে ভূমিকা নিয়ে চলেছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশ আরেক সংকটে পড়তে পারে। এতে বলা হয় দেশে আজ একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের যাঁতাকলে দেশবাসী। এই অবস্থা বহাল রেখে কোন সংগ্রামকে অগ্রসর করা, বিজয় অর্জন করা যাবে না। এ অবস্থা থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করতে নতুন ধারার সংগ্রামের সূচনা করতে হবে। দেশবাসীর কাছে বিকল্প তুলে ধরে গণতন্ত্রহীনতা, পুঁজিবাদী লুটপাটতন্ত্র, সম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সাথে বহুমুখী ধারায় সংগ্রাম করতে হবে। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ছাড়া ন্যূনতম গণতন্ত্রের ধারাকে অগ্রসর করা সহজতর হবে না। 

নেতৃবৃন্দ বলেন, চলমান দুঃশাসনের অবসান, মানুষের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও মানুষের জীবন জীবিকার সংগ্রামকে অগ্রসর করতে রাজপথের আন্দোলন জোরদার করতে হবে। দেশবাসীর সামনে সর্বত্র আমাদের বিকল্প নির্দেশনা তুলে ধরতে হবে। এই সংগ্রামে সকল কমরেডকে যুক্ত করতে পরিকল্পিত ভূমিকা গ্রহণ করে মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজ গড়ার সংগ্রামকে অগ্রসর করতে হবে। সভায় বলা হয়, বাংলাদেশের চলমান সংকট একদিনে হয়নি। পালাক্রমে ক্ষমতায় থাকা শাসকগোষ্ঠী এই অবস্থা সৃষ্টি করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার শুধুমাত্র দলতন্ত্র নয়, পরিবারতন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র, লুটপাটতন্ত্রের বিস্তার করেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। পুঁজিবাদী লুটপাটতন্ত্র দেশকে আজ অবাধ লুটপাটের ক্ষেত্রে পরিণত করেছে। সভায় বলা হয়, বর্তমান সংকট মোকাবেলায় শ্রেণি আন্দোলন, গণআন্দোলন, গণসংগ্রাম গড়ে তোলার লক্ষ্যকে সামনে রেখে রাজনৈতিক সংগ্রাম অগ্রসর করতে কেন্দ্র থেকে শাখা পর্যন্ত ভূমিকা পালন করতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে যে, জনগণের শক্তির উপর নির্ভর করে গণআন্দোলন, গণসংগ্রাম গড়ে তুলে চলমান দুঃশাসনের অবসান ও ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম অগ্রসর করতে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে।

সভায় বলা হয়, দেশে শ্রমজীবী মানুষের আয় বাড়েনি, বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণদের বিরাট অংশ মানসম্মত কাজ না পেয়ে ছদ্ম বেকারত্বের জীবন যাপন করছে। শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সমাজের অন্যান্য সংকট থেকেই যাচ্ছে। নারী-শিশু নির্যাতন, আত্মহত্যা, খুন-ধর্ষণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। সামাজিক নৈরাজ্যও বাড়ছে। মূল্যবৃদ্ধি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় বেড়েনি বরং কমে গেছে। উৎপাদক কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, ক্ষেতমজুরের ১২ মাস কাজ নেই অথচ মধ্যসত্বভোগী, চাঁদাবাজ, কমিশনভোগী, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের পকেট মোটা হচ্ছে। জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ হয়নি। গার্মেন্টস, চা শ্রমিকদের যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। এরপরও এটা পরিশোধে নানা তালবাহানা করা হচ্ছে। এ জন্য সরকারের কাছ থেকে মালিকপক্ষ নানা সুবিধা নিচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে শিল্প উৎপাদন পর্যন্ত ব্যাহত হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে দাবি আদায়ে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। 

সভায় সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি প্রবর্তনসহ নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার, প্রহসনের, ‘ডামি’ নির্বাচন বাতিল, ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, রেশন ব্যবস্থা ও ন্যয্যমূল্যের দোকান চালু, খেলাপি ঋণ ও বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধার, দুর্নীতি-লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ন্যূনতম জাতীয় মজুরি নির্ধারণ, কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ, ক্ষেতমজুরসহ সবার কাজের নিশ্চয়তা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা বন্ধসহ দেশের অর্থনৈতিক ও জনজীবনের সংকট দূর করার দাবিতে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী বিক্ষোভ-সমাবেশের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

সভায় বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র, নতুন নতুন সংজ্ঞা নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে। স্বৈরতন্ত্র, কর্তৃত্ববাদ অন্যতম উপাদান হিসেবে সামনে চলে এসেছে। এককেন্দ্রিক শাসন, এক ব্যক্তির শাসন বিভিন্ন দেশেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২০২৪ সালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই কর্তৃত্ববাদী শাসনের ধারা আরও বাড়বে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এ অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। একেক দেশে একেক প্রেক্ষাপটের মধ্য দিয়ে এই এক কেন্দ্রিক কর্তৃত্ববাদী শাসন দৃঢ় হয়েছে। এর বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট, বাম, প্রগতিশীল গণতন্ত্র মনা মানুষ দেশে দেশে রুখেও দাঁড়াচ্ছে।

সভায় যথাসময়ে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপজেলা, আঞ্চলিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত, ২১ ফেব্রুয়ারি প্রভাত ফেরীর ধারা ফিরিয়ে আনা, ৬ মার্চ পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জেলা-উপজেলা, শাখায় দলীয় পতাকা উত্তোলন, লাল পতাকার র‌্যালি, আলোচনা সভা, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ এবং অঞ্চল/ বিভাগীয় সমাবেশ ও জাতীয় সমাবেশে প্র নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের জেলা-উপজেলা সফরসহ কতক সাংগঠনিক কর্মসূচি গ্রহন করা হয়। 

সভায় বর্তমান একদলীয় কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী শাসনের অবসানে বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ অন্যান্য প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে, দুঃশাসনের অবসান, ব্যবস্থা বদল ও রাজনীতিতে নীতিনিষ্ঠ বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে বহুমুখী ধারায় কর্মসূচি গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

শেয়ার করুন