২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৬:২৯:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বিশ্ববিদ্যালয় সমুহে বর্তমানে শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে প্রতিবেদন
বিশ্ববিদ্যালয় সমস্যা সংকট
খন্দকার সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৪-২০২২
বিশ্ববিদ্যালয় সমস্যা সংকট


সম্প্রতি সিলেটের হজরত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা সংকট নিয়ে একটি চলমান ঘটনা বাংলাদেশে এবং প্রবাসে বাংলাদেশী সমাজে আলোড়ণ তুলেছে। একটু সংবেদনশীল হলে ছাত্রীদের কিছু দাবি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা যেত। কিন্তু অযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীন ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে তুলকালাম কান্ড ঘটে। সরকার বিব্রত হয়, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। প্রশ্ন জাগে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আদৌ কি শিক্ষার পরিবেশ আছে? 

অনেকেই বলবেন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বিশেষত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষার মান এখন অনেকটাই তলানিতে থেকেছে। হাতে গোনা কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অধিকাংশ সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এ সার্টিফিকেট বিক্রি করে শিক্ষাকে পণ্য বানানো হচ্ছে। না আছে অভিজ্ঞ মানসম্পন্ন শিক্ষক, না আছে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ, গবেষণার ব্যবস্থা, শিক্ষা ম্যান নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় তদারকি, মূল্যায়ন। ফলশ্রুতি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো উচ্চ শিক্ষিত বেকার সৃষ্টি করছে। দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠাগুলো চলছে ভারত, শ্রীলংকা, কোরিয়ান, চীন থেকে আগত জনবল দিয়ে। যাদের সুযোগ বা সামর্থ আছে ছেলে মেয়েদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন, মেধাবী ছাত্ররাও শিক্ষিত হয়ে দেশের বাইরে পারি জমাচ্ছে। সরকারি চাকুরীতে মানসম্পন্ন কর্মকর্তাদের অভাব এখন প্রকট। জাতীয় স্বার্থে তাই শিক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে  সাজানোর প্রয়োজন অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। 

সরকার স্বীকার করুক নাই বা করুক বাংলাদেশের শিক্ষার মান বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষার মান অবনমনের জন্য সকল সরকারের সুস্থ দৃষ্টিভঙ্গির অভাব, শিক্ষাকে রাজনৈতিক করণ, বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণতকরণ একান্তভাবে দায়ী। ১৯৬০ দশকের প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে পরিচিত শতবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অনেক গর্বের বুয়েট এখন দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর তালিকায় অনেক অনেক পিছিয়ে পড়েছে। পাবলিক বা প্রাইভেট কোনো বাংলাদেশি বিশ্ববিদ্যালয় আজ আর শিক্ষার সার্বিক মানদন্ডে ইউরোপ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া দূরের কথা দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর সঙ্গেও তুলনীয় নয়। সম্প্রতি সিলেট হাজরাত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ন্যাক্কারজনক ঘটনা, কয়েক বছর আগে বুয়েট ক্যাম্পাসের ছাত্র (আবরার) হত্যার ঘটনা বিশ্বে বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের ভাবমূর্তি দারুন ভাবে ক্ষুন্ন করেছে। দেশ যখন কথিত উন্নয়ন প্লাবনে ভাসছে ঠিক তখনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের বিদ্যমান অরাজকতা, দুর্নীতি, অপশাসন নিয়ে গভীর ভাবে পর্যালোচনা এবং পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা গভীর ভাবে অনুভূত হচ্ছে। অনুভব শুধু নয় বাস্তব ভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। কেননা জাতির মেরুদন্ড শিক্ষা ব্যবস্থা এখন অনেকটাই ভেঙে পড়ার উপক্রম।

জানিনা কি কারণে কোন জাদু মন্ত্র বলে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে ৫৮টি বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তা কি? সেখানে মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের ন্যূনতম সুবিধাদি আছে কিনা? প্রয়োজনীয় মানসম্পন্ন শিক্ষাবিদ, লাইব্রেরি, গবেষণাগার, গবেষণার সুবিধাদি, শিক্ষক নিয়োগে আদর্শ ব্যবস্থা, শিক্ষার পরিবেশ আছে কিনা? এগুলো কি আদৌ বিবেচনা পর্যালোচনা করা হয়? শিক্ষা কার্যক্রম আদৌ তদারকি হয়? যদি তাই হতো তাহলে কেন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এতো পিছিয়ে পড়া? কেন খোদ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো নিয়ে এতো বিতর্ক এত সংকট? কেনই বা কানাডার মত দেশ বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে ৩৩ টি বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের দেশে নিষিদ্ধ করেছে। এটা লজ্জার।

নিষিদ্ধের তালিকায় থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে - দা‌‌‌‌রুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়, কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়,আইবিএআইএস বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, গ্লে­াবাল ইউনিভার্সিটি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, পুন্ড্রু ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সিটি ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, উত্তরা ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, সেন্ট্রাল ওমেন্স ইউনিভার্সিটি এবং গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান প্রসঙ্গে একটা চিত্র ফুটে উঠেছে বৈকি! 

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর দেশে ৪টি সাধারণ পাবলিক ইউনিভার্সিটি এবং দুইটি কারিগরি ইউনিভার্সিটি ছিল। অনেকটা বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২-৭৩ বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স জারি করে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্বশাসন দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি প্রকৌশল বিশ্ব বিদ্যালয় এবং কৃষি বিদ্যালয়কে শিক্ষা অর্ডিন্যান্সের আওতায় আনেননি। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে খ্যাতিমান শিক্ষাবিদকে মন্ত্রী, সচিব করেছিলেন। খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ডক্টর মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক আবুল ফজলকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডক্টর খান সারওয়ার মুর্শিদের মতো প্রবীণ অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হতে, নিজে অনুরোধ করে নিয়োগ দিয়েছিলেন। আর তাদের তুলনায় বিগত দুই তিন দশকে অন্তত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্যদের মান এবং ব্যাক্তিত্ব দেখলে লজ্জায় কুন্ঠিত হতে হয়। শিক্ষা ব্যাবস্থায় আমলাদের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণের কথা নাই বা বললাম। শিক্ষা সমূহে বিদ্যমান পরিস্থিতির জন্য সরকারের দৃষ্টি ভঙ্গি যে একান্ত ভাবে দায়ী সেটি বলাই বাহুল্য। কেন বঙ্গবন্ধু কন্যা পিতার দেখানো পথে চলছেন না- সেটি ভাবার বিষয়। 

ক্ষমতায় থাকতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, অনুগত, অযোগ্য, মেরুদন্ডহীন মানুষদের উপাচার্য, উপাচার্য, ডিন বানাতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে ছাত্র রাজনীতি করতে দেয়া হবে না, বিশ্ববিদ্দালয় গুলোর কার্যক্রমে জবাবদিহীতা থাকবে না- এভাবে একটি জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। 

বাংলাদেশকে প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে হলে অবশ্যই শিক্ষাগণের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে ভাবতে হবে। আমূল পরিবর্তন আন্তে হবে সার্বিক শিক্ষা ব্যাবস্থায়।  শুরুটা হোক উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ব বিদ্যালয় নিয়ে। 

বাংলাদেশের মতো দেশে বাড়জোর ২০-২৫টি প্রাইভেট বিদ্যালয় থাকা উচিত এবং সেগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম, শিক্ষা উপকরণ, গবেষণা সুবিধা, শিক্ষক নিয়োগ, পরীক্ষা ব্যবস্থা একটি অবকাঠামোর আওতায় নিয়েআসা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স যুগোপযোগী করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়  গুলোকেই জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সুস্থছাত্র রাজনীতি প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত নাকরা হলে রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন চলতেই থাকবে। দেশে এখনো অনেক প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ আছেন। তাদের মাধ্যমে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে যথাসম্ভব কম সময়ে শিক্ষা সংস্কার করা জরুরি।


শেয়ার করুন