২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৮:৫৫:১৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


এশিয়া কাপ ২০২৩
বাংলাদেশ দলে উপেক্ষিত রিয়াদ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৮-২০২৩
বাংলাদেশ দলে উপেক্ষিত রিয়াদ


অনেক নাটকের পর আসন্ন এশিয়া কাপ ২০২৩ খেলার জন্য বাংলাদেশ জাতীয় দল ঘোষণা করেছে বিসিবি নির্বাচক ত্রয়ী মিনহাজুল আবেদীন, হাবিবুল বাসার এবং আব্দুর রাজ্জাক। আগের দিন বিসিবি সভাপতির বাসার গ্যারেজে সাংবাদিকদের ডেকে সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা দেয়া দেয় সাকিব আল হাসান নেতৃত্ব দিবে বাংলাদেশ দলকে। সাকিব এখন তিন ফরম্যাটে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। পরের ঘোষণায় দ্বিমত নেই। কিন্তু দল ঘোষণা বিষয়ে বিশেষত বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক জয়ের নায়ক,এখনো সক্রিয়,অন্যতম অভিজ্ঞ খেলোয়াড়, নীরব ঘাতক খ্যাত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে উপেক্ষা করায়  ক্রিকেট অভিজ্ঞ মহল ক্ষুব্ধ,আহত এবং বিস্মিত হয়েছে। এমনিতেই দলে বর্তমানে ম্যাচ ফিটনেসের কারণে তামিম ইকবাল নেই ,তার পর ওপর অভিজ্ঞ খেলোয়াড় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে এভাবে বাদ দেয়াকে সহজভাবে মেনে নেয়া যায় না।


যাদের রিয়াদের বিকল্প হিসাবে দলে নেয়া হলো সেই খেলোয়াড়দের সাম্প্রতিক পারফরমেন্স কোনোভাবেই রিয়াদ থেকে উন্নততর নয়। না হয় বাদ রাখলাম রিয়াদের বিশাল অভিজ্ঞতা আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক ম্যাচ জয়ী সাফল্যের কথা। বেতনভুক হেড কোচ হাতুরাসিংহের অশুভ প্রভাবে এভাবে দলের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে বাদ দেয়ার পরিণতি হয়তো শুভ হবে না। এশিয়া কাপ শেষে বাংলাদেশের অনুশোচনার সময় থাকবে না। রিয়াদকে উপেক্ষা বাংলাদেশ দলে বেশ কিছু সময় জুড়ে বিদ্যমান অসহিষ্ণুতার বহিঃপ্রকাশ বললে অত্যুক্তি হবে না। এভাবে একটি দেশ তার বিজয়ী বীরদের উপেক্ষা করতে পারে না। রিয়াদের এভাবে বাদ পড়া থেকে মনে পরে বহু চর্চিত আপ্ত বাক্য " যে দেশে গুণীর কদর নেই ,সেই দেশে গুণী জন্মায় না" ।


বাংলাদেশ ক্রিকেট বর্তমান অবস্থানে এসেছে অন্নান্য অনেকের সহ মূলত সোনালী প্রজন্মের পাঁচ জন কিংবদন্তি খেলোয়াড় মাশরাফি মোর্তুজা , মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ব্যাক্তিগত এবং সমিষ্টিগত অবদানে। অথচ এদের সবার সাথেই বাংলাদেশ হেড কোচ হাতুরাসিংহের শীতল সম্পর্কের কারণে দল এবং দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাশরাফি টি ২০ সিরিজ থেকে অবসর, তামিম ,মুশফিকের টি ২০ সিরিজ থেকে স্বেচ্ছায় সরে যাওয়া, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের টেস্ট থেকে অবসর এবং অবশেষে এশিয়া কাপ দল থেকে বাদ পড়া সব কিছুর নেপথ্যের কারিগর ওই হাতুরাসিংহে। শুনেছি সাকিবের প্রচন্ড ব্যাক্তিত্বের সঙ্গে পেরে না উঠা হাতুরার সঙ্গে  যে অচিরে সাকিবের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে না সেটি নিশ্চিত বলা যাবে না। যাহোক হয়তো নীরব ঘাতক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যাত্রা শেষ হয়ে গেলো। ২০১৫ বিশ্ব কাপ, নিদ্হাস ট্রফির বিস্ফোরক ইনিংস ক্রিকেট প্রেমিকদের স্মৃতিতে জেগে থাকবে।

এশিয়া কাপে বাংলাদেশের স্কোয়াড:
সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), লিটন দাস, তানজীদ হাসান, নাজমুল হোসেন, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান, হাসান মাহমুদ, শামীম হোসেন, আফিফ হোসেন, শরীফুল ইসলাম, ইবাদত হোসেন, মোহাম্মদ নাঈম ও নাসুম আহমেদ।
স্মরণে আছে কিছু দিন আগে অনেকটা বিরক্তি আর অসন্তোষের সঙ্গেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলো ওডিআই ক্রিকেট অধিনায়ক বাংলাদেশ ক্রিকেটের এযাবৎ কালের সেরা ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল।


পরে অনেক নাটকীয়তার পর ক্রিকেট অনুরাগী বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত হস্তক্ষেপে তামিম অবসর ভাঙার ঘোষণা দিলেও শারীরিকভাবে ম্যাচ ফিট না থাকায় স্বেচ্ছায় অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। এশিয়া কাপ স্কোয়াডে নেই তামিম। অধিনায়ক নির্বাচন নিয়ে নানা তাল বাহানার পর সম্প্রতি বিসিবির প্রেসিডেন্ট তার বাসার গ্যারেজে নাটকীয় ভঙ্গিতে সাকিব আল হাসানকে অধিনায়ক হিসাবে ঘোষণা দেন।  বিসিবি দেশের ক্রিকেটের শীর্ষ সংগঠন , গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমূহ বিসিবি দপ্তর থেকে ঘোষণা দেয়াই রীতি হওয়া উচিত।
যাহোক তামিম না থাকায় দলকে ওপেনিং করার জন্য লিটন দাসের যোগ্য সঙ্গী খুঁজে নেয়ার পাশাপাশি একজন বিকল্পের সন্ধান করতে হয়। লিওন নিজেও বর্তমানে সেরা ফর্মে নেই। ওর সঙ্গে ওপেনার হিসাবে বেছে নেয়া মোহাম্মদ নাঈম উপর্যুপুরি সুযোগ পেয়েও ভালো করে নি। তবে তরুণ প্রতিশ্রুতিময় তানজিদ তামিমের অন্তর্ভুক্তি আমি সমর্থন করি। নাজমুল শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, সাকিব , মুশফিক , মেহেদী মিরাজ স্বয়ংক্রিয় চয়েস।  এখন আসুন ৭ নম্বর ব্যাটিং পসিশনে। একদিনের ক্রিকেটে পসিশনটি ইদানিং নিয়মিত ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়।


বেশ কিছু দিন ধরেই বাংলাদেশ এই পসিশনে মাহমুদুল্লার বিকল্প খুঁজছে। নানা তাল বাহানা করে মাহমুদুল্লাহকে দূরে সরিয়ে রেখে কখনো ইয়াসির রাব্বি, কখনো আফিফা হোসাইন বা শামীম পাটোয়ারীকে সুযোগ দেয়া হয়েছে। কেউ স্থিতু হয় নি. অথচ টপ অর্ডারে ব্যাটিং করার প্রমাণিত সক্ষম মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ নিকট অতীতেও সফল হওয়ার নজির থাকা সত্ত্বেও উপেক্ষিত থাকলো। বলা হলো এশিয়া কাপ এবং বিশ্ব কাপের বিবেচনায় রিয়াদ আছে, তাকে বিশ্রামে রাখা হয়েছে। অনুশীলনে ডাকার পরেও এভাবে তাকে উপেক্ষা করা সমীচীন হয় নি।


তামিমের অবর্তমানে ভারত , পাকিস্তান, শ্রীলংকার বিশ্বমানের নতুন বলের আক্রমণ সামাল দিতে হিমশিম খেতে পারে বাংলাদেশের টপ অর্ডার। সেই ক্ষেত্রে লোয়ার মিডল অর্ডারে সাকিব , মুশফিক সঙ্গী হিসাবে রিয়াদকে দারুন ভাবে মিস করবে। জানিনা আফিফ বা শামীম পাটোয়ারী সেই অভাব কতটুকু পূরণ করবে। আমি শ্রীলংকা , পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া কাপে ৫ জন পেস বলার নেয়াকে সমর্থন করি। তবে বিকল্প স্পিনার হিসাবে তাজুলকে উপেক্ষা করে নাসুমকে নেয়া সঠিক বলে মনে করি না। ১৫ জন সদস্যের স্থানে ১৭ জন নেয়া সঠিক সিদ্ধান্ত। তবে ক্রিকেট বিশ্বের সবার কাছেই বিস্ময় মনে হবে ১৭ জনের স্কোয়াডেও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের স্থান হলো না।


বাংলাদেশকে গ্রুপ পর্যায়ে আফগানিস্তান এবং শ্রীলংকা দুটো দলের মোকাবিলা করতে হবে। শ্রীলংকা কিন্তু সম্প্রতি অনেক পরিণত দল মনে হচ্ছে। ওদের মাটিতে ওদের হারানো সহজ হবে না। আর আফগান দল কিছু দিন আগে বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশকে ২-১ হারিয়ে গেছে। এশিয়া কাপকে সামনে রেখে আফগানিস্তান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শ্রীলংকায় ওডিআই সিরিজ খেলবে। গ্রুপ পর্যায় উৎরে গেলে বাংলাদেশকে গ্রুপ অফ ফোরে তুখোড় পাকিস্তান এবং ভারতকে মোকাবিলা করতে হবে। হাতুরার আঘাতে চূর্ণ হওয়া বাংলাদেশের স্বর্ণ যুগের প্রজন্ম  হয়তো সুযোগ পেলো না শেষবারের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন চূড়ায় পৌঁছে দেয়ার।


শেয়ার করুন