২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০২:৪৬:২৫ অপরাহ্ন


সরকারের মনোযোগ প্রকৃতি-পরিবেশ ধ্বংস করে মুনাফা বৃদ্ধি
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৫-২০২২
সরকারের মনোযোগ প্রকৃতি-পরিবেশ ধ্বংস করে মুনাফা বৃদ্ধি ‘নারীর গৃহস্থালী কাজের আর্থিক মূল্য রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরূপন কর ও স্বীকৃতি দাও, নারীর উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নে বাজেটে বরাদ্দ বাড়াও’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা/নিজস্ব ছবি


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সরকারের মানব শক্তিকে বিকশিত করার দিকে আগ্রহ ও মনোযোগ নেই। মনোযোগ আছে প্রকৃতি-পরিবেশ ধ্বংস করে মুনাফা বৃদ্ধির দিকে।

‘নারীর গৃহস্থালী কাজের আর্থিক মূল্য রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরূপন কর ও স্বীকৃতি দাও, নারীর উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নে বাজেটে বরাদ্দ বাড়াও’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রকৌশলী শম্পা বসু। আরো বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডাক্তার মনীষা চক্রবর্ত্তী। সেমিনার পেপার উপস্থাপন করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট দিলরূবা নূরী।  

আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, বাজেটের কাঠামো বা পরিসর ঠিক হয় পুঁজিপতিদের স্বার্থে। সরকার বাজেট কেন্দ্রিক মতবিনিময়সভা আয়োজন করে ব্যবসায়ীদের নিয়ে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামতের প্রয়োজন তাদের নেই। শিল্পী, সাহিত্যিক, শ্রমিক, শিক্ষক তাদের শ্রমশক্তিকে হিসেবে নেয়া হচ্ছে কিন্তু এই শ্রমশক্তি তৈরির যে জায়গা ঘর, সেটাকে হিসেবে নেয়া হ”েছ না। ঘর একদিকে উৎপাদন ও পুনরুতপাদনের জায়গা। সেই ঘরে প্রধানত শ্রম দেয় যে নারীরা তাদের শ্রমের কোনো স্বীকৃতি কোথাও নেই। বরং সেই সন্তান কেমন হচ্ছে তার দায়ও নারীকেই নিতে হয়। মাতৃত্বের সকল দায়িত্ব রাষ্ট্র নারীর উপরই চাপিয়ে দিয়েছে। সন্তান বড় করার জন্য যে সাধারন ডে কেয়ার সেন্টার দরকার তার আয়োজনও রাষ্ট্র করছে না। সারাদেশে সকল জায়গায় ডে-কেয়ার সেন্টার নির্মাণের জন্য যে বরাদ্দ প্রয়োজন তারচেয়ে অনেক বেশি ব্যয় করা হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য।

প্রকৌশলী শম্পা বসু বলেন, ‘গৃহস্থালী কাজ ছাড়া কোন পরিবার ও সমাজ কল্পনা করা যায় না। আর গৃহ¯’ালী কাজের সিংহভাগই করেন পরিবারের নারী সদস্যরা। কিš‘ এ কাজের কোন স্বীকৃতি নেই, মর্যাদা নেই এমনকি এ কাজকে তাচ্ছিল্য করা হয় সবসময়। ফলে পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে এ কাজের মূল্যায়ন, স্বীকৃতি ও অধিকার না থাকায় তরুণ প্রজন্মও নারী বিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে বেড়ে উঠছে। ’

বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘গৃহস্থালী কাজকে বাজেটে অন্তর্ভূক্ত করার অনেক পদ্ধতি আছে এবং সেগুলো নিয়ে বিভিন্ন কাজও হচ্ছে। কিন্তু সরকারি উদ্যোগে কোন কাজ হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যদি মূল্য নির্ধারণ করতে পারে তাহলে সরকার কেন পারবে না। যাদের জন্য বাজেট প্রণয়ন করা হয় যেমন ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, নারী তাদের কোন অংশের মতামত নেয়া হয় না। নারীর উপর সহিংসতা ও বৈষম্য যে দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে তৈরি হয় সেই দৃষ্টিভঙ্গী দূরীকরণে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। পুঁজিবাদী সমাজ সবকিছুকে মুনাফার চোখে দেখে। নারীর গর্ভধারণ থেকে শুরু করে বয়স্কদের সেবা যত্ন, ঘরের সকল কাজ এবং সকল সামাজিক দায়িত্ব পালনকে উপেক্ষার চোখে দেখা হয়। সেকারণে নারীর গৃহস্থলী কাজের কোন মূল্যায়ন এখানে প্রকৃত অর্থে করা সম্ভব না। সমাজতান্ত্রিক সমাজেই প্রকৃত অর্থে নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব। ’ 

অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, ‘রাষ্ট্র, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গবেষণা সংস্থা , পরিবার, সমাজ সকল ক্ষেত্রেই নারী উপেক্ষিত এবং নারীর যে অধিকার আছে সেই কথাটাও সবাই ভুলে যায়। নারীরা গৃহস্থালী কাজের পাশাপাশি কৃষিকাজেও শ্রম দিচ্ছে। কিš‘ সরকার আড়াই কোটি কৃষকের জন্য কৃষি কার্ড প্রদান করেছে কিš‘ এর মধ্যে একজন নারী কৃষকের নাম নেই। কিছু ক্ষেত্রে নারী শ্রমের মূল্যায়ন করা হচ্ছে কিন্তু সেই শ্রমের মূল্যের যে অর্থ সেই অর্থ ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নারী রাখে না।’

মনীষা চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘সরকার বাজেটের ১ শতাংশ বরাদ্দ রাখে জেন্ডার বাজেট হিসেবে। সেই বরাদ্দ অনেক বেশি ভাতা হিসেবে প্রদান করা হয়। দুস্থ ভাতা, বিধবা ভাতা তো সরকারের করুণা হওয়ার কথা না, এগুলো নারীদের অধিকার হিসেবে পাওয়ার কথা। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বরাদ্দের ধরণ অনেক বেশি করুণা করার মত।


শেয়ার করুন