২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:৫০:৩৬ পূর্বাহ্ন


বীরকন্যা প্রীতিলতার স্বপ্নের সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৯-২০২৩
বীরকন্যা প্রীতিলতার স্বপ্নের সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি বীরকন্যা প্রীতিলতার স্মরণ সভায় নেতৃবৃন্দ


প্রীতিলতার মতো অসংখ্য বীরকন্যার আত্মদানে পরাধীন ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু এই বীরকন্যার স্বপ্নের সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি? নারীদের মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি? আজ ব্রিটিশ নেই, পাকিস্তানি শাসক নেই। তার পরিবর্তে আছে দেশীয় শোষকশ্রেণি। এদের সবার চরিত্রই এক। 

ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম নারী বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর ৯১তম আত্মাহুতি দিবস স্মরণে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন আলোচকরা। বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন চত্বরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রোববার কোটেশন প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সীমা দত্তের সভাপতিত্বে ও দফতর সম্পাদক তৌফিকা লিজার পরিচালনায় সভায় আলোচনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী, ঢাকা নগরের সদস্য সুস্মিতা রায় সুপ্তি।

আলোচকরা আরো বলেন, সব শাসকরাই মানুষের বিবেককে মেরে দিয়ে, অন্ধ বিশ্বাস আর ধর্মীয় গোঁড়ামীকে উসকে দিয়ে নিজেদের রক্ষা করতে চেয়েছে। বর্তমান সময়ের শাসকরাও তেমনই চায়। তারা হতাশা, হানাহানি, অনিশ্চয়তা, বেকারত্ব, মাদকের বিস্তার, যৌন সুড়সুড়ি তৈরি করে যুবক তরুণদের বিপথগামী করে নিজেদের সকল অন্যায়, জবরদস্তিমূলক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে চাইছে। তাই ক্ষুদিরাম, ভগৎ সিং, মাস্টারদা, প্রীতিলতার জীবন সংগ্রাম তাদের কাছে আতঙ্কের বিষয়। এদের স্মৃতিকে দেশের মানুষের মন থেকে মুছে ফেলতে, ভুলিয়ে দিতে শাসকদের চেষ্টার অন্ত নেই।

আলোচকরা বলেন, মাতৃভূমির জন্য আত্মত্যাগের কাহিনি বিরল নয়। যুগে যুগে ক্ষণজন্মা বীরেরা শত্রুর হাত থেকে নিজের রক্তের বিনিময়ে দেশমাতৃকাকে মুক্ত করেছে বারবার, জীবনের মায়া ভুলে দেশের মানুষের কথা ভেবেছে হাজার হাজার তরুণ-তরুণী। এ মিছিলে নারী-পুরুষের অংশীদারিত্ব ছিল কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। কিন্তু প্রীতিলতা যে সময় স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন, সে সময় এদেশে নারীদের সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণের পথ প্রশস্ত ছিল না। প্রীতিলতা এই স্বপ্ন নিয়েই আত্মাহুতি দিয়েছিলেন যে, তার আত্মদানের মধ্য দিয়ে দেশের বোনেরা স্বাধীনতা আন্দোলনে দেশের ভাইদের পাশাপাশি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ে যোগ দেবে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের স্বাধীনতার জন্য নারীরা সশস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহণ করুকÑএটাই চেয়েছিলেন প্রীতিলতা। আত্মাহুতির মধ্য দিয়ে তিনি সেই দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মেয়েরা যে এখনো পিছিয়ে আছে, তার কারণ তাদের পেছনে ফেলে রাখা হয়েছে। নারীরা এখন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে তারা আর পিছিয়ে থাকবে না এবং সংগ্রাম যতই কঠিন ও বিপদসঙ্কুল হোক না কেন ভাইদের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তারাও সক্রিয় অংশগ্রহণ করবে। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি আমার বোনেরা আর নিজেদের দুর্বল ভাববেন না এবং ভারতের বিপ্লবী সংগ্রামে হাজারে হাজারে যোগদান করে সব রকম বাধা এবং বিঘ্নের সম্মুখীন হবেন।

অন্যদিকে দেশের এক দল সচেতন ও সাহসী মানুষ মহান এই পূর্বসূরিদের জীবনসংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়ে আজকের দিনের এই বিপদসঙ্কুল পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পায়। মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার শক্তি পায়। তাই নবজাগরণের সংগ্রামে যাদের কীর্তি অতুলনীয়, স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই পরিচালনা করেছিলেন, তাদের জীবনকে তরুণ সমাজের সামনে সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাহস অর্জন করতে প্রীতিলতার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে এই মহৎ চরিত্রের চর্চা করতে হবে।

আলোচনা সভার পাশাপাশি অগ্নিযুগের অগ্নিকন্যা প্রীতিলতার জীবনসংগ্রাম নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

শেয়ার করুন