২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৮:৪৭:৩২ পূর্বাহ্ন


ভারতে মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) কে অবমাননা
মুসলিম বিশ্বের ক্ষোভে উদ্ভিগ্ন ভারত সরকার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৬-২০২২
মুসলিম বিশ্বের ক্ষোভে উদ্ভিগ্ন ভারত সরকার কোলকাতায় ভারতীয় মুসলামানদের বিক্ষোভ প্রতিবাদ/ছবি সংগৃহীত


ভারতে মুসলমানদের উপর অত্যাচার নতুন কিছু নয়। বাবরি মসজিদ, কাশ্মীর ইস্যু ছাড়াও বড় বড় ইস্যুতেও বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় কখনও ফিরেও তাকায়নি। বরং মুসলামদের উপর অত্যাচারের মাত্র বর্তমান বিজেপি সরকার আসার পর বেড়েছে। সেটাও কেউ আমলে নেয়নি। বরং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের সামান্যটুকুও কমতি ছিল না বরং বেড়েছে। বা বাড়ছে। 

হটাৎ ভারতীয়দের এমন চলার পথে বড়রকম ধাক্কা লেগেছে বিজেপি দুই শীর্ষ নেতা নুপুর শর্মা ও নবীন জিন্দালের কর্মকান্ডে। প্রায় ১৫ দিন আগের ঘটনায় ভারতে তোলপাড় হয়ে এখন বিশ্বের প্রায় ১৯০ কোটি মানুষের ধর্মীয় অনুভুতির সবচে দুর্বলস্থানে আঘাত লেগেছে। এতে প্রকম্পিত হয়েছে মুসলিম সমাজ। প্রতিবাদে ফেটে পড়ছে মুসলিম বিশ্ব। আর যা হোক, মহান রাব্বুল আলামীন ও তার প্রিয় বন্ধু রসুলে আকরাম (সঃ) কে নিয়ে কোনো ধরনের কটুক্তি মুসলমানরা মেনে নেয়না। সে প্রতিবাদটাই চলছে বিশ্ব ব্যাপী। ভারত সরকার এমন ঘটনায় প্রচন্ডরকম বিব্রত ভারতীয় পন্য বয়কটের আহ্বান ও বানিজ্যিক সর্ম্পক সংকুচিত করার শঙ্কায়। 

এ থেকে উত্তরনের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ ভারতের বেশীরভাগ বানিজ্যিক সম্পর্ক এ মুসলিম প্রধান দেশগুলোর সঙ্গেই। ওই ঘটনার পর থেকে ওইসকল দেশ ও বিভিন্ন শিল্পপতি ও ব্যাবসায়ীরা যে উদ্যোগ নেয়ার কথা জানাচ্ছে তাতে ভারতের ব্যাবসা বানিজ্য,রেমিট্যান্সের বড় ধ্বস নামার লক্ষন দেখা দিয়েছে। বিষয়টা সমাধানে ভীষন উদ্ভিগ্ন এখন তারা।


পাকিস্তানে বিক্ষোভ প্রতিবাদ /ছবি সংগৃহীত  


কেননা মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে কটুক্তি অণ্য কিছু নয়। যার আদর্শে মুসলামদের জানপ্রাণ উজাড় করে অগাধ বিশ্বাস সে আদর্শিক মহামানবকে নিয়ে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী নেতা মেতেছিলেন। ফলে প্রচন্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে ভারত সহ মুসলিম বিশ্বে। নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেত্রী নুপুর শার্মার অবমাননাকর ওই কটুক্তিত্যে উত্তাল পুরো ভারতসহ মুসলিম বিশ্ব।

মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশগুলোসহ এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্তত ১৫টি দেশ বিজেপি সরকারের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দেশটিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাকও এসেছে সেখানে। একই সঙ্গে এবার জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের একজন মুখপাত্র ভারতের বহুল সমালোচিত ওই ইস্যুতে বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন,আমরা সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতায় দৃঢ়ভাবে উৎসাহ জানাই। 

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেনের মুখপাত্র স্টেফানে ডুজারিকেরির কাঝে বিজেপি নেতাদের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে বৈশ্বিক নিন্দার ব্যাপারে সংস্থাটির অবস্থান জানতে চান এক সাংবাদিক। 

জবাবে স্টেফানে ডুজারিক বলেছেন, আমি এই সংবাদটি দেখেছি। তবে আমি নিজে তাদের মন্তব্য দেখিনি। কিন্তু আমি আপনাকে বলতে পারি যে আমরা সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সহনশীলতায় দৃঢ়ভাবে উৎসাহ জানাই। 

উল্লেখ্য, বিজেপির মুখপাত্র নুপুর শর্মা গত মাসের শেষদিকে এক টেলিভিশন শোতে অংশ নিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। আর দলটির নয়াদিল্লি শাখার গণমাধ্যম প্রধান নবীন জিন্দাল নুপুর শর্মার সেই মন্তব্যের সমর্থনে টুইট করেন। যা নিয়ে ভারতে উত্তাল শুরু হওয়ার পর এটা যখন আরবী ভাষায় অনুবাদ হয়ে প্রচারিত হয় তখনই বিষয়টা দৃষ্টিগোচর হয় মুসলিম বিশ্বে। সে থেকেই ক্ষোভে উত্তাল মুসলিম বিশ্ব। 


দেশে ও বর্হিবিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে কোনঠাসা হয়ে যায় ভারত। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে সহ মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে দেশটির যে বানিজ্যিক সম্পর্ক্য সেটা হুমকির মুখে পরে। অনেক দেশ তাদের দেশে থাকা ভারতীয় রাষ্টদূতকে ডেকে নিন্দা জানিয়েছে। আইনের আওয়তায় নেয়ার দাবীও তুলেছে ওই নেতা নেত্রীকে।

আরব বিশ্বে চাকরিরত ভারতীয় হিন্দুরাও আতংকের মুখে কখন তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এবং বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া তথ্যে অমন চাকনিচ্যুত ও ভারতীয় পন্য বয়কটেরও ঘোষনার কথা শোনা গেছে। এতে প্রচন্ড চাপে পরে ভারত। বাধ্য হয়েই গত রবিবার অভিযুক্ত নুপুর শর্মাকে দল থেকে বরখাস্ত এবং জিন্দালকে বহিষ্কার করে বিজেপি। পরে বিজেপির এই দুই নেতা প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন।


কিন্তু এরপরও বিজেপির জ্যেষ্ঠ দুই নেতার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মুসলিম বিশ্বের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ ও তোপের মুখে পড়েছে ভারত। কূটনৈতিক ক্ষোভও অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ জানা গেছে এ ব্যাপারে ভারতকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে কোনো কোনো স্থান থেকে। 


ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার বিভিন্ন দেশে এসব ক্ষোভ প্রশমিত করার চেষ্টা করেই চলেছে। নয়াদিল্লির দাবি, ভারত ও ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার সকল ধর্মকেই সম্মান করে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সুত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫ মুসলিম প্রধান দেশ ভারতের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইরান, আফগানিস্তান, ইরাক, কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, বাহরাইন, মালদ্বীপ, লিবিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া প্রমুখ। 


ওই ঘটনায় ইতিমধ্যে ৫৭ টি মুসলিম দেশের সমন্বয়ে গড়া অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) বিজেপির ওই দুই নেতার মন্তব্যের নিন্দা করেছে এবং ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের অধিকার সুরক্ষিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে বিবিসি জানিয়েছে পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারত সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহন করেছে। এর মধ্যে বিজেপির দুই নেতা ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার পর মি. জিন্দালকে দল থেকে বহিস্কার করে দেয়া হয়েছে। অপর নুপুর শর্মাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। 

বিবিসি আরো জানায় ভারতের সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলোর জোট গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জেসিসি) ঘনিষ্ট বানিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। ২০২০-২০২১ সালে এ বানিজ্যের পরিমান ছিল ৮৭ বিলিয়ন ডলার। এ জোটে আছে কুয়েত, কাতার, সৌদী আরব, বাহরাইন,ওমান ও ইউএই। লাখ লাখ ভারতীয় এসব দেশ থেকে কোটি কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠায়। ভারতে সবচে বেশী জ্বালানীও আনা হয় এসব দেশ থেকে। 

২০১৪ সনে নরেন্দ্রমোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে এসব দেশে নিয়মিত সফরে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে ভারত ইউএই’র সঙ্গে একটি মুক্ত বানিজ্য চুক্তি  সই করেছে। এবং জিসিসির সঙ্গে আরো একটি ব্যাপক-ভিত্তিক বানিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা করছেন। এমন আরো অনেক সম্পর্ক স্থাপনে ভারত যখন নিরবিচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছে তখন এই বিতর্ক ওইসব কাজের উপর কালো ছায়া পড়তে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছে বিবিসি। 

শেয়ার করুন