২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৪:১১:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


অভিযোগ মির্জা ফখরুল ইসলামের
‘সরকার চায় বিরোধীবিহীন নির্বাচন’
নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-১০-২০২৩
‘সরকার চায় বিরোধীবিহীন নির্বাচন’


সংকট উত্তরণে সংসদের চলতি অধিবেশনে  ‘নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার’ ব্যবস্থা সংবিধানে সন্নিবেশিত করতে সরকারি দলের উদ্যোগ চান  মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার দুপুরে নয়া পল্টনে দলের যৌথ সভা শেষে এক সংবাদ ব্রিফিঙে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ আজকে(সোমবার) পার্লামেন্টের সেশন শুরু হচ্ছে। শেষ বলছে তারা। আসলে শেষ কিনা বলা মুশকিল। কারণ পার্লামেন্ট তো শেষ নাই। বর্তমানে সংবিধানকে কেটে-কুটে যে অবস্থায় নিয়ে গেছে পার্লামেন্টের শেষ নাই…ইনফিনেটি হতে পারে... তারা মনে করে। তারপরও আমি সবসময় আহ্বান করে আসছি যে, পার্লামেন্টের ভুমিকা তারা ইউজ করতে পারে। তারা এই পার্লামেন্টকে ব্যবহার করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের বিধান নিয়ে এসে এই পার্লামেন্টে তারা এটাকে পাস করে নিয়ে এসে সংবিধানে আনে তাহলে এই সংবিধানের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারে। যেটা আমরা করেছিলাম।”

‘‘ দেশপ্রেম থাকলে, দেশের মানুষকে ভালোবাসলে, গণতন্ত্রের প্রতি যদি ন্যুনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকে তাহলে আমি আহ্বান জানাব আওয়ামী লীগকে যে, তারা এই ব্যবস্থা(নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার)নিয়ে অর্থাত এই পার্লামেন্টের অধিবেশনে এই ব্যবস্থাটা সংবিধানে সন্নিবেশিত করে তারা দেশে একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।”

‘অন্যথায় এদেশে যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ইতিমধ্যে করেছে তার জন্য সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব কিন্তু সরকারকে বহন করতে হবে।’ বলেন মির্জা ফখরুল।

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের এক দফা দাবিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া পল্টনের সমাবেশ খেকে আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয়।

বিএনপি ছাড়াও সেদিন ঢাকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, এলডিপি, এনডিএম, লেবার পার্টিসহ বিভিন্ন সমমনা দল আলাদা আলাদাভাবে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে।

দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ সফল করতে দলের অঙ্গসংগঠন এবং ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর নেতাদের নিয়ে এই যৌথ সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব। যৌথ সভার পর সংবাদ সম্মেলন আসেন তিনি।

‘সরকার চায় বিরোধীবিহীন নির্বাচন’


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ তারা চায় না যে বিরোধী দল নির্বাচনে আসুক, তারা চায় না এদেশে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। কারণ তারা তো পরিস্কার করে জানে যে, জনগন যদি একবার সুষ্ঠু নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এই যে ১৫ বছর ধরে যে দুঃশাসন চালিয়েছে এখানে তাদেরকে চলে যেতে হবে।”

‘‘ তাদের আসলে মূল লক্ষ্য হচ্ছে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। আগে আপনারা সরাসরি করেছিলো, এখন একটু ঘুরিয়ে করে। অর্থাত গণতন্ত্রের লেবাসটা পরিয়ে রাখে। সেইভাবে আবারো নির্বাচন করে ফেলতে চায়। সবচেয়ে বাধা হচ্ছে বিরোধী দল বিএনপি। বিএনপির যেসমস্ত লোক নির্বাচন করতে পারে তাদের যদি এখনো সাজা দিয়ে নির্বাচন থেকে বিরত করে ফেলা যায় তাহলে যেভাবে তখন তারা নির্বাচন করতেই হয় তাহলে প্রার্থী তারা পাবে না… এটাই তাদের মূল লক্ষ্য।অর্থাত প্রতিটি কর্মকান্ড নির্বাচনী স্টেপ হচ্ছে নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করা, প্রতিটি স্টেপ হচ্ছে বাংলাদেশে যাতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন না হয় তার জন্য ব্যবস্থা তৈরি করা, প্রতিটি স্টেপ হচ্ছে ইনক্লুসিভ ইলেকশন না হয় অর্থাত বিরোধী দলগুলো যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা।”

গত ১৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ৪৭টি মিথ্যা মামলা ও নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘ এই ৪৭ মামলায় আসামী করেছে ১২ হাজার ৭৩০ জন। ইমাজিন… যে কোন রাজ্যে বাস করছি আমরা, কোন দেশে বাস করছি আমরা, কোন সমাজে বাস করছি আমরা। ওই সব মামলায় গ্রেফতার হয়েছে প্রায় ৫৬০ জনের অধিক।”

‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিচার বিভাগের প্রতি হস্তক্ষেপ’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ বেআইনি অবৈধ এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য শুনেছেন গতকাল বার কাউন্সিল ভবন উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন…. এটা কোনো সভ্য সমাজে, গণতান্ত্রিক সমাজে কোনো এক্সিকিউটিভ চিফ অর্থাত প্রধানমন্ত্রী বলুন অথবা প্রশাসনের প্রধান তিনি মামলা-মোকাদ্দমার ব্যাপারে, আদালতের ব্যাপারে, বিচারাধীন মামলার ব্যাপারে এই ধরনের বক্তব্য রাখতে পারেন।”

‘‘এটা সরাসরি তিনি আদালতকে নির্দেশ দিয়েছেন, হস্তক্ষেপ করছেন যে, সব মামলা সাক্ষী আনতে হবে… সব মামলায় সাজা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।তার(প্রধানমন্ত্রীর) যে বক্তব্য্ এটা সম্পূর্ণভাবে পরিস্কারভাবে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, এই আওয়ামী লীগের অবৈধ সরকার তারা ফরমায়িস করে, আদেশ দিয়ে বিচারবিভাগকে তারা প্রভা্বিত করছে এবং সেইভা্বে ফরমায়েসী রায় দিচ্ছে।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ সারাদেশে নেতৃবৃন্দকে ‘ফরমায়েসী রায়ের মাধ্যমে সাজা’ প্রদান করার কথাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, ঢাকা মহানগর দক্ষিনের আবদুস সালাম, লিটন মাহমুদ, ইউনুস মৃধা, উত্তরেরর আবদুল হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক আবদুস সালাম আজাদ, মাহবুবে রহমান শামীম, শ্যামা ওবায়েদ, মোস্তাক মিয়া, অনিদ্র্য ইসলাম অমিত, শরীফুল ইসলাম, মাশুকুর রহমান মাশুক, মাহবুব আলম নান্নু, মানিকগঞ্জের আফরোজা খানম রীতা, নরসিংদীর খায়রুল কবির খোকন, মুন্সিগঞ্জের কামুরুজ্জামান রতন, ঢাকার আবু আশফাক খন্দকার, গাজীপুরের ফজলুল হক মিলন, শাহ রিয়াজুল হান্নান, নারায়নগঞ্জের গিয়াস উদ্দিন, শাখাওয়াত হোসেন খান, আবু আল ই্‌উসুফ খান টিপু, ও টাঙ্গাইলে ফরহাদ ইকবালসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন