০২ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৮:২৩:৩৫ অপরাহ্ন


টেক্সাসে মসজিদকেন্দ্রিক প্রকল্প থামাতে গভর্নরের নতুন আইন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৯-২০২৫
টেক্সাসে মসজিদকেন্দ্রিক প্রকল্প থামাতে গভর্নরের নতুন আইন গভর্নর অ্যাবট ‘এপিক সিটি’ প্রকল্প লক্ষ্য করে হাউজ বিল ৪২১১স্বাক্ষর করেন


নর্থ টেক্সাসের জোসেফিন শহরে প্রস্তাবিত ইস্ট প্লানো ইসলামিক সেন্টারের বহুমুখী আবাসন ও উন্নয়ন প্রকল্প ‘এপিক সিটিকে’ ঘিরে তীব্র বিতর্কের মধ্যে টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট হাউস বিল ৪২১১-এ স্বাক্ষর করেছেন। গভর্নর অ্যাবট দাবি করছেন, নতুন এই আইন আবাসন খাতে ধর্মীয় বৈষম্য প্রতিরোধের পদক্ষেপ। তবে সমালোচকদের মতে, বিলটি মূলত মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ করে আনা হয়েছে।

ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস কর্তৃক সব অভিযোগ খারিজ হওয়ার পরও গভর্নর অ্যাবট টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন সংস্থাকে এপিকের বিরুদ্ধে তদন্তে নিয়োজিত করেন। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তদন্ত চলার পরও কোনো অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়া সত্ত্বেও গত ১২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার অ্যাবট আনুষ্ঠানিকভাবে বিলটিতে স্বাক্ষর করেন। ম্যাককিনি শহরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই আইনের উদ্দেশ্য হলো ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে আবাসন খাতে বৈষম্যমূলক প্রকল্প প্রতিরোধ করা।

অ্যাবট সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, এপিক সিটি শুধু মুসলিম ক্রেতাদের জন্য জমি ও বাড়ি বিক্রির চেষ্টা করছে এবং শরিয়াহ আইন মেনে ক্রয়-বিক্রয়ের নিয়ম নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। তার ভাষায়, এ আইন কোনো ধর্মীয় সংগঠনকে আবাসন বাজারে বিশেষ অঞ্চল তৈরি করতে দেবে না। সব বিরোধ টেক্সাসের আইন ও আদালতের অধীনে নিষ্পত্তি হবে।

নতুন আইনের অধীনে আবাসন প্রকল্পে জড়িত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রেতাদের জানাতে হবে যে তারা মূলত ব্যবসার অংশীদারত্বে বিনিয়োগ করছেন, সম্পত্তিতে নয়। অর্থাৎ এপিক সিটিতে জমি কিনতে চাইলে ক্রেতাদের কমিউনিটি ক্যাপিটাল পার্টনার্স নামক করপোরেট সত্তার শেয়ার কিনতে হবে। আইনের রচয়িতা রিপাবলিকান প্রতিনিধি ক্যান্ডি নোবেল অনুষ্ঠানে বলেন, এপিক সিটির আর্থিক কাঠামো টেক্সাসের আবাসন নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তার অভিযোগ, বিনিয়োগ ফেরতযোগ্য নয়, শেয়ার সহজে বিক্রি করা যায় না এবং ক্রেতা বাছাই করা হবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ইচ্ছামতো। নোবেল মন্তব্য করেন, এটি টেক্সাসের পথ নয়। এখানে গৃহস্বত্ব মানে স্বাধীনতা, যা আমরা সবার জন্য সুরক্ষিত রাখতে চাই।

অন্যদিকে এপিক সিটি কর্তৃপক্ষ এবং ইস্ট প্লানো ইসলামিক সেন্টার একাধিকবার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, প্রকল্পটি বৈষম্যমূলক নয় এবং অমুসলিমদের জন্যও উন্মুক্ত। করপোরেট সংস্থা কমিউনিটি ক্যাপিটাল পার্টনার্স জানিয়েছে, তারা হাউস বিল ৪২১১ সমর্থন করে এবং নতুন আইন তাদের কার্যক্রমে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

তবে গভর্নর অ্যাবট ও তার সমর্থকেরা দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পটিকে আক্রমণের মুখে রেখেছেন। একাধিক স্টেট সংস্থা বর্তমানে এপিক সিটির বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে। যদিও জুন মাসে একটি ফেডারেল তদন্তে কোনো আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সমালোচকরা বলছেন, এসব পদক্ষেপ মূলত ইসলামবিদ্বেষ থেকে চালিত।

প্রেস কনফারেন্সের আগে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম অধিকার সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার)-এর টেক্সাস শাখা এক বিবৃতিতে অ্যাবটকে তীব্র সমালোচনা করে। কেয়ার টেক্সাসের নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফা ক্যারল বলেন, গভর্নরের বক্তব্য বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কহীন। এই ধরনের বক্তব্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ উসকে দিচ্ছে এবং টেক্সাসের মুসলিমদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলছে।

এপিক সিটির পরিকল্পনায় একটি নতুন মসজিদ, এক হাজারের বেশি আবাসন, কে-১২ ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রবীণদের জন্য আবাসন, একটি কমিউনিটি কলেজ, ব্যবসা ও ক্রীড়া সুবিধা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে প্রকল্পটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং বাস্তবায়নে কয়েক বছর সময় লাগবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

বিতর্ক আরো তীব্র হয় যখন টেক্সাস ফিউনারেল সার্ভিস কমিশনের এক কর্মকর্তা এপিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলাকালে ইসলামবিদ্বেষী বার্তা আদান-প্রদানের অভিযোগে জড়িয়ে পড়েন। পরে কমিশন কিছু অভিযোগ প্রত্যাহার করলেও তদন্ত এখনো চলছে। অ্যাবট এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও, তার রাজনৈতিক অবস্থান এবং নতুন আইনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে টেক্সাসে এপিক সিটি নিয়ে লড়াই আরো দীর্ঘস্থায়ী হতে যাচ্ছে।

শেয়ার করুন