০২ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০:৪০:১৫ অপরাহ্ন


জানুয়ারি ২০২৬ থেকে সাবওয়ে ও বাস ভাড়া তিন ডলার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-১০-২০২৫
জানুয়ারি ২০২৬ থেকে সাবওয়ে ও বাস ভাড়া তিন ডলার নিউ ইয়র্ক সিটি ট্রানজিট


নিউইয়র্ক সিটির গণপরিবহন ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসছে। এমটিএ বোর্ড সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আগামী জানুয়ারি ২০২৬ থেকে সাবওয়ে ও লোকাল বাসের ভাড়া ২.৯০ ডলার থেকে বেড়ে ৩ ডলার হবে। একই সঙ্গে এক্সপ্রেস বাস, লং আইল্যান্ড রেল রোড (এলআইআরআর) এবং মেট্রো নর্থ রেল পরিষেবার ভাড়া ও টিকিট নীতিতেও পরিবর্তন আসছে। এই ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর হবে নতুন ডিজিটাল ট্যাপ-অ্যান্ড-গো পেমেন্ট সিস্টেম অমনি-র পূর্ণাঙ্গ চালুর সময়, যা ধীরে ধীরে পুরনো মেট্রোকার্ডকে প্রতিস্থাপন করবে।

সাবওয়ে, লোকাল বাস এবং অ্যাকসেস-এ-রাইড-এর ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে ১০ সেন্ট করে। অর্থাৎ, নতুন ভাড়া হবে ৩ ডলার। রিডিউসড ফেয়ার যাত্রীদের জন্য ভাড়া হবে ১.৫০ ডলার। এর পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় সাত দিনের ফেয়ার ক্যাপ স্থায়ীভাবে কার্যকর হচ্ছে। যাত্রীরা এক সপ্তাহে ১২ বার যাত্রার টাকা দিলে পরবর্তী ভ্রমণগুলো ফ্রি হয়ে যাবে। ফলে, কোনো যাত্রী ৩৫ ডলারের বেশি সাপ্তাহিক খরচ করবেন না, আর রিডিউসড ভাড়া গ্রাহকদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা হবে ১৭.৫০ ডলার। এক্সপ্রেস বাস ভাড়া ২৫ সেন্ট বেড়ে হবে ৭.২৫ ডলার এবং হাফ ভাড়া হবে ৩.৬০ ডলার। এক্সপ্রেস বাসের জন্যও নতুন ক্যাপ চালু হচ্ছে, যাতে সাপ্তাহিক খরচ ৬৭ ডলারের বেশি হবে না। একই সাথে সিঙ্গেল রাইড টিকিটের দাম ৩.২৫ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৩.৫০ ডলার করা হবে। আর নতুন অমনি কার্ড কেনার ফি ১ ডলার থেকে বেড়ে ২ ডলার হবে। ২০২৬ সালের শেষ দিকে মেট্রোকার্ড পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হবে।

কমিউটার রেল পরিসেবা, অর্থাৎ লং আইল্যান্ড রেল রোড ও মেট্রো নর্থ-এ মাসিক ও সাপ্তাহিক টিকিটের দাম গড়ে ৪.৫ শতাংশ বাড়ানো হবে। তবে মাসিক টিকিটের দাম ৫০০ ডলারের বেশি হবে না। একমুখী টিকিটের দাম সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। নিউইয়র্ক সিটি জোনে জনপ্রিয় সিটি টিকিটের দাম ২৫ সেন্ট বৃদ্ধি পাবে। পিক আওয়ারে ভাড়া হবে ৭.২৫ ডলার এবং অফ-পিক সময়ে ৫.২৫ ডলার। একইভাবে ফার রকঅ্যাওয়ে টিকিটের দামও সমন্বয় করা হবে। শহরের ভেতরে যেকোনো ওয়ান-ওয়ে টিকিটের দাম সিটি টিকিটের সমান রাখা হবে। ফলে, কেউই পিক আওয়ারে ৭.২৫ ডলার বা অফ-পিক সময়ে ৫.২৫ ডলারের বেশি দেবেন না। সিটি টিকিট এবং ফার রকঅ্যাওয়ে টিকিট স্থায়ী ভাড়া পণ্য হিসেবে বহাল থাকবে।

ট্রেনে উঠে কন্ডাক্টরের কাছ থেকে টিকিট কিনলে ২ ডলার অতিরিক্ত দিতে হবে। একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে ট্রেনটাইম অ্যাপ ব্যবহার করে ট্রেনে বসে টিকিট অ্যাক্টিভ করার ক্ষেত্রেও। টিকিটিং নীতিতে আরও পরিবর্তন আসছে। একমুখী টিকিট এখন থেকে কেনার পরের দিন সকাল ৪টা পর্যন্ত বৈধ থাকবে। নতুন ডে পাস একদিনের জন্য সীমাহীন ভ্রমণের সুযোগ দেবে এবং এটি রাউন্ড-ট্রিপ টিকিটের বিকল্প হবে। কর্মদিবসে ডে পাসের দাম দুইটি পিক আওয়ার টিকিটের চেয়ে ১০ শতাংশ কম হবে এবং সপ্তাহান্তে অফ-পিক দুইটি টিকিটের সমান হবে। মোবাইল গ্রাহকরা ১৪ দিনের মধ্যে ১০টি যাত্রা সম্পন্ন করলে ১১তম যাত্রা ফ্রি পাবেন। এটি আগের ১০-ট্রিপ ডিসকাউন্ট টিকিটের পরিবর্তে চালু হচ্ছে।

পরিবারের জন্য নতুন ভাড়া সুবিধাও আসছে। ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুরা একজন প্রাপ্তবয়স্ক যাত্রীর সঙ্গে থাকলে মাত্র ১ ডলারে যাতায়াত করতে পারবে। একই সাথে সিনিয়র, প্রতিবন্ধী এবং মেডিকেয়ার সুবিধাভোগীরা সব সময় হাফ ভাড়া সুবিধা পাবেন, এমনকি সকালবেলার ব্যস্ত সময়েও। এছাড়া, এমটিএ-র অধীনে সব ব্রিজ ও টানেলের টোল ৭.৫ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। ইজিপাস এবং টোলস বাই মেইল উভয় ক্ষেত্রেই এই বৃদ্ধি কার্যকর হবে। তবে কুইন্স, ব্রঙ্কস ও স্টেটেন আইল্যান্ডের বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ টোল ছাড় বহাল থাকবে।

এমটিএ জানিয়েছে, ভাড়া বৃদ্ধি তাদের ২০২৫ সালের অপারেটিং বাজেট বাস্তবায়নের অংশ। ভাড়া ও টোল থেকে আসা অর্থ মোট বাজেটের প্রায় ২৬ শতাংশ পূরণ করে। এই অর্থ মূলত কর্মচারীদের বেতন, স্বাস্থ্যসেবা, ওভারটাইমসহ দৈনন্দিন পরিচালন ব্যয় মেটাতে ব্যবহার করা হয়। এমটিএ-র ডেপুটি চিফ ফর কমার্শিয়াল ভেঞ্চারস, জেসি লাজারাস বলেন, এই অর্থের বিশাল অংশই যায় সেইসব মানুষের কাছে, যারা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সাবওয়ে, বাস এবং রেলপথ সচল রাখেন। তিনি আরও জানান, এটি মূলধনী বাজেট থেকে আলাদা, যেখানে অবকাঠামো উন্নয়ন, নতুন ট্রেন কেনা, সিগন্যালিং উন্নতকরণসহ বড় প্রকল্পের খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে। মূলধনী বাজেট আংশিকভাবে নিউইয়র্ক সিটির কনজেশন-প্রাইসিং টোলস দ্বারা অর্থায়ন হয়।

ভাড়া বৃদ্ধির খবরে নিউইয়র্কবাসীর প্রতিক্রিয়া মিশ্র। অনেকেই মনে করছেন জীবনযাত্রার খরচ ইতিমধ্যেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার ওপর পরিবহন খরচ বাড়ায় সাধারণ কর্মজীবী মানুষের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। ব্রুকলিনের এক যাত্রী বলেন, “ভাড়া ১০ সেন্ট বাড়ানো হয়তো তেমন বড় বিষয় নয়, কিন্তু প্রতিদিন যাতায়াত করলে মাস শেষে খরচ অনেক বেড়ে যাবে। যাদের আয় সীমিত, তাদের জন্য এটি অবশ্যই কষ্টকর।” অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করছেন এমটিএ-র সেবা সচল রাখতে এবং নতুন প্রযুক্তি চালু রাখতে ভাড়া বৃদ্ধি অনিবার্য।

নিউইয়র্ক বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত শহর এবং এর গণপরিবহন ব্যবস্থা প্রতিদিন লাখো মানুষের জীবনযাত্রার ভিত্তি। ভাড়া বৃদ্ধি যাত্রীদের জন্য বাড়তি চাপ আনলেও, এমটিএ মনে করছে এটি জরুরি, যাতে পরিবহন ব্যবস্থা টেকসই ও নিরবচ্ছিন্ন রাখা যায়। ২০২৬ সাল নাগাদ সম্পূর্ণভাবে অমনি কার্ড সিস্টেম চালু এবং নতুন ফেয়ার ক্যাপ কার্যকর হলে যাত্রীদের জন্য আরও আধুনিক, স্বচ্ছ ও নমনীয় অভিজ্ঞতা আসবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। এখন দেখার বিষয় হলো, এই পরিবর্তনগুলো বাস্তবে কতটা কার্যকর হয় এবং নিউইয়র্কবাসী কতটা তা মেনে নিতে পারেন।

শেয়ার করুন