০৫ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার, ০৬:৩৮:১৩ অপরাহ্ন


বিএনপি পাত্তাই দিলো না জামায়াতের আহবান
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-১১-২০২৫
বিএনপি পাত্তাই দিলো না জামায়াতের আহবান


দেশের পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে আলোচনায় বসতে জামায়াতের আহবানে সাড়া দেয়নি বিএনপি। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা জমজমাট। এই ব্যাপারে দলটির কঠোর নিরবতা ও এর পাশাপাশি বিএনপি’কে কেনোই বা জামায়াত এধরনের আহবান জানাতে আগ্রহী হলো তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক জটিলতা বলা চলে চরমে। এই জটিলতা কোন দিকে মোড় নেয়া তা নিয়ে নানান ধরনের আলোচনা রাজনৈতিক অঙ্গনে। আর এই অবস্থায় দেশের পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। কিন্তু সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেখা যায় বিএনপি এতে তো সাড়া তো দেয়ইনি, এমনকি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। বরং জামায়াতের দেওয়া আলোচনা প্রস্তাব চাপা পড়ে গেছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি’র ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থী ঘোষণার খবরে। তবে কেনো বিএনপি সম্প্রতি চলমান সঙ্কটে জামায়াতের দেওয়া আলোচনার প্রস্তাব বিএনপি গ্রহণ করেনি বা গ্রাহ্য করেনি তা নিয়ে নানান আলোচনা চলমানই আছে। 

কি ছিলো সেই প্রস্তাবে

দেশের পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে বিএনপিকে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিতে গিয়ে বলা হয়- জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সঙ্গে কোনো ঝগড়ায় লিপ্ত হতে চায় না। জামায়াত নেতার ভাষায় এতে আরও বলা হয় ‘যা-ই করতেছেন এবার বন্ধ করুন। আসুন আমরা একসঙ্গে বসি। দেশের এই পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি। বিএনপিকে আহ্বান করব একসঙ্গে বসার। আমরা আলোচনা করব কীভাবে সত্যিকার অর্থে একটা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ তৈরি হবে।’ রাজধানীর আল ফালাহ মিলনায়তনে জামায়াত আয়োজিত ‘চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এভাবে প্রস্তাবটি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়।

বিএনপি’র মত কি?

এই ব্যাপারে বিএনপি’র একজন নেতার সাথে কথা হয় দেশ প্রতিনিধির। নাম না প্রকাশ অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, জামায়াতের নেতা আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আসলে আগে ভাগেই বলে ফেলেছেন অনেক কথা। তিনি বলেছেন, ‘সরকার (অন্তর্বর্তী সরকার) কমপ্রোমাইজের মাধ্যমে সবাইকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছে। এটা কোনো হালুয়া রুটির ভাগাভাগি নয়।’ বিএনপির ওই নেতা আরও বলেন, জামায়াত নেতা আরও বলেছেন, ফ্যাসিবাদ পতনের পর গুণগত পরিবর্তনের প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি।’ তারা-তো আলোচনার কথা বলে আগে ভাগেই আমাদের ফ্যাসিবাদের সাথে তুলনা করে ফেলেছে বলেও মন্তব্য করেন ওই বিএনপি নেতা। এর পাশাপাশি তিনি বলেন, একজন জাতীয় আন্তর্জাতিক দেশ বরেণ্য শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো ব্যক্তি সর্ম্পকেও জামায়াতের মন্তব্য কোনো সৌজন্যের মধ্যে পড়ে না। কারণ সম্প্রতি চলমান সঙ্কটে জামায়াতের ওই নেতাই দাবি করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডনে গিয়ে একটি দলের চাপের মুখে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছিলেন। তাই যারা আগে ভাগেই এধরনের মন্তব্য করে ফেলে তাদের পক্ষ থেকে যে কোনো প্রস্তাবই যে উদ্দেশ্যমূলক তা বুঝতে বাকি নেই বলে ওই বিএনপি নেতা মনে করেন। আর একারণে বিএনপি জামায়াতের প্রস্তাববে আমলেই নেয়ানি। কারণ তারা একেক সময় একেক ধরনের বক্তব্য দিয়ে থাকে-বলে মন্তব্য করেন ওই বিএনপি নেতা। 

শেষ কথা

দেশের পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। কারো কারো মতে, এতে জামায়াতের রাজনৈতিক দুর্বলতা ধরা পড়ে গেছে। আবার কারো কারো মতে, আলোচনায় টেবিলে এনে বিএনপি’কে কৌশলে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা। কিংবা সামনে বড়ো ধরনের সঙ্কটের আশঙ্কা থেকে জামায়াত নিজেদের ব্যাপারে দোষ এড়াতে একটি আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। কেননা খোদ বিএনপি প্রভাবশালী নেতাদের মুখে দেশের সঙ্কটের কথা ফুটে উঠেছে। সে সসময়ে যেনো জামায়াত সহজে বলতে পারে তারা তো বিএনপি’কে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েই রেখেছিলো। কেননা সামনের দিকে যে কেনো সঙ্কটে বিএনপি সব দোষ জামায়াতের ঘাড়েই ফেলতে পারে। তাই সেধরনের আশঙ্কা থেকেই রেহাই পেতে দলটি বড়ো দল হিসাবে গা বাঁচাতে বিএনপি’কে একটি আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে।

শেয়ার করুন