১৫ নভেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৯:৩১:২৩ পূর্বাহ্ন


হাসিনার রায় ঘোষণা নিয়ে থমথমে পরিস্থিতি
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১১-২০২৫
হাসিনার রায় ঘোষণা নিয়ে থমথমে পরিস্থিতি শেখ হাসিনা


দেশজুড়েই থমথমে পরিস্থিতি। কোথায় কখন কী ঘটে যায় সেটা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের উৎকন্ঠা। আইনশৃংখলাবাহিনীর সর্তকবার্তায় জানানো হয়েছে, কাজকর্ম না থাকলে ওইদিন (১৩ নভেম্বর) বাইরে বের না হতে। এরসঙ্গে চলাচলেও সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ, বিমানবন্দরগুলোতে নাশকতার সম্ভাবনায় সর্বোচ্চ সর্তকতার কথা জানানো হয়েছে। পরিস্থিতিটা যে অত্যান্ত জটিল অবস্থায় সেটা এ সর্বশেষ দেশের সকল বিমান বন্দরে সতর্কতা জারির ঘোষণাতেই অনুমান করা গেছে। 

আওয়ামী লীগের ১৩ নভেম্বরের তথাকথিত কর্মসূচি নিয়ে নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাত আলী। গত ১১ নভেম্বর মঙ্গলবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার এ কথা বলেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, কিছুদিন ধরেই কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার ছড়িয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টায় লিপ্ত। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সম্প্রতি তাদের নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীতে জড়ো হয়ে ঝটিকা মিছিলের আয়োজন করছে এবং ককটেল বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। 

কমিশনার বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলটির এই হীন অপতৎপরতা রোধে সচেষ্ট রয়েছে এবং ১ অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত মোট ৫৫২ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারদের অধিকাংশই ঢাকার বাইরে থেকে আসা এবং বিভিন্ন ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে নাশকতারীদের সনাক্ত করার কাজ চলছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ হতে পারে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর)। এমনটা জানানো হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে। এ রায় ঘোষণার সম্ভব্য দিন নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও তাদের সকলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। তবু শেখ হাসিনা তাদের দলীয় নেত্রী। শেখ হাসিনা মানেই আওয়ামী লীগের সবকেন্দ্র বিন্দু। তার বিরুদ্ধে যে রায়ের সম্ভাবনা এবং সেটা কী হতে পারে সেটা তারা অনুমেয় করেও নিয়েছেন। হতে পারে সেটা সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু এমন রায় কী আওয়ামী লীগের কোটি কোটি নেতাকর্মী সমার্থক সহজেই মেনে নেবেন? 

তাই ১৩ নভেম্বর ঘীরে এক ধরনের আওয়ামী জাগরণের একটা উপায় খুঁজে বের করেছেন তারা। ইতিমধ্যে এ দিনকে ঘিরে অনেক প্ল্যান পরিকল্পনাও ছিল, যার কিছু কিছু সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃংখলাবাহিনী ভেস্তে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে দেশের সাধারণ জনগনকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন। 

ইতিমধ্যে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের স্লোগানসংবলিত এক লাখ গ্যাস বেলুন উড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করার পরিকল্পনার অভিযোগে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। 

গত ৯ নভেম্বর রোববার ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এতে বলা হয়, ডিএমপির রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শনি ও রোববার অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছেন, তারা ঢাকা শহরে ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। এ ছাড়া ১০ নভেম্বর সোমবার থেকে ১২ নভেম্বর বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার আশপাশে এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের স্লোগানসংবলিত এক লাখ গ্যাস বেলুন ওড়ানোর পরিকল্পনা করছিল।

এরপরও গত কয়েকদিনে ঢাকা ও দেশের বিভিন্নস্থানে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আইনশৃংখলাবাহিনীর উপস্থিতি জোরদার করা স্বত্ত্বেও বিভিন্ন স্থানে ককটেল, বোমা নিক্ষেপ, গাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার মত নাশকতামূলক কর্মকান্ড বেড়েই চলেছে। রাজধানী ঢাকায় বাড্ডা, মেরুল, উত্তরা, ১০০ ফিট অঞ্চল, বসুন্ধরা গেট, যাত্রারাবাড়ী এলাকায় প্রাইভেট কার, যাত্রীবাহি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এবং কিছুক্ষণ পরপর এ ধরনের খবর আসছে অনাবরত। এছাড়াও গ্রামীন ব্যাংক কার্যালয়ের সম্মুখে রাস্তায়, উপদেষ্টাদের প্রতিষ্ঠানের সম্মুখে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনাও এ রিপোর্ট লেখাকালীন সময় পর্যন্ত রয়েছে। 

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় এ ধরনের নাশকতামুলক ও মানুষের মধ্যে উৎকন্ঠা সৃষ্টির কাজ করার প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সম্ভাব্য নাশকতা প্রতিরোধে শুরু হয়েছে সাঁড়াশি অভিযান, বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায়। 

রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের ঝটিকা মিছিল বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ আগে এরকম মিছিল দেখলে খুব একটা ভয় না পেলেও ইদানিং এমন মিছিল দেখামাত্র মানুষের মধ্যে আতংক বেড়ে যায়। কারণ এ মিছিল থেকে কোনোরকম নাশকতামূলক কর্মকান্ড সৃষ্টি করে ত্রাস সৃষ্টি করা হয় কি না, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয় কি না এ নিয়েই উৎকন্ঠা। 

বলার অপেক্ষা রাখেনা, আওয়ামী লীগ দেশের সবচে প্রাচীনতম একটা রাজনৈতিক সংগঠন। এদের নেতাকর্মী সমার্থকদের সংখ্যাও কোটি কোটি। সবাই যে আওয়ামী লীগের টানা ১৬ বছর শাসনামলের সুবিধাভূগি তা কিন্তু নয়। গুটিকয়েক ওই সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে গণমানুষ থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে দলটির নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরাও মনে করেন। 

দলটির বেশীরভাগ নীতিনির্ধারক সীমান্ত পেরিয়ে দেশের বাইরে। তারাই এখন বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন দেশে থাকা নেতাকর্মীদের। অর্থও খরচ হচ্ছে। যাতে ট্রাইব্যুনালের রায় না হয়, বা বাধাগ্রস্থ করা যায়, সেরকম কর্মকান্ড করার নিমিত্তে। কিন্তু এসব আইনশৃংখলাবিরোধী কার্যক্রম করতে যেয়ে অনেকেই পুলিশের হাতে আটক হয়ে বিপদে পড়ছেন। ওইসব ফ্যামিলিও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন। অনেকে নামছেন। অনেকে নামতেও চাননা। এ নিয়েও মতবিরোধ রয়েছে। কারন আটককৃতদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের কঠিনতম মামলা ঠুকে দেয়া হচ্ছে। 

এদিকে শুধু রায় ঘোষণার দিনক্ষণ ঘোষণার দিন যদি এতটা আতঙ্ক ছড়ানো হয়, তাহলে রায় ঘোষণার দিন কী হবে সেটা নিয়েও এখন আলোচনা হচ্ছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি এখন। এ মাসের ১৫ দিন ও ডিসেম্বর জানুয়ারি মাঝে। ফেব্রুয়ারির প্রধমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান হলে সর্বোচ্চ ৩ মাস বাকি। তাহলে এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনটাও আদৌ হবে কিনা বা ওইরকম স্বাভাবিক পরিবেশ থাকবে কি না সেটা নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠছে। 

ফলে আগামী দিনগুলো কী হবে এ নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার যে প্লাটফর্ম সেটাও এখন বিভক্ত। বিএনপি ও জামায়াত, এনসিপিসহ সকল দল এক হতে পারছেনা। চলছে পক্ষ বিপক্ষ যুক্তি তর্ক, আন্দোলনও। গণভোটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ওই দ্বিধা বিভক্তির সুযোগটাও আওয়ামী লীগ নিচ্ছে। এর মূলে হলো গণভোট। একগ্রুপ বলছে নভেম্বরেই গণভোট অন্যপক্ষ ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে। এ নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াত ইসলামীসহ সমমনা কয়েকটি দল।

ঘোষণা দিয়েছে গণভোট আগে এরপর নির্বাচন। সেটা প্রয়োজনে ২০২৬ এ না হলেও নয়। অর্থাৎ তারা গণভোট এক্ষুনিই করতে হবে যদি প্রয়োজন হয় জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দিলেও আপত্তি নেই। বিএনপি বলছে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে দেশ এক চরম অনিশ্চয়তায় পরে যাবে। যা গোটা দেশের জন্য হুমকি স্বরুপ। মানুষ এসব পক্ষ বিপক্ষ কথা শুনেও দ্বিধাগ্রস্থ। যে আসলেই আগামীর দিনগুলোতে কী হতে চলেছে!

শেয়ার করুন