১৫ নভেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০১:৪১:২০ পূর্বাহ্ন


নিউইয়র্কের সাবওয়েতে মুসলিম দম্পতির ওপর ইসলামবিদ্বেষী হামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১১-২০২৫
নিউইয়র্কের সাবওয়েতে মুসলিম দম্পতির ওপর ইসলামবিদ্বেষী হামলা এক মুসলিম দম্পতিকে প্রকাশ্যে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে গালিগালাজ করছেন এক নারী, যিনি নিজেকে ইহুদি ও ট্রাম্প সমর্থক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন


নিউইয়র্ক শহরের সাবওয়েতে আবারও ঘৃণা ও বর্ণবিদ্বেষের জঘন্য দৃশ্যের সাক্ষী হলেন সাধারণ যাত্রীরা। ইরানি ও ফিলিস্তিনি এক মুসলিম দম্পতিকে গত ৩০ অক্টোবর প্রকাশ্যে ‘সন্ত্রাসী’ বলে গালিগালাজ করেন এক নারী, যিনি নিজেকে ইহুদি ও ট্রাম্পের ভোটা বলে পরিচয় দেন। ঘটনাটি ঘটেছে সম্প্রতি শহরের এক সাবওয়ে ট্রেনে, যেখানে ইরানি প্রভাবশালী আরিয়ানা জেসমিন ও তার সঙ্গী ইউসুফ নিজেরা শান্তভাবে যাত্রা করছিলেন। হঠাৎ ওই নারী তাদের উদ্দেশে চিৎকার করে বলেন, তোমরা সন্ত্রাসী! এবং ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব অস্বীকার করে মন্তব্য করেন, প্যালেস্টাইন বলে কিছু নেই। জেসমিন তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ঘটনাটির ভিডিও প্রকাশ করলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওই নারী ইউসুফের কেফিয়েহ বা ঐতিহ্যবাহী স্কার্ফকে সন্ত্রাসীদের তোয়ালে বলে কটাক্ষ করছেন এবং দূরে সরে গিয়েও ক্রমাগত গালিগালাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। জেসমিন জানান, তারা কোনোভাবেই ওই নারীকে উস্কানি দেননি, তবু নারীটি অকারণে তাদের ওপর চড়াও হন। ভিডিওটি এখন পর্যন্ত ২ মিলিয়নের বেশি বার দেখা হয়েছে এবং অনেক মুসলিম নিউইয়র্কার মন্তব্য করে জানিয়েছেন, তারাও ওই একই নারী দ্বারা পূর্বে হয়রানির শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ দাবি করেছেন, ওই নারী সাবওয়েতে একাধিক যাত্রীকে ধাক্কা ও কনুই মেরে হেনস্তা করেছেন।

একজন মন্তব্য করেছেন, ওই একই নারী আমার বন্ধুকেও কনুই মেরে চলে গিয়েছিল, কারণ আমরা দুজনেই কেফিয়েহ পরেছিলাম। আরেকজন লিখেছেন, সে ট্রাম্প ভোটার বলবে কিনা তা বলার আগেই বোঝা যাচ্ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনার পর ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই দাবি করছেন, নিউইয়র্কের মতো বৈচিত্র‍্যময় শহরে ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে এমন ঘৃণামূলক আচরণ অগ্রহণযোগ্য। ঘটনাটির পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম অধিকার সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস নিউইয়র্ক এই বর্ণবাদী ও ইসলামবিরোধী ঘটনার কঠোর নিন্দা জানায়। সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক আফাফ নাশের বলেন, এই ঘৃণামূলক আচরণ প্রমাণ করে যে ইসলামভীতি ও ফিলিস্তিনবিরোধী মানসিকতা এখনও আমাদের শহরে গভীরভাবে প্রোথিত। কোনো নিউইয়র্কবাসীকেই তার ধর্ম, জাতিসত্তা বা সংস্কৃতির কারণে অবমাননার শিকার হতে হবে না। তিনি আরও বলেন, শহর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত করা এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা।

ঘটনার পর নিউইয়র্কের বিভিন্ন অধিকারকর্মী ও সামাজিক সংগঠন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঐক্যবদ্ধভাবে ঘৃণাজনিত অপরাধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। অনেকেই সাবওয়েতে বর্ণবাদবিরোধী সচেতনতামূলক পোস্টার ও স্টিকার লাগানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন। স্থানীয় রাজনীতিক ও সিটি কাউন্সিল সদস্যরাও ঘটনাটি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, তারা ঘটনাটির ভিডিও বিশ্লেষণ করছে এবং অভিযুক্ত নারীকে শনাক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। পুলিশের একজন মুখপাত্র বলেন, আমরা ঘৃণাজনিত অপরাধকে খুব গুরুত্ব সহকারে দেখি। কোনো নাগরিকের ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের কারণে হয়রানি সহ্য করা হবে না।

ঘটনাটি নিউইয়র্কে ধর্মীয় ও জাতিগত সহাবস্থান নিয়ে নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। অনেকে বলছেন, শহরটি নানা জাতি ও ধর্মের মানুষের সহাবস্থানের প্রতীক। এখানে এমন ঘৃণামূলক আচরণ বরদাস্ত করা যায় না। জেসমিন ও ইউসুফ ঘটনার পর স্থানীয় রাজনীতিক জোহরান মামদানির এক সমাবেশে যোগ দেন এবং জানান, তারা শান্তিপূর্ণ উপায়ে ন্যায়বিচার চান। মামদানি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, নিউইয়র্ক মুসলমান, ইহুদি, কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয় ও লাতিনো সব সম্প্রদায়ের শহর। ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতি এখানে স্থান পাবে না।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এমন ঘটনার বিরুদ্ধে সামাজিক ও আইনি প্রতিরোধ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি, যেন কেউ ধর্ম বা জাতিসত্তার কারণে নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে এবং নিউইয়র্ক তার বহুত্ববাদী চেতনা বজায় রাখতে পারে।

শেয়ার করুন