০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৬:৩৮:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-১২-২০২৫
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ স্ন্যাপ


যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি স্ন্যাপ-এর কর্মসূচি পুনরায় চালু হয়েছে। সরকারি অচলাবস্থার কারণে কয়েক সপ্তাহের অস্থিরতার পর এটি পুনরায় চালু হওয়ায় নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য স্বস্তির বার্তা বয়ে এনেছে। তবে এই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী লক্ষাধিক স্ন্যাপ গ্রাহক খুব দ্রুতই আরো কঠোর নিয়মের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। কঠোর নিয়ম পূরণ করতে ব্যর্থ হলে তারা সম্পূর্ণভাবে খাদ্য সুবিধা হারাতে পারেন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, অধিকাংশ কর্মক্ষম স্ন্যাপ সুবিধাভোগীকে মাসে কমপক্ষে ৮০ ঘণ্টা কাজ, স্বেচ্ছাসেবা বা চাকরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে হবে। অন্যথায় তারা তিন বছরের মধ্যে মাত্র তিন মাস স্ন্যাপ সুবিধা পাবেন। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস (সিবিও)-এর বিশ্লেষণ বলছে, নতুন বিধান কার্যকর হলে গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ২৪ লাখ আমেরিকান তাদের খাদ্য সহায়তা হারাবেন। এর মধ্যে তিন লক্ষাধিক পরিবারে ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী সন্তান রয়েছে। এই পরিবারগুলোর মধ্যে আরও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

নতুন নিয়মে পরিবর্তন এসেছে রিপাবলিকানদের বিগ, বিউটিফুল বিল-এর মাধ্যমে, যা গত গ্রীষ্মে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষর করেছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে রিপাবলিকানরা দাবি করে আসছিলেন যে স্ন্যাপ-এর বিদ্যমান কর্ম-নিয়ম যথেষ্ট কঠোর নয় এবং অনেকে কর্মক্ষম হয়েও কর্মসংস্থানে যুক্ত হচ্ছেন না। পূর্ববর্তী নিয়ম অনুসারে ১৮ থেকে ৪৯ বছর বয়সী, যাদের কোন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নেই এবং যাদের উপর নির্ভরশীল শিশু নেই। তাদের জন্য এই শর্ত প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু নতুন আইনে এই বয়সসীমা বাড়িয়ে ৬৪ করা হয়েছে এবং ১৪-১৭ বছর বয়সী সন্তানের অভিভাবকদেরও বাধ্যতামূলকভাবে এই কর্ম-নিয়মের আওতায় আনা হয়েছে।

এছাড়াও ভেটেরান, গৃহহীন ব্যক্তি এবং সাবেক ফস্টার কেয়ার যুবকরাও এই নতুন নিয়মের আওতায় পড়ছেন। অর্থাৎ পূর্বের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ এখন কর্ম-নিয়ম মেনে স্ন্যাপ সুবিধা পেতে বাধ্য হবেন। এটি স্ন্যাপ প্রোগ্রামকে কার্যত এক নতুন যুগে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে সুবিধা পাওয়া আগের চেয়ে অনেক কঠিন হবে। নতুন আইনের অন্যতম বড় বিতর্ক হলো বাস্তবায়নের সময়সীমা। আইনটিতে নির্দিষ্ট কোনো কার্যকর তারিখ দেওয়া হয়নি, যা প্রথম থেকেই বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। ইউএসডিএ প্রথমে জানিয়েছিল যে আইনের বিধানগুলো ট্রাম্পের স্বাক্ষরের দিন থেকেই কার্যকর, তবে স্টেটগুলোকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে তাদের সিস্টেম তৈরি করতে। পরে নভেম্বর মাসে স্ন্যাপ সুবিধা বিতরণে বন্ধের কারণে ইউএসডিএ জানায়, এই মাসটিকে কর্মঘণ্টা গণনার ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা যাবে না। স্টেটগুলোর কর্মকর্তা ও নীতিনির্ধারকদের মতে, এত দ্রুত সিস্টেম আপডেট করার চাপের ফলে বহু জায়গায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, স্ন্যাপ-এর প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সাধারণত ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। কিন্তু এবার রাজ্যগুলোকে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে সফটওয়্যার আপডেট, যোগ্যতা যাচাই, নতুন নিয়ম অনুযায়ী নোটিশ বিতরণসহ নানা কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। অনেক স্টেট নভেম্বর থেকে নতুন নিয়ম বাস্তবায়ন শুরু করলেও কিছু স্টেট জানিয়েছে যে তাদের সিস্টেম আগামী বছর বসন্তের আগে প্রস্তুত হবে না। এতে ইউএসডি’র পক্ষ থেকে জরিমানা বা প্রশাসনিক শাস্তির আশঙ্কা রয়েছে। একই সময়ে, নতুন আইনের মাধ্যমে যদি কোনো স্টেটে ভুল পেমেন্ট বা উচ্চ ত্রুটির হার ধরা পড়ে, তবে এর জন্য স্টেটকেই অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে। ফলে স্টেটেগুলোর ওপর দ্বিগুণ চাপ তৈরি হয়েছে।

নতুন নিয়মের কারণে লাখ লাখ স্ন্যাপ গ্রাহক ভয় পাচ্ছেন যে তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে নিয়ম ভঙ্গ করতে পারেন শর্তগুলো না বুঝে। অনেকেই অভিযোগ করছেন যে কোনো প্রকার নোটিশ বা ব্যাখ্যা ছাড়াই তাদের কর্ম-ঘণ্টার শর্ত যোগ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তা প্রশাসনিক ব্যর্থতা হিসেবেই বিবেচিত হবে। স্ন্যাপ সুবিধাভোগীদের অনেকেই শারীরিক বা মানসিক সীমাবদ্ধতার কারণে কাজ করতে সক্ষম নন। আইনে নির্দিষ্ট কিছু অব্যাহতি থাকলেও এগুলো চিহ্নিত করতে সাক্ষাৎকার, মেডিকেল ডকুমেন্ট ও বিশেষ স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া প্রয়োজন-যা এই দ্রুত বাস্তবায়নের সময়সীমায় অনেক স্টেটে যথাযথভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না।বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করছে: কেউ কেউ নতুন নিয়মকে সুবিধাভোগীদের পুনঃনিবন্ধন বা রি সার্টিফিকেশন-এর সময় কার্যকর করছে, আবার কেউ কেউ একসঙ্গে সব গ্রাহকদের ওপর নিয়ম কার্যকর করতে শুরু করেছে। এতে প্রচণ্ড বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে এবং অনেকেই জানেন না তাদের ওপর নিয়মটি কবে থেকে প্রযোজ্য হবে।

খাদ্য সহায়তা প্রোগ্রাম স্ন্যাপ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ৪ কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তা প্রদান করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন কাজের শর্তের কারণে যে ২৪ লাখ মানুষ সুবিধা হারাতে পারেন। এটি যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধাক্কা সৃষ্টি করবে। অনেক নিম্ন আয়ের কর্মী ইতিমধ্যেই অনিয়মিত সময়, কম মজুরি, আংশিক কর্মঘণ্টা ইত্যাদি সমস্যার কারণে স্থিরভাবে ৮০ ঘণ্টা কাজ জোগাড় করতে পারেন না। ফলে তারা স্ন্যাপ-এর সুবিধা হারানোর ঝুঁকিতেই থাকবেন। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, নিয়ম কঠোর করার মূল উদ্দেশ্য কর্মসংস্থান বাড়ানো হলেও বাস্তবে এর প্রভাব ভিন্ন হতে পারে। সস্তা শ্রমে নিয়োজিত অনেক মানুষ অতিরিক্ত সময় কাজ করতে শারীরিকভাবে সক্ষম নন, বা তাদের এলাকায় পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই। আবার আইন অনুযায়ী এখন অর্থনৈতিক মন্দা বা চাকরির অভাব দেখিয়ে রাজ্যগুলো সহজে ছাড়ও চাইতে পারবে না, কারণ এখন শুধুমাত্র ১০ শতাংশের বেশি বেকারত্বের এলাকায়ই ছাড় দেওয়ার অনুমতি রয়েছে। এটি খুবই বিরল ঘটনা।

এদিকে রোড আইল্যান্ডের একটি ফেডারেল আদালত ইউএসডিএ-কে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বলেছে যে বর্তমানে যেসব ছাড় বা ছাড় চলছে, সেগুলো মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বাতিল করা যাবে না। কিন্তু ইউএসডিএ এখনো স্পষ্ট নীতিমালা প্রকাশ করেনি আদালতের এই নির্দেশনার আলোকে কীভাবে তারা কাজ করবে। ইউএসডিএর মুখপাত্র জানিয়েছেন যে তারা ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট ২০২৫’-এর বিধানের আওতায় থেকে প্রতিটি ছাড় পৃথকভাবে অনুমোদন দিচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, আইনি জটিলতা, প্রশাসনিক অস্থিরতা এবং দ্রুত বাস্তবায়নের চাপ সব মিলিয়ে আগামী কয়েক মাস স্ন্যাপের সুবিধাভোগী ও রাজ্য সরকারের জন্য অত্যন্ত কঠিন হতে পারে। মার্চের পর থেকে যেসব সুবিধাভোগী নতুন নিয়ম পূরণ করতে পারবেন না, তাদের অনেকেই ধীরে ধীরে সুবিধা হারাতে শুরু করবেন। বর্তমানে স্ন্যাপ সুবিধা পুনরায় শুরু হওয়া যতোটা স্বস্তির, ভবিষ্যতের কঠোর নিয়ম ততটাই অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এবং দ্রুত বাস্তবায়নের তাড়াহুড়োর কারণে কোটি কোটি নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। নীতিনির্ধারকদের একাংশ মনে করছেন, কর্মসংস্থান বাড়াতে কর্ম-নিয়ম কার্যকর হতে পারে, তবে পর্যাপ্ত সময়, পরিকাঠামো এবং পরিষ্কার দিকনির্দেশনা ছাড়া এই ধরনের পরিবর্তন উল্টো সংকট সৃষ্টি করবে। স্ন্যাপ-এর ওপর নির্ভরশীল মানুষদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন-নতুন আইনের বাস্তবায়ন কতটা মানবিক, কতটা বাস্তবসম্মত এবং তারা কি আবারও তাদের পরিবারের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে পারবেন?

শেয়ার করুন