০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:১৯:০৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


আনন্দবাজারের খবরে স্বস্তি আ.লীগে : সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৮-২০২৩
আনন্দবাজারের খবরে স্বস্তি আ.লীগে : সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন


বাংলাদেশের রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোটের সরব উপস্থিতি দীর্ঘদিনের। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্যও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে তাদের দৌড়ঝাঁপ। ভারত এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কিছু বলেনি কখনো। তবুও উজরা জেয়া ও ডোনাল্ড লুর মতো মার্কিন শীর্ষ প্রতিনিধিদের বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ সফরের আগে ভারত হয়ে আসাটাকে বাংলাদেশের মার্কিন নীতিতে ভারতের এক ধরনের ‘সায়’ আছে বলেই মনে করা হচ্ছিল। তাছাড়া ভারতের কোলঘেঁষে থাকা দেশ বাংলাদেশে মার্কিন কী নীতি হবে সেটা ভারতকে সঙ্গে না নিয়ে মাঠে নেমেছে মার্কিনিরা সেটা অনুধাবন বোকামি! 

যেহেতু ইন্দো-প্যাসিফিক জোটের চার সদস্যের একটি ভারত। যেহেতু ওই জোটে চায়নার প্রভাব খাটো করতেই এ জোটের মূল লক্ষ্য। যেহেতু মায়ানমারের সামরিক জান্তা চায়নার নিয়ন্ত্রণে চলে বলে একটা কথা চলে আসছে। যেহেতু ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত ছাড়াও চায়নার সঙ্গে তেমন ভালো সম্পর্ক নেই, বিধায় ইন্দো-প্যাসিফিকে মার্কিনিদের নিয়ে প্রভাব বিস্তারের ভারত কিছুটা অনিচ্ছাকৃত হলেও ফ্রন্টলাইনে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে উপরোল্লিখিত বিষয়ের একটা সংযোগ আছে এমনটা এখন স্পষ্ট বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ওপরের ওইসব নীতির সঙ্গে একমত নয়। যার বাস্তব প্রমাণও দিয়ে রেখেছে। যেমনটা কোয়াডে যোগ না দিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিকে আলাদা প্ল্যান প্রণয়ন ও বন্ধুপ্রতিম দেশে বাইরের শক্তিগুলো যেন কোনো আক্রমণের জন্য বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার না করতে পারে ইত্যাদি। গত ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এক বক্তব্যে এটা ক্লিয়ারও করেছেন। তিনি এমন নীতিতে বিশ্বাসী নন। 

মার্কিনিরা বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের অমন নীতি আগ থেকেই আঁচ করেই তারা উঠে পড়ে লেগেছে বাংলাদেশের ক্ষমতার পরিবর্তনে এ অভিযোগও স্পষ্ট এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে। এজন্য প্রকাশ্যে মার্কিনিদের কঠোর সমালোচনাও হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে চলা এতোকিছুর মধ্যেও ভারত মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। সেটা এখনো। তবে বাংলাদেশের মানুষ ভারতের মুখ থেকে মার্কিনিদের নীতি বা অন্যকিছু শুনতে চেয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকেই। ভারতের দীর্ঘ সীমান্তজুড়ে যে দেশটির অবস্থান সে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে টালমাটাল অবস্থায় ভারতের কোনো টু শব্দ নেই এটা রহস্যজনক বলেই মনে করেছেন কেউ কেউ। এখনো যে ওই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে তা নয়। 

কিন্তু সম্প্রতি ডয়চেভেলের এক রিপোর্টে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ নিয়ে ভারতের ‘নোট’ বা বার্তা নিয়ে যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, সেটা নিয়ে গোটা বাংলাদেশ এখন উত্তাল। বিশেষ করে মার্কিন ও পশ্চিমাজোটের চাপে অনেকটাই পিষ্ট যখন ক্ষমতাসীন দল, ঠিক তখন কথিত ভারতের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবর পাঠানো বার্তাকে ক্ষমতাসীনদের হালে পানি মিলেছে। এ নিয়েই রাজ্যের হৈ চৈ। 

এ যেন স্টেডিয়ামে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর বিরুদ্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা মোহামেডানের বিপক্ষে আবাহনীর এক গোল, যা দিয়ে ম্যাচ জেতার অদম্য বাসনায় ফিরে আসা আবাহনীর। এমন অবস্থা নিয়ে দেশের রাজনীতির মাঠে, যা ঘটছে সেটাও ওই ম্যাচের গ্যালারিতে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে যে আবহ বিরাজ করছে ওই মুহূর্তে সেটাই। এগিয়ে থেকেও মোহামেডানের সমর্থকদের দুরু দুরু ভাব! অ্যাডভান্টেজটা থাকবে তো! জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া যাবে তো। অন্যদিকে দীর্ঘক্ষণ কোণঠাসা থেকে এক গোল যখন দিয়েছে, তখন আবাহনী ফিরেছে ছন্দে। বাকি গোল পরিশোধ করে আরো বাড়তি একটি গোল করে ম্যাচের জয় ছিনিয়ে ফেরা যাবে বৈকি সে অবস্থায় আবাহনী সমর্থক! 

কিন্তু ম্যাচেরও তো এখনো ঢের বাকি...। উত্তেজনা, দুরু দুরু ভাব সর্বত্র। এ নিয়ে এক চোট ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের মুখেও। 

তার আগে দেখা যাক বার্তাটা কী...  

জার্মানভিত্তিক অনলাইন মিডিয়া ডয়চেভেলেতে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে সম্প্রতি একাধিক মন্তব্য করেছে আমেরিকা। কিন্তু আমেরিকার অবস্থানের সঙ্গে সহমত নয় ভারত। জি-২০ বৈঠকের আগে এক কূটনৈতিক বার্তায় বাংলাদেশ নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে দিল্লি। ভারতের বক্তব্যে কয়েকটি ভাগ আছে।

কূটনৈতিক নোটে ভারত জানিয়েছে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে ভূরাজনৈতিক দিক থেকে তা ভারত এবং আমেরিকা কারো পক্ষেই সুখকর হবে না। কারণ হাসিনার সরকার দুর্বল হয়ে পড়লে জামাতের মতো সংগঠনের ক্ষমতা বাড়বে বলে মনে করে ভারত। আমেরিকা জামায়াতকে একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দেখে। মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে তুলনা করে। কিন্তু ভারত মনে করে জামায়াত একটি উগ্র মৌলবাদী সংগঠন। ভারতের বার্তায় একথা স্পষ্ট করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ স্থলসীমান্ত আছে। বাংলাদেশে জামাতের মতো সংগঠন শক্তিশালী হলে ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা সমস্যার মুখে পড়বে। জামাতের মতো সংগঠনের সঙ্গে পাকিস্তানের নিবিড় যোগ আছে বলেই মনে করে ভারত।

ভারত জানিয়েছে, আমেরিকার মতো ভারতও চায় বাংলাদেশে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। কিন্তু আমেরিকা সম্প্রতি যে মন্তব্যগুলো করেছে তা বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের জন্য বিপজ্জনক বলে মনে করে ভারত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্তা ডয়চেভেলেকে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল দিল্লি ঘুরে যাওয়ার পরেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল ভারত। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে ভারতীয় প্রশাসনের।

আগামী সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লিতে জি-২০-এর বৈঠক শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও সেখানে আসবেন। এই বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন এবং উপমহাদেশের ভূরাজনীতি নিয়ে সমান্তরাল বৈঠক হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। ভারত জি-২০-এর মঞ্চকে এবিষয়ে আলোচনার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।

আফগানিস্তানের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেছে ভারত। আমেরিকাকে জানানো হয়েছে, যেভাবে আফগানিস্তান থেকে আমেরিকা তাদের ঘাঁটি সরিয়ে নিয়েছে, ভারত তাতে সন্তুষ্ট নয়। এর ফলে উপমহাদেশ অঞ্চলে অস্থিরতার আশঙ্কা বেড়েছে। তালেবান উপমহাদেশের ভূরাজনীতিতে একটি বড় ‘থ্রেট’ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে ভারত। বস্তুত, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক ভারতের চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গেই বাংলাদেশের জন্য অ্যামেরিকার পৃথক ভিসানীতির সমালোচনা করেছে ভারত। আমেরিকা জানিয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন যারা বানচাল করার চেষ্টা করবে, আমেরিকা তাদের সে দেশে ঢুকতে দেবে না। ভারত মনে করে, আমেরিকার এই নীতি সরাসরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো। ভারত এই নীতিকে ভালো চোখে দেখছে না।

জি-২০ বৈঠকে এই সব কয়টি বিষয়ই বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় উঠে আসতে পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। বস্তুত, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসাররাও আড়ালে একথা স্বীকার করছেন।

ভারতীয় সেনার সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চেভেলেকে জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের জন্মের সময় থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মসৃণ থেকেছে। যখনই সে দেশে অন্য কোনো সরকার ক্ষমতায় এসেছে, দুই দেশের সম্পর্ক ততোটা মসৃণ থাকেনি। তাই ভারত সব সময়ই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকারকে গুরুত্ব দেয়।’ উৎপল মনে করেন, ভূরাজনৈতিক দিক থেকেও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সরকার দেখতে চায় ভারত। কারণ ভারত মনে করে আওয়ামী লীগের সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকলে দুই দেশের সীমান্ত আপাতদৃষ্টিতে সুরক্ষিত থাকে।” 

প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এ রিপোর্টের রহস্য নিয়ে

বলা হচ্ছে, দীর্ঘদিন নিশ্চুপ থাকা ভারতের নীরবতা ভেঙেছে সম্প্রতি ভারত সফরে আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের সফরের পর থেকেই। এ রিপোর্ট সে সফরের ফলোআপ। কিন্তু ভারতের তুখোড় রাজনীতিবিদদের এ রিপোর্টে কিছুটা খাটো করা হয়েছে বৈকি!

কারণ ভারত যে কাজটা করে সেটা বুঝেশুনে। অনেক সময় আগাম, পেছন ভেবে। হুট করে দেশের রাজনৈতিক চিন্তাধারা বা নীতি পরিবর্তন করে ফেলবে তেমন ঠুনকো পলিটিক্স ভারত করে না। শুধু নিজেদের দেশেই নয়, ভারত বিশ্বে পরাশক্তিধর দেশের একটি। ফলে তারা অনেক কিছু ভেবেই যা করে সেটা আগ থেকেই করে। তাছাড়া ওই রিপোর্টে যেভাবে সস্তা ইমোশন দেখানো হয়েছে, এমনটা যদি তাদের চিন্তা-চেতনায় থেকেও থাকে, তাহলে সেটা অনেক আগেই তার জোটের প্রধান শরিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আগেই অবহিত করে এ প্রসঙ্গে  তাদের চিন্তাধারার প্রকাশ করতো। কারণ নরেন্দ্র মোদিসহ ভারতের রাজনীতিবিদরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন থেকেই চলাচল ও যোগাযোগ করে আসছে। 

এখানে রিপোর্টে যে প্রকাশ পেয়েছে সেটাতে ‘হুট করে মনে হলো, অমনি তাড়াহুড়া করে দেখা সাক্ষাৎ না করে বার্তা পাঠালাম’ এমনটা হয় না। বিশেষ করে মার্কিনিরা যেখানে একটা চিন্তা-ভাবনা নিয়ে নামে, সেটা শেষ পর্যায়ে এসে ফেলে রেখে চলে যাবে বিষয়টা এমনটা হওয়ার সুযোগ নেই। কেননা বাংলাদেশ ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনা করে আসছে এবং সেটা তাদের নিখুঁত প্ল্যান মোতাবেক। সে প্ল্যানে বাধ সাধবে কেউ, সেটা শুনে তারা সবকিছু গুটিয়ে ফেলবে বিষয়টা সম্ভবত এমন না-ও হতে পারে। কারণ নির্বাচন ইস্যুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘ভিসানীতি’ দিয়েছে। তারও আগে মানবাধিকার ইস্যুতে দিয়েছে স্যাংশন, যা মূলত একই সূত্রে গাঁথা। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের যেসব কূটনীতির শিষ্টাচার-বহির্ভূত কথাবার্তা সেগুলোতে মার্কিনিরা সম্ভবত  সহজে এ মিশনে পেছনে যাবে এমনটা মনে হয় না বলেই কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।  

তবু রাজনীতিটা এমনই। স্বার্থ যেখানে সেখানে সবই সম্ভব। কি জানি, হয়তো বৃহত্তর স্বার্থে ভারতের মনোভাবে সায় মার্কিনিরা দিতেও পারে। এটা তো অসম্ভব কিছু না। সবারই স্বার্থের বিষয়, যা ওই চিঠিতে প্রকাশও পেয়েছে। 

বার্তা বা চিঠির দুর্বলতা 

নোট বা বার্তার ঠিকই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এখানে কোনো সূত্রের উল্লেখ নেই। এটা নিয়েও প্রচ- সমালোচনা। ভারতের মতো একটা দেশ তাদের নীতির পরিবর্তন করবে-এমন একটা বার্তা তারা দিতেই পারেন। সেক্ষেত্রে যে কোনো পর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল এটা বলতেই পারেন, মিডিয়ায়। কিন্তু সেটার উল্লেখ নেই। আড়াল করা হয়েছে। ফলে এর সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে ভারতের একটা বিষয় নিয়ে যখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে তোলপাড় তখনো কিন্তু এ বিষয়ে ভারতের কোনো দায়িত্বশীল কথা বলেনি। নিউজটা প্রকাশিত হয়েছে ভারতের মধ্যম সারির এক পত্রিকায় আনন্দ বাজারের অনলাইন। কারণ আনন্দবাজার পত্রিকাকে কখনই ভারতের শীর্ষ দৈনিকের মধ্যে কাউন্ট করে না কেউই। এখানেও একটা সন্দেহের অবকাশ। এসব খবর প্রকাশিত হয় শীর্ষ মিডিয়াতে। কিন্তু এমন দ্বিতীয়টি ভারতের শীর্ষ মিডিয়ার কোনোটিই আর খবর দিয়েছে সংবাদ পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী একটা দেশের সম্পর্কে বড় একটা নীতিতে পরিবর্তন ইস্যু যখন।

বাংলাদেশে রাজনীতিবিদ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তোলপাড়: 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: তিনি বলেন, আমরা পত্রিকায় দেখলাম আজকে ডয়চেভেলের বরাত দিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট করা হয়েছে-এটা যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এজন্য যে, আজকে বাংলাদেশে যে সংকট সেই সংকটের মূল্যে হচ্ছে এই অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার যে লক্ষ্য, সেই লক্ষ্যটাই এবং গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের মানুষের ওপরে যে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে রাষ্ট্রকে দিয়ে, বাংলাদেশে যে একটা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস গড়ে তোলা হয়েছে বলা যেতে পারে যে, টোটালি একটা ডিপ স্ট্যাট তৈরি করা হয়েছে সেখানে ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশ যারা গণতন্ত্রের কথা বলে সব সময়, গণতন্ত্র আপহোল্ড করার চেষ্টা করে, তাদের কাছে এটা অপ্রত্যাশিত যদি এই নিউজটা সত্যি হয়ে থাকে। আমরা নিশ্চয় এটা আশা করবো, ভারত বাংলাদেশের মানুষের যে গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষা সেই আকাঙ্ক্ষাকে তারা মর্যাদা দেবে। এই দেশে সত্যিকার অর্থেই সব দলের অংশগ্রহণে, সবার সদিচ্ছায় একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে তারা পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করবে। এই কথাটা আমরা কখনোই বলতাম না, বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আমরা দেখতে পারছি যদি নিউজটা সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে বাংলাদেশে রাজনীতির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তারা হস্তক্ষেপ করছে।

ফখরুল বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষের আস্থার ওপরে আস্থা রাখি, তাদের শক্তির ওপর আস্থা রাখি। আমি মনে করি, ভারত দেখবে বাংলাদেশের মানুষ কি চায়? বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যদি তারা (ভারত) কোনো পদক্ষেপ নেয়, সেটা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক এবং সেটা আমরা মনে করি, বাংলাদেশের মানুষের জন্য এবং এই অঞ্চলের মানুষের জন্যও শুভ হবে না বলে আমরা মনে করি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের: আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের ইলেকশন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখন বিভিন্ন দেশের এ অঞ্চলকে ঘিরে ভূরাজনৈতিক কৌশল আছে। সেখানে আমেরিকার একটা স্বার্থ আছে, ভারতেরও আছে। থাকাটা খুব স্বাভাবিক। ওদিকে চীন আছে, একটা বড় শক্তি। 

এদিকে সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এতোদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকদের অনেকটা নিশ্চুপ দেখা গেছে। ভারতের অমন বার্তার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তারা নড়েচড়ে বসেছেন। আবারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে এ আশায় বুক বাঁধছেন তারা। একই সঙ্গে কেউ কেউ বলছেন, এ অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র ভারত। তার মতো উপেক্ষা করে মার্কিনিরা কিছু করবে না এখানে।

ভারতের পররাষ্ট্র মুখপাত্র 

বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের তৎপরতার মধ্যে গত ৩ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে নিজ দেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি।

নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের তৎপরতা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ওই প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার মনে হয়, সেখানে (বাংলাদেশ) বহু পক্ষের তৎপরতার কারণেই হয়তো মানুষজন এ নিয়ে মন্তব্য করছে। এটা নিয়ে মন্তব্য করতে পারে, কিন্তু ভারত হচ্ছে ভারত। বাংলাদেশে যা কিছুই ঘটুক না কেন, তার প্রভাব প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওপর পড়ে মন্তব্য করে অরিন্দম বাগচি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে যা ঘটে তার সঙ্গে আমরা খুব ভালোভাবে জড়িয়ে যাই, তার প্রভাব আমাদের ওপর পড়ে। আমি মনে করি, বাংলাদেশে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কীভাবে চলবে, তা ঠিক করার ভার বাংলাদেশের মানুষের হাতেই ছেড়ে দেওয়া উচিত। 

পরিশেষে..

এটা ঠিক, যে মার্কিনিদের চাপে একরকম চাপে ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। এ বার্তা সত্য কি ভুয়া সেটা পরের কথা। তবে এমন বার্তা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে মাঠে আবারও চাঙ্গা ক্ষমতাসীনরা সেটা এখন দৃশ্যমান। পাশাপাশি বিএনপি ও সমমনাদেরও উপলব্ধি, যে ধারায় তারা আন্দোলন করছেন সে ধারাতে সম্ভবত ভালো কিছু রেজাল্ট তাদের অনুকূলে না-ও আসতে পারে। অনেকেই ইতিমধ্যে তাদের ভাবনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন যে, বিএনপির শীর্ষনেতাদের কথাই রাইট- ‘ক্ষমতার পালাবদলে রাজপথে নেমে আসতে হবে দলমত নির্বিশেষে সবাইকেই।’  

শেয়ার করুন