ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন। শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সুরের ধারা’র শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত এবং ঐতিহাসিক ভাষার গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একুশে বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। বঙ্গবন্ধু যে সাংস্কৃতিক অগ্রগতির আকাক্সক্ষা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একুশে বইমেলা সেই আকাক্সক্ষা পূরণের অন্যতম হাতিয়ার।
তিনি বলেন, সারাবছর বাংলাভাষী মানুষ এই মেলার জন্য অপেক্ষা করেন। এক একটি বাংলা অক্ষর আমাদের যে স্বপ্ন দেখায়, বইমেলার প্রতিটি নতুন বই তেমন বহু স্বপ্নের বীজ বপন করে যায় পাঠকের মনে। খবর বাসস’র।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, এবার বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বইমেলা শুরু হচ্ছে। বর্তমান সরকার বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পৌঁছে দেয়ার জন্য যে অঙ্গীকার করেছে, বাংলা একাডেমি সে অঙ্গীকারের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে নিয়মিত বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ প্রকাশ করছে। ‘আমি মনে করি এক্ষেত্রে আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে এবং প্রযুক্তির পৃথিবীতে মুদ্রিত বইয়ের পাশাপাশি অডিও বুক প্রকাশ এবং বিপনণের বিষয়ও নতুন করে ভাবতে হবে।’
বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো: আরিফ হোসেন ছোটন শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, এ বছর একুশে বইমেলার চারদশক পূর্ণ হচ্ছে। দেশবাসীর সহায়তায় বাংলা একাডেমি সফলতার সঙ্গে এই বইমেলা আয়োজন করে আসছে। গত চল্লিশ বছরে বইমেলা পরিণত হয়েছে বাঙালির বৃহত্তর এক বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবে। একুশে বইমেলা ও বাংলা একাডেমি অবিচ্ছেদ্য শব্দবন্ধ।
সভাপতির ভাষণে সেলিনা হোসেন বলেন, বইমেলাকে কেন্দ্র করে আমাদের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও বাঙালির সংস্কৃতিকে উত্তরোত্তর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
পরে, অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকগণের হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্যের চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন কবিতায় শামীম আজাদ, কথাসাহিত্যে নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী, প্রবন্ধ/গবেষণায় জুলফিকার মতিন, অনুবাদে সালেহা চৌধুরী, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে (যাত্রা/পালা নাটক/সাহিত্যনির্ভর আর্টফিল্ম বা নান্দনিক চলচ্চিত্র) মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক, শিশুসাহিত্যে-তপংকর চক্রবর্তী, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় আফরোজা পারভীন ও আসাদুজ্জামান আসাদ, বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক গবেষণায় সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল ও মো. মজিবুর রহমান, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশ বিজ্ঞানে ইনাম আল হক, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনি/মুক্তগদ্যে ইসহাক খান, ফোকলোরে তপন বাগচী ও সুমনকুমার দাশ।
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত Collected Works of Sheikh Mujibur Rahman এবং প্রাণের মেলায়: শেখ হাসিনা (অমর একুশে বইমেলার ভাষণ সংকলন), সংস্কৃতি ও সদাচার (প্রবন্ধ সংকলন),1971 : A Dairy (কবি সুফিয়া কামালের স্মৃতিকথার অনুবাদ), Confessions of a Believer (মাহবুব উল আলমের বইয়ের অনুবাদ), Footfalls (সৈয়দ শামসুল হকের কাব্যনাট্যের অনুবাদ), Cluster Clouds (রাবেয়া খাতুনের উপন্যাসের অনুবাদ), An Untold Story (রিজিয়া রহমানের উপন্যাসের অনুবাদ), The Glorious Afternoon (সেলিনা হোসেনের উপন্যাসের অনুবাদ) এবং নজরুল ইন্সটিটিউট প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরুল-কথা বইসমূহের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
বইমেলা উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বীরমুক্তিযোদ্ধা এ কে এম বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাংলা ভাষা ও বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন এবং মেলা পরিদর্শন করেন।
আগামীকাল শুক্রবার অমর একুশে বইমেলার ২য় দিন। মেলা শুরু হবে সকাল ১১ টায়, চলবে রাত ৯ টা পর্যন্ত। আগামীকাল সকাল ১১ টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর চলবে।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ: মহাকবি আলাওল শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সাইমন জাকারিয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মিল্টন বিশ্বাস এবং মোহাম্মদ শেখ সাদী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মোঃ আবুল কাসেম।