০৪ জুলাই ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০২:২৬:৩২ পূর্বাহ্ন


সরকার জনসাধারণের অধিকার হরণ করছে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৫-২০২৪
সরকার জনসাধারণের অধিকার হরণ করছে বক্তব্য রাখছেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম


বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকার জনসাধারণের কর্মসংস্থানের মৌলিক অধিকারকে সংকোচিত করে চলেছে। তারা বেকারত্ব দূর ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা মুখে বললেও বাস্তবে চরম কর্মহীনতা বর্তমানে দেশের প্রধান সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবে হকারদের কেন্দ্রীয় সমাবেশে একথা বলেছেন, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

তিনি আরও বলেন, অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতাসীন সরকার মানুষের জীবিকা উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখলে দেশের জনগণও তাদের ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদের চূড়ান্ত সংগ্রাম শুরু করবে। তিনি অবিলম্বে বিকল্প ব্যবস্থা না করে হকারসহ শ্রমজীবী মানুষের ওপর বলপ্রয়োগ ও উচ্ছেদ বন্ধের দাবি জানান।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সংবিধানের ঘোষণা বাস্তবায়নে জীবিকা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বিকল্প ব্যবস্থা না করে কোনো ব্যক্তির ন্যায়সঙ্গত কর্মসংস্থানের অধিকার হরণ করা চলবে না।

বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে গত ২৯ এপ্রিল সোমবার অনুষ্ঠিত এই সমাবেশ শেষে শত শত হকারের একটি মিছিল পুরানা পল্টন মোড় ঘুরে গুলিস্তান ফুলবাড়ীয়া হয়ে ঢাকা ট্রেড সেন্টারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। 

বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আব্দুল হাশিম কবীরের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী, কার্যকরি সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সহ-সভাপতি মঞ্জুর মঈন, আফছার উদ্দিন, সহকারী সাধারণ সম্পাদক আনিস পাটোয়ারি, কেন্দ্রীয় নেতা মো. ফিরোজ, রহিম উল্লাহ্ রাকিব প্রমুখ। 

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে কোনো সাধারণ আয়ের মানুষের পক্ষে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থায় সারাদেশে ক্রমাগত খেটে খাওয়া মানুষের কর্মসংস্থান উচ্ছেদ চলছে। নির্বিচারে হকার, ব্যাটারিচালিত যানবাহন, দিনমজুরদের রুটি-রুজির অবলম্বন বন্ধ করার অভিযান পরিচালনা করছে সরকার। ফলে একদিকে দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতির কষাঘাতে মানুষ জর্জরিত, অন্যদিকে রুটি রুজি বন্ধ হয়ে শ্রমজীবী মানুষ নীরব দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে। 

সমাবেশে থেকে বক্তারা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের লালবাগ বিভাগের বংশাল, কোতোয়ালী, সূত্রাপুর ও সদরঘাট এলাকায় নির্বিচারে হকার উচ্ছেদ ও মালামাল ধ্বংসের প্রতিবাদ জানান। তারা জীবিকা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ না করার দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন। সমাবেশ থেকে বলা হয়, মহান মে দিবসের পূর্বে হকারদের ওপর জলুম-নির্যাতন বন্ধ না হলে আগামী মে দিবসের কেন্দ্রীয় সমাবেশ থেকে আন্দোলনের বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। 

সমাবেশে হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হাশিম কবীর অভিযোগ করেন, উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সর্বত্র ক্ষমতাসীনদের মধ্যে নতুন করে দখল ও বন্টন চলছে। তারই অংশ হিসেবে গরিব খেটে খাওয়া মানুষদের কর্মসংস্থান থেকে উচ্ছেদ করে শত কোটি টাকার চাঁদাবাণিজ্যে নতুন কর্ণধার নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় মানুষকে নিঃস্ব করা হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে পুনর্বাসন বা বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ছাড়া সকল উচ্ছেদ ও জুলুম নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানান।

সমাবেশে হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী বলেন, বাজার পরিস্থিতি আরও বেসামাল হচ্ছে। খেটে খাওয়া মানুষ বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে কোনো মতে বাঁচতে পারছে না। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও মানুষের কর্মসংস্থান কেড়ে নিচ্ছে। তিনি সারাদেশের মেহনতি জনতাকে জুলুমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। 

তিনি বলেন, চলমান হকার উচ্ছেদ বন্ধ না হলে লক্ষাধিক হকার পথে বসবে। সরকার বড় বড় পুঁজির মালিকদের নানান সুবিধা দিলেও ক্ষুদ্র পুঁজির এ ব্যবসার উপর আঘাত করছে। হকারি করে জীবিকা নির্বাহ করা একটি প্রচলিত পেশা। নগর-জনপদের বিকাশের সাথে সাথে এই পেশার ব্যাপ্তি এবং পরিসর আজকের রূপ লাভ করেছে। একই সাথে দীর্ঘ সময় ধরে এই দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের রুটি-রুজির অর্থনৈতিক কাজের সাথে নানান কায়েমি স্বার্থ জড়িত হয়েছে। নগর উন্নয়নে হাজার হাজার প্রকল্প এবং বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও কখনই বিপুল হকার জনগোষ্ঠীর জন্য স্থায়ী পুনর্বাসন, টেকসই প্রকল্প গৃহীত হয়নি।

শেয়ার করুন