অর্থনৈতিক সংকটের এ কঠিন সময়ে বাংলাদেশের প্রাধিকার এখন ব্যয় সংকোচন, অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে সব ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্র সাধন। মুদ্রাস্ফীতি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ এখন সবচেয়ে জরুরি। বিদ্যুৎ জ্বালানির দক্ষ পরিমিত ব্যবহার করার বিকল্প নেই। বিদেশি ঋণনির্ভর দেনার দায় বাড়ছে। আর তাই এই মুহূর্তে অতি প্রয়োজনীয় ছাড়া নতুন করে মেগা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার পূর্বে বিস্তারিত পরীক্ষা পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশক্সকাজনকভাবে কমছে। নতুন করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ শুরুর ইঙ্গিত মিলছে। তবে এটা জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য এটি সাময়িক কৌশল কি না সন্দেহ আছে।
ইতিপূর্বে ক্যাসিনোকাণ্ডে ধরাপড়া অধিকাংশ দুর্নীতিবাজ বহাল তবিয়তে ফিরেছেন। দুর্নীতির শিরোমণি প্রাক্তন পুলিশ প্রধান দেশ ছেড়ে বিদেশে অবস্থান করছেন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শূন্য করে। প্রাক্তন সেনাপ্রধানের দুর্নীতিবিষয়ক তদন্ত চলছে ঢিমে তালে। প্রতিদিন বড় বড় চোরদের মুখোশ খুলে যাচ্ছে। আতঙ্কে আছে দুর্নীতির বরপুত্ররা। অবশ্য পূর্বের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে বড় দুর্নীতিবাজরা আইনের ফাঁকফোকর গোলে বেড়িয়ে যায়। এবার ব্যতিক্রম হবে তেমন ইঙ্গিত দেখছি না।
যাহোক বলছিলাম নতুন করে মেগা প্রকল্প নেওয়ার ব্যাপারে সতর্কতার। ইতিমধ্যে সম্পাদিত মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে, পায়রা, রামপাল, মাতারবাড়ী প্রকল্পগুলোর সুফল ফলতে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলসংযোগ অথবা কর্ণফুলী টানেলের কাঙ্ক্ষিত সুবিধা এখনো পাওয়া যায়নি। যোগাযোগ খাতে চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে ঢাকা বাইপাস সড়ক, আশুলিয়া থেকে চন্দ্রা এলিভেটেড এক্সপ্রেস সড়ক, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস সড়কের অবশিষ্ট কাজ, মেট্রোরেলের চলমান কাজ, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, কক্সবাজার, সৈয়দপুর বিমানবন্দর সম্প্রসারণ, ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে সম্প্রসারণ কাজ, ঢাকা-রংপুর হাইওয়ে নির্মাণ এবং ভাঙ্গা-পায়রা, ভাঙ্গা-মোংলা হাইওয়ে নির্মাণকাজ ছাড়া আমি এ মুহূর্তে যোগাযোগ খাতে বিদেশি ঋণনির্ভর প্রকল্প অন্তত তিন-পাঁচ বছর গ্রহণ না করে সংরক্ষণকাজে মনোনিবেশ জরুরি।
একইভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা গ্রিড নন-গ্রিড মিলিয়ে ৩০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাওয়ায় রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের অবশিষ্ট কাজের বাইরে শুধু মাতারবাড়ী এবং পায়রায় দ্বিতীয় ইউনিট অন্য কোনো নতুন প্রকল্প হাতে না নেওয়ার সুপারিশ করবো। বরং জ্বালানি বিদ্যুৎখাতের প্রাধিকার হওয়া উচিত কয়লা ক্ষেত্রগুলো উন্নয়নের ঝুলে থাকা সিদ্ধান্ত নেওয়া, জলে স্থলে গ্যাস তেল অনুসন্ধান জোরদার করা। বাংলাদেশ কিন্তু তীব্র জ্বালানি সংকটে আছে। ব্যতিক্রমী কিছু না করলে জ্বালানি সংকটের কারণে অর্থনীতি ভেঙে পড়তে পারে। জ্বালানি বিদ্যুতের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করতে স্রেডা, বার্ক সঠিক পেশাদারদের দিয়ে সাজাতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষত সৌরবিদ্যুতের অবদান বাড়াতে পথের বাধা দূর করতে হবে। নিজস্ব দক্ষ জনবলের সংস্থান করে ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীনের জনবল ব্যবহার সীমিত করতে হবে। সরকারপ্রধানের আন্তরিকতা থাকলেও পরামর্শকরা সঠিক পরামর্শ দিচ্ছেন কি না জানি না। ঘুরে দাঁড়াতে হলে ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে ঐকমত্য অপরিহার্য। সময় কঠিন, সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। জনমনে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হচ্ছে। বিস্ফোরণ ঘটলে কারো পরিণতি শুভ হবে না।