গত ২২ সেপ্টেম্বর রোববার জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট ও মানবাধিকারকর্মী কাজী ফৌজিয়া রচিত নিউইয়র্কের চিঠি গ্রন্থের প্রকশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তার নিউইয়র্কের বন্ধু ও শুভাকাক্সক্ষীরা। অতিথি হিসেবে বইটি নিয়ে আলোচনা করেন অধ্যাপক দীনা অধ্যাপক দীনা সিদ্দিকী, কবি কাজী জহিরুল ইসলাম, সাংবাদিক নজরুল ইসলাম মিঠু, সাংবাদিক ও অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু। অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন দেশ পত্রিকার সম্পাদক মিজানুর রহমান, টাইম টেলিভিশনের সিইও আবু তাহের, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি মনোয়ার হোসেন এবং কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট রওশন হক।
অনুষ্ঠানের শুরুতে লেখকের জীবনী পড়ে শোনান জাতিসংঘে কর্মরত মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ এবং ঊনবাঙালের সভাপতি মুক্তি জহির। দীপুর অনবদ্য সঞ্চালনায় গ্রন্থ থেকে অংশবিশেষ পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী আহসান হাবীব, যা দর্শকদের মোহাবিষ্ট করে। এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে ঢাকা থেকে একটি শুভেচ্ছা বাণী পাঠান লেখক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার যেটি পাঠ করেন সঞ্চালক দীপু।
কাজী ফৌজিয়া ১৯৬৮ সালের ৮ ডিসেম্বর গাজীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হারিছ আলী কাজী ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যাংকার। তার মায়ের নাম ফরিদা বেগম। পাঁচ ভাইবোনের মধ্য কাজী ফৌজিয়া সবার বড়। ফৌজিয়ার পিতা হারিছ আলী কাজী ছিলেন মওলানা ভাসানীর একনিষ্ঠ অনুসারী। আমৃত্যু ভাসানীর আদর্শের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শিশুকাল থেকেই ফৌজিয়া পিতার সান্নিধ্যে থেকে নিজেও ভাসানীর অনুসারী হয়ে ওঠেন। এই আদর্শই তাকে নির্যাতিত, নিপিড়ীত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করে, প্রতিনিয়ত তাড়িত করে।
পিতার কাছ থেকে পাওয়া সমাজবাদী আদর্শে বড়ো হওয়া কাজী ফৌজিয়া এক সময় পাড়ি জমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। নানান স্ট্রাগলের মধ্য দিয়ে নিজে যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, এ অভিজ্ঞতার আলোকে আরো বহু মানুষকে প্রতিষ্ঠিত হতে সহযোগিতা করেছেন। দেশে ও দেশের বাইরে যেখানেই থেকেছেন, থাকছেন সব সময় তার চিন্তার কেন্দ্রে সুদৃঢ় ছিল সাম্য ও মানবিক বোধ। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার ইমিগ্র্যান্টদের স্ট্রাগল নিয়ে কাজ করা সংগঠন ড্রামের কর্মসূচি পরিচালক হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এ দায়িত্ব পালনকালে তিনি দাফতরিক কর্মপরিধি ছাড়িয়ে প্রায়শই ঝাঁপিয়ে পড়েন বিপদগ্রস্ত মানুষকে উদ্ধারের কাজে। অন্যদের মতো ৯টা-৫টা অফিস করা কখনোই তার হয়ে ওঠে না। যখনই অসহায় বিপদগ্রস্ত মানুষের ডাক আসে, হোক তা মধ্যরাতে, কাজী ফৌজিয়া তখনই হাজির। তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বহু কাগজপত্রহীন অবৈধ অভিবাসী এদেশে বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, বহু বেওয়ারিশ মৃতদেহ পৌঁছে গেছে স্বদেশে, তাদের প্রিয়জনের কাছে।
কাজী ফৌজিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বাঙালি সমাজের একজন মধ্যমণি। মানুষের অধিকার আদায়ে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা কখনো কখনো এখানকার প্রশাসনের কাছে দুশ্চিন্তার কারণ হয়েও দাঁড়ায়। তিনি একাধিকবার মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলার আমন্ত্রণ পেয়েছেন জাতিসংঘ সদর দফতরে। স্ট্রাগল, সাফল্য ও মানুষের অধিকার আদায়ে আজন্ম সংগ্রামী এ বর্ণাঢ্য মানুষটির জীবন নিয়ে বেশ পিএইচডির গবেষণাও হয়েছে।
কাজী ফৌজিয়া লেখক নন। তিনি নান্দনিক ভাষায় ফিকশন লেখেন না। নিউইয়র্কের চিঠি গ্রন্থে তিনি লিখেছেন তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা, যা পড়ে আমরা কাঁদি আবার সাহসে বুক বাঁধি, আমরাও পারি, বাঙালিরা হারতে জানে না, কাজী ফৌজিয়ার দিকে তাকিয়ে আমরা সেই শিক্ষা নিই।
অনুষ্ঠানে বক্তারা কাজী ফৌজিয়াকে একজন সাহসী, পরোপকারী এবং সত্যবাদী মানুষ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি কমিউনিটির জন্য এক অনুকরণীয় অনন্য দৃষ্টান্ত।
গ্রন্থের বিভিন্ন অংশের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরে কাজী জহিরুল ইসলাম বলেন, এ বইয়ের মূলশক্তি হলো এতে কোনো ধার করা বিষয় নেই, নিজের জীবনের সংগ্রাম ও যুদ্ধের কথা তিনি অকপটে প্রকাশ করেছেন, কাঠামো হিসেবে বেছে নিয়েছেন বন্ধুকে লেখা চিঠির ফর্ম। এটি যে একটি রোমান্টিক গ্রন্থও এই কথাটিও তিনি উল্লেখ করেন।