যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। জনসমর্থনের দিক থেকে জাতীয় জরিপগুলোর গড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে মাত্র ১ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনের আগে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জনসমর্থন নিয়ে জরিপ করেছে। সে জরিপগুলোর গড় হিসাবে দেখা গেছে, সামান্য ব্যবধানে কমলা হ্যারিস এগিয়ে রয়েছেন। এবিসি নিউজের ফাইভথার্ট এইটের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কমলার সমর্থন ৪৮ শতাংশ আর ট্রাম্পের ৪৬ শতাংশ।
গত জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে জো বাইডেন সরে যাওয়ার পর কমলাকে সমর্থন দেন। এর পর থেকে কয়েক সপ্তাহ দ্রুত তার সমর্থন বেড়েছিল। এক পর্যায়ে গত আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের চেয়ে ৪ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে সমর্থনের বিষয়টি অনেকটাই স্থিতিশীল হয়ে গেছে। গত ১০ সেপ্টেম্বর কমলা ও ট্রাম্পের টেলিভিশন বিতর্কের পরও সমর্থনে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি।
জাতীয় জরিপে একজন প্রার্থী কতটা জনপ্রিয়, সে বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও নির্বাচনের ফলাফলের সঠিক চিত্র এ থেকে পাওয়া যায় না। এবারের নির্বাচনে সাতটি দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এ সাত অঙ্গরাজ্যের মধ্যে মিশিগান, উইসকনসিন ও নেভাদায় ১ পয়েন্টে এগিয়ে কমলা। অন্যদিকে পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলিনায় ১ পয়েন্টে এগিয়ে ট্রাম্প। জর্জিয়া ও অ্যারিজোনায় ২ পয়েন্টে এগিয়ে ট্রাম্প।
ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার ইমারসন কলেজের এক জরিপে দেখা গেছে, কমলা ১ পয়েন্টে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে। কমলার সমর্থন ৪৯ শতাংশ আর ট্রাম্পের ৪৮ শতাংশ। তবে গত বুধবার ফক্স নিউজের এক জরিপে দেখা যায়, কমলায় চেয়ে ট্রাম্প ২ পয়েন্টে এগিয়ে। ট্রাম্পের সমর্থন ৫০ শতাংশ আর কমলার ৪৮ শতাংশ। বুধবার প্রকাশিত পৃথক দুটি জরিপে অবশ্য কমলাকে এগিয়ে রাখা হয়। এর মধ্যে ম্যারিস্ট কলেজের জরিপে কমলা ৫ পয়েন্টে এগিয়ে। ইকোনমিস্ট ও ইউগভের জরিপে কমলা ৪ পয়েন্টে এগিয়ে। অন্য বেশ কয়েকটি জরিপে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এর মধ্যে হার্ভার্ডের জরিপে কমলা ২ পয়েন্টে এগিয়ে। এবিসি ও ইপসসের জরিপেও একই ব্যবধানে এগিয়ে কমলা। তবে এনবিসির জরিপে দুই প্রার্থীর ৪৮ শতাংশ করে সমান সমান জনসমর্থন রয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের জরিপ
নির্বাচনের আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি। এ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটলগ্রাউন্ড বলে পরিচিত ৭টি রাজ্যের মধ্যে চারটিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন ডেমোক্রেট দলের প্রাার্থী কমালা হ্যারিস। অন্যদিকে ট্রাম্প সামান্য এগিয়ে আছেন দু’টি রাজ্যে। ওয়াশিংটন পোস্ট-শচার স্কুল পরিচালিত জরিপে ২১ অক্টোবর সোমবার এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। কমালা হ্যারিস এগিয়ে আছেন জর্জিয়া, মিশিগান, পেনসিলভ্যানিয়া ও উইসকনসিনে। ট্রাম্প এগিয়ে আছেন অ্যারিজোনা এবং নর্থ ক্যারোলাইনাতে। নেভাদায় তারা দু’জনে সমান সমান সমর্থন পেয়েছেন। এর পরিমাণ শতকরা ৪৮ ভাগ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য হিল। এতে বলা হয়েছে জর্জিয়াতে ডেমোক্রেট প্রার্থী কমালা হ্যারিসকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৫১ ভাগ মানুষ। ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৪৭ ভাগ। অন্যদিকে উইসকনসিন রাজ্যে কমালা হ্যারিসকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৫০ ভাগ ভোটার। অন্যদিকে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৪৭ ভাগ ভোটার। মিশিগানে তাদের ব্যবধান দুই পয়েন্টে। মিশিগানে কমালা হ্যারিসকে জয়ী করার জন্য প্রচারণায় নেমেছেন উইসকনসিনের গভর্নর টনি এভারস এবং মিশিগানের গভর্নর গ্রেশ্চেন হোয়াইটমার। পেনসিলভ্যানিয়াকে নিজেদের দখলে নেয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দুই প্রার্থীই। কারণ, এখানেই আছে ১৯টি ইলেক্টোরাল ভোট। এখানে দুই পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন কমালা হ্যারিস। তাকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৪৯ ভাগ ভোটার। ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৪৭ ভাগ। অন্যদিকে ২০২০ সালের নির্বাচনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য অ্যারিজোনায় সামান্য ব্যবধানে জয়ী হন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এবারকার নির্বাচনে বড় ইস্যু হয়েছে অভিবাসন। এই ইস্যুকে সামনে এনে এই রাজ্যে জয়ের লক্ষ্য স্থির করেছেন ট্রাম্প। বর্তমানে সেখানকার শতকরা ৪৯ ভাগ ভোটার তাকে সমর্থন করছেন। কমালা হ্যারিসকে সমর্থন করছেন ৪৬ ভাগ। নর্থ ক্যারোলাইনাতে শতকরা তিন পয়েন্টে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। এই রাজ্যে শতকরা ৫০ ভাগ ভোটার সমর্থন করেছেন তাকে। কমালা হ্যারিসকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৪৭ ভাগ ভোটার। এসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে ওয়াশিংটন পোস্টের ওই জরিপে। ২৯ শে সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ই অক্টোবর পর্যন্তংং সাতটি সুইং স্টেটের ৫০১৬ জন ভোটারের ওপর চালানো হয়েছে এই জরিপ।