ভুয়া নিউজের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন, হুঙ্কারের পাল্লায় পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। হচ্ছেন হয়রানি আর মাধররের শিকার। শিকার হচ্ছে গ্রেফতারের, পড়ছেন চরম হতাশায়। এসব খবর জানা গেছে রাজনীতির মাঠে থেকে।
শেখ হাসিনার হুঙ্কার, অতপর...
কয়েকদিন পরপরই শেখ হাসিনার টেলিফোনে কথোপকথনের অডিও ফাঁস হচ্ছে। আর এসব নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম যেমন সরব হয়ে উঠে তেমনি রাজনীতির মাঠ হয়ে উঠে উত্তপ্ত। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এমন তথ্য নিয়ে শুরু করে টক-শো..চলে বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি। এছাড়া এমন তথ্য নিয়ে ইউটিউবে চলে ভুয়া খবরের নানান ধরনের প্রতিবেদন। সম্প্রতি বিশেষ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর টেলিফোনে কথোপকথনের একটি চাঞ্চল্যকর অডিও ফাঁস হয়েছিল। গত সেপ্টেম্বরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেলিফোনে কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস হয়েছিল। গণমাধ্যমর খবরে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তানভীর নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ফোনালাপে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি দেশের খুব কাছাকাছি আছি। যাতে আমি চট করে ঢুকে পড়তে পারি।’
আ.লীগকে আর পায় কে
‘আমি চট করে ঢুকে পড়তে পারি।’.... শেখ হাসিনার বলেছেন? আর এধরনের খবরেই আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা হয়ে উঠে চাঙ্গা । রাজনীতির মাঠে সরল বিশ্বাসে নেতাকর্মীরা পুলকিত হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বলাবলি করতে থাকে নেত্রী বলেছেন, জানিয়েছেন ‘আমি চট করে ঢুকে পড়তে পারি। কেউ কেউ এটাকে অভয়ের বাণী হিসাবে প্রচার করে বলতে থাকে নেত্রী তো বলে দিয়েছেন ‘আমি চট করে ঢুকে পড়তে পারি।
ভুয়া নিউজের পরিণতি, তানভীর হলো বহিষ্কার
এদিকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন স্থানে থাকা নেতাকর্মীদের সতেজ বা চাঙ্গা রাখতে যে তানভীর শেখ হাসিনার ফোনালাপটি ফাঁস করে দেয় তার কপালে জুটেছে বহিষ্কার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে তাকে বহিষ্কার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামীলীগ জ্যাকসন হাইটস ইউনিট কমিটি-এর সাধারণ সম্পাদক মো. তানভীর কায়সার। নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি রফিকুর রহমান একটি লিখিত আদেশে মো. তানভীর কায়সারকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারাদেশে উল্লেখ করা হয় বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও তানভীর কায়সার দলের নীতি, আদর্শ, চেতনা ও মূল্যবোধ বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকায় তাকে দলীয় সিদ্ধান্তে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে বাংলাদেশেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার পর মাঠে যারা এটি নিয়ে তোলপাড় করেছে তাদেরও আইন শৃংখলা বাহিনী রেখেছে কঠোর নজরদারিতে।
ফেইক নিউজের পেছনে নেতাকর্মীদের দৌড়-ঝাঁপ ও পরিণতি
এদিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সামাজিক মাধ্যমে একটি খবর ছড়িয়ে দেয়া হয় যে, এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘শেখ হাসিনা এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’ এমন খবরে তোলপাড় বহে যায় দেশে-বিদেশে। পুলকিত বোধ করেন মাঠে-ঘাটে লুকিয়ে থাকা দেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। চটুল প্রচার পায় ট্রাম্প নির্বাচিত হলেই কেল্লাফতে। আর পায় কে আওয়ামী লীগকে। এমনভাবে তারা প্রচার-প্রচারণা চালাতে থাকে যেনো ঘটনা হুবুহু সত্যি। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়ায় শেষমেষ পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনও মুখ খুলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন হবে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
আসল তথ্য তুলে ধরলো এএফপি
অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের পাশাপাশি আরো অনেক পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আশ্বস্থ করে বলেছেন যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন হবে না। কিন্তু তাতেও আ.লীগের নেতাকর্মীদের শান্ত করা যায়নি। তারা হাটে মাঠে ঘাটে প্রচারণা চালাতেই থাকে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’ কিন্তু এমন খবরটি যে ভুয়া তা তুলে ধরেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। তারা খবর যাচাই বাছাই করে জানিযেছে যে, শেখ হাসিনা এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে ছড়িয়ে পড়া এ কথাটি সত্য নয়। হাসিনাকে নিয়ে এ ধরনের কোনো কথা বলেননি ট্রাম্প। এক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় বার্তা সংস্থা এএফপি। সংস্থাটির খবর অনুযায়ী, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে যে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘শেখ হাসিনা এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’ কিন্তু ওই সাক্ষাৎকারে এমন কোনো কথা বলেননি তিনি। এমনকি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে একটি কথা উচ্চরণও করেননি যুক্তরাষ্ট্রের হবু এই প্রেসিডেন্ট।
বিপাকে নেতাকর্মীরা
এদিকে ট্রাম্পের ছবি নিয়ে মিছিলের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা এমন একটি খবরেও তোলপাড় হয়ে যায় দেশে। ১০ নভেম্বর নুর হোসেন দিবসে এমন কর্মসূকি ডাকা হয় বলে আ.লীগের নেতাকর্মীদের কাছে খবর চলে যায়। এমন খবরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দূরে থাক পুরো বঙ্গবন্ধু এলাকাই চলে যায় বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দখলে। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আশার দ্বিতীয় দিনের মাথায় ফাঁস হলো শেখ হাসিনার আরেকটি অডিও কল । এবার অডিওর অপর প্রান্তে কে ছিল তা অবশ্য এখনো নিশ্চিত হওয়া যায় নি। এতে বলা হয় যে, অডিও কলে ট্রাম্পের ছবি নিয়ে মিছিলের নির্দেশ দিলেন শেখ হাসিনা। কথিত ফোনালাপ ফাঁসের পর একই ধরনের নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি ওঠে। দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার স্বাক্ষর করা কথিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটির একটি ছবিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার দেখতে পেয়েছে, আওয়ামী লীগের প্যাডে দপ্তর সম্পাদক কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিই দেননি। ১০ নভেম্বর নেতা-কর্মীদের গুলিস্তানে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দলটির ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেওয়া হলেও তাতে ট্রাম্পবিষয়ক কোনো নির্দেশনা ছিল না। অথচ ট্রাম্পের ছবি নিয়ে মিছিলের নির্দেশ দিলেন শেখ হাসিনা এমন খবরটি প্রচার করে দলীয়ভাবেও প্রচারের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ে মুখে ফেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ ত্যাগি যারা ১৭ বছরে হাইব্রিডদের দাপটে অসহায় ছিল। কারণ সেই হাইব্রিডরা এখন ভোল পাল্টিয়ে চলমান রাজনীতির সাথে মিসে গেছে। আর এতে করে মিথ্যা প্রচার-প্রপাগান্ডায় হয়রনি নির্যাতনসহ নানান ধরনের মামলা মোকাদ্দমায় জড়িয়ে পড়ছে। এনিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ পাশাপাশ হতাশা-বিপর্যয়সহ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন।
অন্যদিকে শহীদ নূর হোসেন দিবস ঘিরে আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচি উপলক্ষে মঞ্চ নির্মাণের দৃশ্য বলে দাবি করে ৯ নভেম্বর রাতে ফেসবুকে কিছু ছবি প্রচার হয়। রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধান দেখা গেছে ,ওই ছবিগুলো ছিল জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ৮ নভেম্বর রাজধানীর পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির তৈরি করা মঞ্চের ছবি।
এবার ভুয়া প্রলোভন
এদিকে গণমাধ্যমের খবর দেখা গেলো রোববার মধ্যরাতের পর থেকে রাজধানীর শাহবাগে একের পর এক আসতে থাকে বাস, মাইক্রোবাস ও পিকআপ ভ্যান। সেগুলোয় যাত্রী ছিলেন শত শত মানুষ। হঠাৎ এত যানবাহন ও মানুষের উপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সবাই কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। খোঁজ নিয়ে গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা দেখলেন জানলেন যে, শাহবাগে একটি মহাসমাবেশ হবে। আর সেখানে যোগ দিলে বিনা সুদে মিলবে এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ! এমন প্রচারণায় প্রলুব্ধ হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন হাজারো মানুষ। তবে তারা সবাই প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। তাই বুঝিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয়। গত ২৫ নভেম্বর সোমবার সকাল পর্যন্ত এ রকম শতাধিক যানবাহন এলেও শাহবাগে তাদের জমায়েত করতে দেওয়া হয়নি। আরো খোঁজ নিয়ে জানা গেলো ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের আয়োজনে তারা এসেছেন। তাদের বলা হয়েছে, বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল অর্থ ফেরত আনবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই টাকায় দেওয়া হবে ঋণ। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, ঋণের আবেদন ফরম পূরণের নামে এক হাজার করে টাকাও নেওয়া হয়েছে।
ভুয়া নিউজের খেসারত দিচ্ছো আ.লীগের নেতাকর্মীদের
এমনসব ভুয়া খবর প্রলোভনের যাতাকলে পড়ে অতি উৎসাহী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন মহাবিপাকে। জানা গেছে, এমনসব খবর প্রচার করে উত্তেজিত করে তোলার খেসারত দিতে হচ্ছে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকমীদের। কেননা ৯ নভেম্বর রাতেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবিসংবলিত প্ল্যাাকার্ডসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ গণমাধ্যমে জানায়, অবৈধভাবে মিছিল ও সমাবেশের চেষ্টার সময় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ায়, গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক্সে একটি পোস্ট করেছেন। আদতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ট্রাম্প এক্সে কোনো পোস্টই করেননি। রিউমার স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, ট্রাম্পের নাম ব্যবহার করে তৈরি একটি ‘ফ্যান অ্যাকাউন্টের’ স্ক্রিনশট ব্যবহার করে এ দাবি ছড়ানো হয়েছে। আবার ‘তাজা নিউজ’ নামের একটি চ্যানেল থেকে ১০ নভেম্বর একটি ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করা হয়, সমন্বয়কদের পিটিয়ে সমাবেশস্থল দখলে নিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এই ভিডিও চার লাখের বেশি দেখা হয়েছে। অথচ এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আর এতে হঠ্যাৎ গর্জে উঠা ইউ টিউর চ্যানেলের মালিকরা লাভবান হলেও, বিভ্রান্তির শিকার হন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আর এমন ধরনের ভুয়া নিউজের প্লাল্লায় পড়ে আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহী নেতাকর্মীরা দিনের পর দিন আরও নিংস্ব হয়ে পড়ছে।