০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:৩০:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


তরুণদের নতুন দল : স্বাগত বিএনপির, উদ্বিগ্ন জামায়াত
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০১-২০২৫
তরুণদের নতুন দল : স্বাগত বিএনপির, উদ্বিগ্ন জামায়াত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ


তরুণদের নিয়ে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের তোড়জোড়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে জামায়াতে ইসলামি। তবে এব্যাপারে বিএনপি’র মধ্যে নেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বরং নতুন দলকে বলা যায় একধররের স্বাগতই জানাচ্ছে বিএনপি’র হাইকমান্ড। এতে করে জামায়াত আরো উৎকণ্ঠা বেড়ে গেছে। 

এসব তথ্য পাওয়া গেছে রাজনৈতিক মাঠ পর্যবেক্ষণ করে। দেশে পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের আগমনের বার্তা এখন সর্বত্র। তরুণদের বিশেষ করে ২৪’র ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারীদের নিয়ে এই দল গঠনের কথা। তাদের নেতৃত্বেই হবে এ দল- এমনটাই শোনা যাচ্ছে সর্বত্র। আর এমন দল গঠনের সার্বিক প্রক্রিয়া হচ্ছে বলা যায় জাতীয় নাগরিক কমিটি’র ছাতার নিচে। বলা হচ্ছে, তরুণদের এই দল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে নতুন দেশ গড়তে সংকল্প। জাতীয় নাগরিক কমিটি রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে সারাদেশে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড খুবই দ্রুততার সাথেই করছে বলে শোনা যাচ্ছে। ধরে নেয়া হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চেতনাকে লালন করে তাদের হাত ধরেই জাতীয় নাগরিক কমিটি তাদের সব কর্মকাণ্ড। যদিও বলা হচ্ছে নাগরিক কমিটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হবে না। এটি একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে বলে আপাতত আশ্বস্ত করা হচ্ছে। কিন্তু আবার এটা লক্ষ্য করা গেছে এই নাগরিক কমিটির ব্যানারেই একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে দেশের থানা ও উপজেলা পর্যায়ে এখন কমিটি করছে তারা। এ পর্যন্ত সব কমিটি মিলিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫০৮, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে রিপোর্টে দেখা যায়। 

নতুন দলে বিচলিত নয় তারেক রহমান

এদিকে নতুন একটি দল গঠন হতে যাচ্ছে- কেউ বলছে এটা হবে কিংস পার্টির আদলে, কারো করে মতে মাইনাস টু-এর পক্রিয়ায় এই দল কোনো মহলের আর্শিবাদপুষ্ট হবে। এমন দল গঠনের খবরে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর বের হয় যে, দেশে কিংস পার্টির আদলেই হতে যাচ্ছে নতুন দল। খোদ বিএনপি’র কেউ কেউ এনিয়ে গভীর চিন্তায় পড়ে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কিন্তু সেই বিএনপি’রই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এব্যাপারে মুখ খুলেন। সাফ জানিয়ে দেন যে, নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। তিনি গণতন্ত্রের ভাষাতেই বলেছেন, দেশে প্রয়োজনে নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটবে। এটি গণতান্ত্রিক রীতি। সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দলের উদ্যোগকে স্বাগত জানান তিনি। তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রয়োজনে বিএনপি সব গণতান্ত্রিক উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। বিএনপি তার জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত সব পরিস্থিতিতে সব সময় বহু দল-বহুমতের চর্চার পক্ষে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্বচ্ছ। জনগণ কোন রাজনৈতিক দলকে গ্রহণ করবে কিংবা বর্জন করবে, নির্বাচনের মাধ্যমে সেই রায় দেবে। কিন্তু যারা জনগণের আদালতের মুখোমুখি হতে ভয় পায় অথবা তাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে, তারাই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।

দুদুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের উদ্দেশে এক সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘আপনারা এত ভয় পাচ্ছেন কেন? এত বড় একটা গণঅভ্যুত্থান করেছেন। মানুষ তো আপনাদের এমনিই ভোট দিবে। নির্বাচন হলে ওই হিসাবে তো আপনাদের জেতার কথা।’ ফলে বোঝা যাচ্ছে নাগরিক কমিটির ব্যানারই হোক আর যেভাবেই হোক কেনো নয়া দলের ব্যাপারে বিএনপি’র মোটেই মাথাব্যাথা নেই। 

উদ্বিগ্ন জামায়াত

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিএনপি’র মতো দল নতুন রাজনৈতিক দল বা প্রেসার গ্রুপ গঠনের খবরে বিচলিত না হলেও জামায়াতে ইসলামী ঠিকই উদ্বিগ্ন। বলা যায়, তারা নাগরিক কমিটির ব্যানারে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের তৎপরতায় ভীষণ চিন্তিত। এর পেছনে খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চেতনাকে লালন করে তাদের হাত ধরেই জাতীয় নাগরিক কমিটি’র পেছনে কাজ করছে আসলে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) নেতারা। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করে একদল নেতাকর্মী ২০১৯ সালে বেরিয়ে এসে জন-আকাঙ্খার বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন মঞ্চ গঠন করেন, যা পরে রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’-এবি পার্টি নামে আত্মপ্রকাশ করে ২০২০ সালের ২ মে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ২১ আগস্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেয়ে চমক দেখায় এবি পার্টি। এই এবি পার্টি’র সদস্যসচিব হচ্ছেন মজিবুর রহমান মঞ্জু। এদিকে ২০১৮ সালে একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়ে জামায়াত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। অন্যদিকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকার জন্য দলটিকে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক। ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এই আইনজীবী ব্যারিস্টার রাজ্জাককে প্রধান উপদেষ্টা করার ঘোষণা দেয় এবি পার্টি। ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘদিন ধরেই ব্রিটেনে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে অনলাইনে দলীয় ফোরামে অংশ নিতেন। তবে এবি পার্টি’র প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরেছেন। আর তার এই ফিরে আসা ও তাৎক্ষণিক একটি বক্তব্য নিয়েও জামায়াত উদ্বিগ্ন। তার এই ফিরে আসা নিয়ে শোনা যায় অনেক ধরনের কথা। সমসাময়িক রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে কারো কারো অভিমত। কেননা তিনি দেশ পুনর্গঠনের জন্য ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। তার এই ডাকের ধাক্কা জামায়াতকে আঘাত করতে পারে বলে শোনা যাচ্চে। বলা হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং এর পাশাপাশি তার অনেক বক্তব্য চিন্তা চেতনা হয়তবা জামায়াতের রাজনীতিইে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অনেক ধারণা করেন নাগরিক পার্টির ব্যানার এবি পার্টির পাশাপাশি ব্যারিস্টার রাজ্জাকও ভূমিকা রাখবেন। এতে জামায়াতই সঙ্গত কারণে বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে যখন কি-না সেই জামায়াত নিজেকে বাংলাদেশে একমাত্র দেশপ্রেমিক দল বলে প্রচার করে বির্তকের সৃষ্টি করেছে। কেননা এই দলটি এখনো পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের তাদের কর্মকান্ড নিয়ে এখনো ক্ষমা চায়নি। অথচ ২০১৮ সালে একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়ে জামায়াত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক। 

জানা গেছে, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক অনেকবারই জামায়াতকে একাত্তরের ভূমিকার জন্য বারবার ক্ষমা চেয়ে রাজনীতি করার কথা বলেছিলেন। সেই রাজ্জাক যদি নাগরিক কমিটির ব্যানার ধরে এসব কথা বলে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দিকে যেতে চান আর জামায়াতের আসল চেহারা তুলে ধরেন তাহলে তো মহাবিপদ। আর সেজন্য জামায়াত নাগরিক কমিটির কর্মকান্ডে প্রথমে উৎফুল্ল হলেও এখন চুপসে আছে।

মজিবুর রহমান মঞ্জু পশ্চিমা কানেকশান

এদিকে একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করে একদল নেতাকর্মী ২০১৯ সালে বেরিয়ে এসে মজিবুর রহমান মঞ্জু’র নেতৃত্বে এবি পার্টি’ নিয়েও জামায়াতে এলার্জি আছে। এই দলটির সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভালো বোঝাপাড়ার কথা শোনা যায়। শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে পশ্চিমারা এখানে এসে প্রায়শই এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু’র সাথে বৈঠক করলেও জামায়াতে সাথে করেনি। প্রথমে দু’একটি বৈঠক করলে পশ্চিমারা জামায়াততে বলা যায় পাশ কেটে এবি পার্টির সাথে বৈঠক করতো।

অতি সম্প্রতিও দেখা যাচ্ছে পশ্চিমাদের বিভিন্ন প্রতিনিধি বাংলাদেশে এসে এবি পার্টির সাথে বেশ কয়েকজনের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে, যা জামায়াতের জন্য ঈষর্ণীয় হয়ে উঠেছে। কেননা এই এবি পার্টিই নাগরিক কমিটি’র হাইকমান্ড সকল কর্মকাণ্ডে নেপথ্যে কাজ করছে। জামায়াতের হাইকমান্ড মনে করে নাগরিক কমিটির কর্মকান্ড বিএনপি’র চেয়ে তাদেরই বেশি ক্ষতি করবে। আর সেক্ষেত্রে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকও যদি নড়েচড়ে বসেন তাহলে জামায়াতের জন্য সুখকর হবে না, কেননা ইতোমধ্যে বিএনপি’র সাথেও চরম তিক্ততা দেখা দিয়েছে দলটির সাথে। জামায়াত আসলে চিন্তিত ব্যারিস্টার রাজ্জাকের নয়া মিশন নিয়ে...।

শেয়ার করুন