টেনেসির ন্যাশভিল সিটিতে মসজিদে হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে টেনেসির স্টুয়ার্ট কাউন্টির ১৮ বছর বয়সী গানের জোসেফ ফিশারকে ২০২৪-এ গ্রেপ্তার করেছে এফবিআই। তার বিরুদ্ধে গণহত্যার হুমকির অভিযোগ আনা হয়েছে। এফবিআইয়ের তদন্তে জানা গেছে, গানের জোসেফ ফিশার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টেনেসির বিভিন্ন স্থানে গণহত্যার পরিকল্পনা নিয়ে পোস্ট করছিলেন। ২০২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর, ফেসবুক (মেটা) নাসভিলের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে ফিশারের পোস্ট সম্পর্কে সতর্ক করে। অভিযোগ অনুসারে, ফিশার ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকের মাধ্যমে অন্য একজন ব্যবহারকারীর সঙ্গে গণহত্যার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তদন্তে দেখা যায়, ২০২৪ সালের জুন থেকে ফিশার বেশ কিছু উদ্বেগজনক পোস্ট করেছিলেন। এসব পোস্টে তিনি অস্ত্র, গুলি এবং একটি ট্যাকটিক্যাল ভেস্ট কেনার ছবি শেয়ার করেন। অভিযুক্ত গানের জোসেফ ফিশার ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে সংঘটিত শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী হামলা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে একটি গণহত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানা গেছে। তার শুনানি ২৭ জানুয়ারি নির্ধারিত ছিল। তবে তার আইনজীবীরা আরো প্রস্তুতির জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেন, ফলে শুনানির দিন পরিবর্তন করে ২৮ জানুয়ারি করা হয়।
তদন্তে ফিশারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট ও বার্তার উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত ৮ জুন অভিযুক্ত ফিশার এক ব্যবহারকারীকে ফ্যারি কনভেনশনে হামলার পরিকল্পনার কথা জানান। ১২ জুন: তিনি নিজের ম্যানিফেস্টো নিয়ে গর্ব করে নিজেকে অন্যান্য গণহত্যাকারীদের সঙ্গে তুলনা করেন। ১৬ জুন: ফিশার মেসেজ পাঠিয়ে জানান, এই বছর আমি একের পর এক হামলা করবো। ১৯ জুন: তিনি একটি ক্যামোফ্লেজ টেকটিক্যাল ভেস্ট পরে রাইফেল হাতে নিজের ছবি পোস্ট করেন। ২০২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর এফবিআই এজেন্টরা টেনেসির বিগ রক এলাকার ফিশারের বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন। অভিযোগ অনুসারে, ফিশার স্কুল শুটিং এবং গণহত্যার প্রতি নিজের মোহ প্রকাশ করেন এবং তার প্রিয় গণহত্যাকারীর নামও উল্লেখ করেন। ফিশারের বাবার অনুমতিতে এজেন্টরা তার ঘর তল্লাশি করে এবং তার ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো জব্দ করেন। সেখানে আরো পরিকল্পনার প্রমাণ মেলে। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ১ নভেম্বর একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে ফিশার ইহুদি এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর ফিশার অপর এক ব্যক্তির কাছে একটি বার্তা পাঠান, যেখানে তিনি গণহত্যার পরিকল্পনার স্থান পরিবর্তন করে নাসভিলের একটি মসজিদে করার কথা জানান। সেই বার্তায় গুগল ম্যাপের একটি স্ক্রিনশটও ছিল, যা নাসভিলের একটি মসজিদের অবস্থান দেখায়। এদিকে অ্যান্টিওক হাইস্কুলের ১৭ বছর বয়সী শুটার সলোমন হেন্ডারসন তার অনলাইন ডায়েরিতে ফিশারের নাম উল্লেখ করেন এবং জানান, ফিশার তার এলাকারই একজন।
গত ১৫ জানুয়ারি আমেরিকান মুসলিম অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল (এএমএসি) নাসভিলের মসজিদে সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধে মধ্যম টেনেসি ইউএস অ্যাটর্নি অফিসের প্রশংসা করে। এএমএসির এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা নিশ্চিত করেছি যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তিনি কাস্টডিতে রয়েছেন। এই ঘটনা আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের। তবে এফবিআই ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। এই ঘটনাটি সহিংসতার বিরুদ্ধে সময়মতো হস্তক্ষেপের গুরুত্ব তুলে ধরেছে।
কেয়ারের ন্যাশনাল ডেপুটি ডিরেক্টর এডওয়ার্ড আহমেদ মিচেল বলেছেন, আমরা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে প্রশংসা জানাই, যারা আমেরিকান মুসলিম কমিউনিটির ওপর একটি সহিংস হামলার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়েছে। এ ঘটনার উদ্বেগজনক প্রকৃতি এবং সম্প্রতি ইসলামবিদ্বেষী ঘৃণার বৃদ্ধি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মসজিদ এবং অন্যান্য মুসলিম প্রতিষ্ঠানের উচিত তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করা। প্রতিটি মসজিদের জন্য কিছু মৌলিক নিরাপত্তা পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যার মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সিকিউরিটি ক্যামেরা স্থাপন, জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার চর্চা, কিপ্যাড-লকযুক্ত প্রবেশদ্বার ব্যবহার, যে কোনো হুমকি বা সন্দেহজনক আচরণ রিপোর্ট করা এবং বড় ইভেন্টগুলোতে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা অথবা প্রশিক্ষিত ও বিশ্বস্ত সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে অনুমোদন দেওয়া। এসব পদক্ষেপ নিরাপত্তা জোরদারে সহায়ক হতে পারে।
এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম কমিউনিটির প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব এবং চরমপন্থার ক্রমবর্ধমান হুমকিকে নতুন করে আলোচনায় এনেছে। গানের জোসেফ ফিশারের পরিকল্পিত হামলা প্রতিহত করার ক্ষেত্রে এফবিআই এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কার্যকর উদ্যোগ দেখিয়েছে যে, সতর্কবার্তা এবং সময়োচিত পদক্ষেপের মাধ্যমে এমন ভয়াবহ ঘটনার ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তবে এটি স্পষ্ট যে, সমাজে এই ধরনের বিদ্বেষমূলক মনোভাব রোধে কেবল আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। একে রুখতে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ও সহমর্মিতা প্রচার এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে এ ধরনের চরমপন্থার পুনরাবৃত্তি রোধে আরো জোরালো ও সুসংহত ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।