৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৩৪:৩০ পূর্বাহ্ন


বর্জ্য পোড়ানো কোনো সমাধান নয় : রিজওয়ানা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৩-২০২৫
বর্জ্য পোড়ানো কোনো সমাধান নয় : রিজওয়ানা উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান


“বর্জ্য পোড়ানো কোনো সমাধান নয়, প্রয়োজন টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা” বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের (MoEFCC) উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, একটি অনলাইন পরামর্শক ওয়ার্কশপ “বাংলাদেশের এনডিসি ২০২১ পুনঃমূল্যায়ন: স্থানীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও এবং মিথেন নিরসন কৌশল সমন্বয়” শীর্ষক কর্মশালায় এই বক্তব্য দেন। তিনি আরও বলেন, “বর্জ্য পৃথকীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং আমাদের উচিত এমন ভুল সমাধান গ্রহণ না করা, যা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে না। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো এবং গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইনসিনিরেটর অলটারনেটিভস (GAIA)-এর যৌথ আয়োজনের এই কর্মশালায় মিথেন নির্গমন কমাতে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

ওয়ার্কশপের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, এবং সেশন চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেন সাবেক সচিব গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং এসডো’র চেয়ারপার্সন, সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ ও অন্যান্য সম্মানিত বক্তারা ছিলেন মারিয়েল ভিলেলা (গ্লোবাল ক্লাইমেট প্রোগ্রামের পরিচালক), ড. আইনুন নিশাত (প্রফেসর এমিরিটাস, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়), ড. শাহরিয়ার হোসেন (সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর, এসডো), সরকারি কর্মকর্তারা এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদগণ।

এসডো’র চেয়ারপার্সন, সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ, এই কর্মশালার উদ্বোধন করেন এবং বাংলাদেশে ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন নির্গমন ৩০% কমানোর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। পাশাপাশি কর্মশালার লক্ষ্য, বর্জ্য পোড়ানোর ফলাফল এবং বিশ্বব্যাপী বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করেন। নোশিন নায়লা, এসডোর রিসার্চ এবং ক্যাম্পেইন অ্যাসোসিয়েট, স্থানীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং মিথেন হ্রাসের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, মিথেন CO₂-এর তুলনায় ২০ বছরে ৮০ গুণ শক্তিশালী। সে বর্জ্য পোড়ানোর পরিবর্তে কম্পোস্টিং, বায়োগ্যাস উৎপাদন এবং পুনরুদ্ধার ইত্যাদি বিকল্প গ্রহণের কথা জানান।

মারিয়েল ভিলেলা, GAIA-এর গ্লোবাল ক্লাইমেট প্রোগ্রামের পরিচালক, বর্জ্য মিথেন হ্রাসের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, স্থানীয় বা উৎসে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি মিথেন হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এবং এশিয়ার বিভিন্ন সফল জিরো-ওয়েস্ট মডেল উপস্থাপন করেন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা এবং বর্জ্য পৃথকীকরণ কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দেন। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে বর্জ্য পৃথকীকরণ উদ্যোগ চালানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেন।

ড. শাহরিয়ার হোসেন, এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর এবং সেক্রেটারি জেনারেল, উন্মুক্ত আলোচনা সেশন পরিচালনা করেন এবং অংশগ্রহণকারীদের টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং মিথেন হ্রাস সম্পর্কে সুপারিশ বা প্রশ্ন করার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমেরিটাস ড. আইনুন নিশাত NDC-তে মিথেনের উপর আরও মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান।

এসডো’র নির্বাহী পরিচালক, মিস সিদ্দিকা সুলতানা কর্মশালার সমাপনী বক্তব্যে সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, “স্থানীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শুধুমাত্র একটি বাস্তবিক সমাধান নয়; এটি আমাদের পরিবেশের জন্য অপরিহার্য। আমরা বাংলাদেশের জলবায়ু এজেন্ডার অংশ হিসেবে এই কৌশলগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

কর্মশালায় উপস্থাপিত সুপারিশ: 

নীতি ও NDC সংশোধন

বর্জ্য থেকে শক্তি বা বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করে কম্পোস্টিং, বায়োগ্যাস ব্যবহার। ল্যান্ডফিল গ্যাস সংগ্রহ এবং জৈব বর্জ্য আলাদা করার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন। এবং তৎক্ষণাত অপ্রক্রিয়াজাত জৈব বর্জ্য ল্যান্ডফিলে ফেলা নিষিদ্ধকরন।

অর্থায়ন ও সহায়তা

আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল ব্যবহার করে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ এবং কর্মসূচির মাধ্যমে টেকসই উপকরণ প্রচার।

অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তি

বর্জ্য সংগ্রাহকদের আইনগত স্বীকৃতি এবং সুবিধা প্রদান এবং পরিবেশ ন্যায়নীতি নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

কর্মশালায় বাংলাদেশের NDC সংশোধনের আহ্বান জানানো হয়, যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন নিঃসরণ ৩০% কমানো। এতে স্থানীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।

শেয়ার করুন