১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ৬:২১:১০ পূর্বাহ্ন


অ্যাডামস রাইকার্স জেলে আইসিই এজেন্ট প্রবেশের অনুমতি দিলেন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০২-২০২৫
অ্যাডামস রাইকার্স জেলে আইসিই এজেন্ট প্রবেশের অনুমতি দিলেন মেয়র এরিক অ্যাডামস গত বৃহস্পতিবার ম্যানহাটনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের ইমিগ্রেশন ও সীমান্ত প্রধান টম হোমান এবং স্থানীয় ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন


নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস তার নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে ইউ এস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কর্তৃপক্ষকে রাইকার্স আইল্যান্ড জেল কমপ্লেক্সে পুনরায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ফলে সিটির দীর্ঘদিনের অভিবাসন-সুরক্ষা নীতির পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে অ্যাডামস জানান, আমরা এখন এমন একটি নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়নের কাজ করছি যা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টদের রাইকার্স আইল্যান্ডে কাজ করার অনুমতি দেবে। যেমনটি ২০১৪ সালের আগে ২০ বছর ধরে সিটিতে কার্যকর ছিল। এই সিদ্ধান্ত নিউইয়র্ক সিটির সিটি কাউন্সিল ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। কারণ ২০১৪ সালে পাশ হওয়া অভিবাসন-সুরক্ষা আইন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের রাইকার্সে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। তবে মেয়র অ্যাডামস দাবি করেছেন যে, নতুন নির্বাহী আদেশটি শুধু অপরাধ ও গ্যাং সংক্রান্ত তদন্তের ক্ষেত্রে ফেডারেল কর্মকর্তাদের সহযোগিতার জন্য অনুমতি দেবে।

নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল স্পিকার অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামস, কাউন্সিল সদস্য আলেক্সা অ্যাভিলেস এবং স্যান্ডি নার্স এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, মেয়রের নির্বাহী আদেশের আইনি বৈধতা আমরা যাচাই করবো এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবো। এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিউইয়র্ক রাজ্যের বিরুদ্ধে একাধিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিচার বিভাগ ১০ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা মেয়র অ্যাডামসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে চলমান মামলা প্রত্যাহার করছে, যাতে তিনি প্রশাসনের অভিবাসন আইন কার্যকরে আরো মনোযোগ দিতে পারেন। বিচার বিভাগের এ সিদ্ধান্তের ফলে বেশ কয়েকজন শীর্ষ ফেডারেল প্রসিকিউটর পদত্যাগ করেছেন। অনেকেই মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতেই অ্যাডামস এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মেয়র অ্যাডামস যুক্তি দেখিয়েছেন যে, সিটির অভিবাসন নীতির কারণে অপরাধীদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, আমার কাজ নিউইয়র্কবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এবং আমি সেই দায়িত্ব পালন করব। তবে অভিবাসী অধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করবে এবং শহরের দীর্ঘদিনের নীতির পরিপন্থী।

রাইকার্স আইল্যান্ডে আইসিই অফিস পুনরায় চালুর পরিকল্পনায় মেয়র পদপ্রার্থীদের বিরোধিতা প্রকাশ করেছেন মেয়র এরিক অ্যাডামস। রাইকার্স আইল্যান্ডে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট অফিস পুনরায় চালুর পরিকল্পনা ঘোষণার পর অভিবাসন-সমর্থক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রগ্রেসিভ এবং শ্রমিক সংগঠনগুলোর আয়োজিত এক ফোরামে তিনজন মেয়র পদপ্রার্থী নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি সদস্য জোহারান মামদানি, স্টেট সিনেটর জেসিকা রামোস, সাবেক অ্যাসেম্বলি সদস্য মাইকেল ব্লেক-এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানান। তারা দাবি করেন, এ পদক্ষেপ নিউইয়র্ক সিটির অভিবাসী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক এবং এটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি সদস্য জোহারান মামদানি, যিনি উগান্ডায় জন্মগ্রহণ করেছেন, রাইকার্স আইল্যান্ডে আইসিই অফিস পুনরায় চালুর উদ্যোগকে অবৈধ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, নিউইয়র্কে বসবাসরত আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসীরা নিউইয়র্কবাসীই, আমরা তাদের জন্য লড়াই করবো। স্টেট সিনেটর জেসিকা রামোস, যিনি কলম্বিয়ান অভিবাসী পরিবারের সন্তান, ইংরেজি ও স্প্যানিশ উভয় ভাষায় কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের এখনই অভিবাসীদের ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের সরকার কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন, এখন একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর সময়। সাবেক অ্যাসেম্বলি সদস্য মাইকেল ব্লেক, যার বাবা-মা জ্যামাইকা থেকে অভিবাসী হয়ে এসেছেন, বলেছেন, এটি শুধু লাতিন সম্প্রদায়ের সমস্যা নয়। এটি আফ্রিকান, ক্যারিবিয়ানসহ সব অভিবাসীর সমস্যা। আমাদের এখনই একজোট হতে হবে। তিনি আরো বলেন, রাইকার্স আইল্যান্ডে আইসিই অফিস পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয় এবং তিনি মেয়র হলে স্কুল, উপাসনালয়সহ সংবেদনশীল এলাকাগুলোতে আইসিই কর্মকর্তাদের প্রবেশ ঠেকাতে উদ্যোগ নেবেন।

ইউএস সেনসাস ব্যুরোর আমেরিকান কমিউনিটি সার্ভে অনুসারে, নিউইয়র্ক সিটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ ভাগ অভিবাসী, যা তিন মিলিয়নেরও বেশি। মেয়র অ্যাডামসের আইসিই-সংক্রান্ত সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত তার অভিবাসন নীতির কঠোর অবস্থানকে আরো স্পষ্ট করে তুলেছে, যা রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করছেন সমালোচকরা। মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের এই কড়া প্রতিক্রিয়ার ফলে নিউইয়র্ক সিটির অভিবাসন নীতি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক আরো তীব্র হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

শেয়ার করুন