৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৩:০৯:৩৬ অপরাহ্ন


সংবিধান সংস্কার এখন সময়ের দাবি: হাসনাত
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০২-২০২৫
সংবিধান সংস্কার এখন সময়ের দাবি: হাসনাত


রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো দেশের সব সম্প্রদায়ের ভেতর বিভাজন সৃষ্টি করে এসেছে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নিজেদের ঐক্যের জায়গাগুলো খুঁজে বের করা। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে যারা সবচাইতে নিগৃহীত তাদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আয়োজনে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবীর মিলনায়তনে ‘সংবিধান সংস্কার এবং দলিত, হরিজন ও তফসিলি সম্প্রদায়ের অধিকার প্রসঙ্গে’ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম।

হাসনাত কাইয়ূম আরো বলেন, সংবিধান সংস্কার এখন সময়ের দাবি। রাষ্ট্রকে এমনভাবে পুনর্গঠন করতে হবে, যাতে দলিত, হরিজন ও তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষ সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত হয়। তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এটা কেবল তাদের উন্নতির জন্য নয়, বরং একটি ন্যায়সংগত সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য। সেজন্যে আমাদের সম্মিলিত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিসরে এই দাবিগুলো তুলে ধরতে হবে।

অনুষ্ঠানে ভারতবর্ষে তফসিলি সম্প্রদায়ের ইতিহাস বিবৃত করেন জাত বর্ণ বিলোপ কনভেনশনের সদস্য সচিব, অ্যাডভোকেট উৎপল বিশ্বাস। তিনি সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে তফসিলি সম্প্রদায়ের প্রস্তাবনাও সভায় পেশ করেন। সেখানে দাবি করা হয় যে সংবিধানে সব তফসিলি সম্প্রদায়ের নাম যোগ করতে হবে। অন্যান্য দাবির মধ্যে প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রপতিকে তফসিলি সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষার জন্য কমিশন তৈরির দাবিসহ জাতীয় সংসদ ও সিটি করপোরেশনে তফসিলি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব সংরক্ষিত রাখতে হবে।

বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি শ্রী কৃষ্ণ লাল বলেন, হরিজনরা শিক্ষিত হলেও চাকরির ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার। সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তাদের জন্য কোনো কোটা বা সংরক্ষিত পদ নেই, যা তাদের উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আবাসন সমস্যাও একটি বড় সংকট। হরিজন সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য আজও শহরের বিভিন্ন জায়গায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন, যেখানে মৌলিক সুবিধাগুলোর অভাব প্রকট। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য রাষ্ট্রকে অবশ্যই হরিজনদের বাসস্থান, সুরক্ষা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

মাইনরিটি রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম মেম্বার অধ্যক্ষ নীরদ বরণ মজুমদার বলেন, ব্রিটিশ বা পাকিস্তান আমল থেকে বাংলাদেশ আমলে তফসিলি সম্প্রদায় বেশি বঞ্চিত। যেখানে দল নেই সেখানে বল নেই, সেজন্যে তফসিলি সম্প্রদায়কে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হতে হবে। সাংবিধানিকভাবে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য জাকিয়া শিশির বলেন, রাজধানীর রবিদাস সম্প্রদায় মানবেতর জীবনযাপন করেন। তাদের মৌলিক অধিকার যেমন বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হয়। রাষ্ট্রের উচিত এই সম্প্রদায়ের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা এবং তাদের বাসস্থানের নিশ্চয়তা প্রদান করা। এছাড়া তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষের কর্মসংস্থান এবং সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সংবিধান সংস্কার ছাড়া এ বৈষম্য দূর করা সম্ভব নয়। রাষ্ট্রকে এখনই এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

অনুভব-এর সম্পাদক অতুল চন্দ্র বর্মন বলেন, ব্রহ্মবাদের যাঁতাকলে পড়ে তফসিলি সম্প্রদায় উঠতে পারে না। একসময় তফসিলি সম্প্রদায় মাদরাসায় পড়তে পারতেন, কিন্তু এখনকার মুসলমানরাও ব্রাহ্মণসুলভ আচরণ করে। হরিজনদের নিজেদের ভেতরেই উচ্চ-নিচ বোধ প্রবল। শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে এই বৈষম্য কাটবে।

বাংলাদেশ রবিদাস ফোরামের সভাপতি চানমোহন রবিদাস বলেন, সংখ্যালঘুদের মধ্যে তফসিলি সম্প্রদায়ের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু সিটি করপোরেশন রবিদাস সম্প্রদায়কে ঘরছাড়া করে। রবিদাস সম্প্রদায়ের ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ সিটি করপোরেশন থেকে তাদের বাসস্থানকে স্বীকৃতি দিতে হবে। সংসদে যাতে তফসিলি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ বর্মন বলেন, হিন্দুদের মধ্যে তফসিলিরা সংখ্যাগুরু কিন্তু তাদের কোনো উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিত্ব দেখা যায় না।

মাইনরিটি রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম মেম্বার স্বপন কুমার বেপারী বলেন, আমাদের এই জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে। সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে তাদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশ রবিদাস ফোরামের কৈলাশ রবিদাস বলেন, রাষ্ট্র আমাদের জনগোষ্ঠীর জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি। বরং রাষ্ট্র মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমাদের মানহীন জীবনাচার মেনে নিয়েছে। এর থেকে উত্তরণ করতে হবে। আগামী নির্বাচনে এই অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সংখ্যানুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

শ্রীশ্রী হরিচাদ মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নৃপেন্দ্রনাথ হীরা বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু হয়েছে তাতে কাউকে পেছনে রেখে সমাজ এগিয়ে যেতে চাইলে বৈষম্য নিরসন হবে না। গ্রামগঞ্জে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর এগিয়ে যাওয়ার পথ প্রসারিত করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

হরিজন যুব ঐক্য পরিষদের নেতা পঙ্কজ বাসফোর বলেন, অপমানজনক সুইপার শব্দ যাতে ব্যবহার করা না হয়। নির্বাচিত হওয়ার পর হরিজন প্রতিনিধিরা হরিজনদের কথা ভুলে যান। হরিজনদের কেউ ঘর ভাড়া দেয় না বলে, ৬০০ টাকার মাসিক বেতনে হরিজনদের সিটি করপোরেশনের চাকরি করতে হয়।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মিডিয়া ও প্রচার সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন বলেন, এই সম্প্রদায়ের মানুষ হাজার বছর ধরে বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার। এখন সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে তাদের অধিকার নিশ্চিত করার ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে। তাই আমাদের সম্মিলিতভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের ন্যায্য দাবিগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরতে হবে।

শেয়ার করুন