২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ৬:১৩:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশ ও মেক্সিকোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার এদেশে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন আমরা হতে দিব না- আখতার হোসেন সাংবাদিকতা ব্যবস্থাকে সাংবাদিকবান্ধব করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে- মাহফুজ আলম আমাদের যেকোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে- তারেক রহমান প্যারিসে বাংলাদেশ কমিউনিটি মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারে পুরস্কার বিতরণ সংস্কার ও নির্বাচনকে যেভাবে মুখোমুখি করা হচ্ছে তা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক- তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই- প্রধান উপদেষ্টা আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবীতে মধ্যরাতে মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানাইলের কারণে ৫৫ হাজার মৃত্যু ট্রাম্পকে থামাতে আদালতকে ভূমিকা রাখতে হবে


আমেরিকায় প্রথম মসজিদ নর্থ ডাকোটার রস মসজিদে এখন মুসল্লী নেই
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৩-২০২৫
আমেরিকায় প্রথম মসজিদ নর্থ ডাকোটার রস মসজিদে এখন মুসল্লী নেই পূর্বপুরুষদের স্মৃতি রক্ষার জন্য ২০০৫ সালে একই স্থানে একটি ছোট প্রতীকী মসজিদ পুনর্নির্মাণ করেন


যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম মসজিদ নির্মিত হয় ১৯২৯ সালে, নর্থ ডাকোটার ছোট শহর রসে। এটি মূলত সিরিয়া ও লেবানন থেকে আগত মুসলিম অভিবাসীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যারা কৃষিকাজ ও পশুপালনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শত বছরেরও কাছাকাছি সময় ধরে, এই মসজিদ মুসলিম অভিবাসীদের ঐতিহ্য ও ধর্মীয় জীবনযাত্রার প্রতীক হয়ে রয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে মসজিদটি মুসল্লিদের ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অযত্নে ধসে পড়ে। বর্তমানেও মুসল্লিদের অভাবে এই মসজিদে কোনো নামাজ আদায় হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র মসজিদ যেখানে বছরের পর বছর কোনো নামাজ আদায় হয় না। মসজিদের আশপাশে নেই কোনো মুসলিম বাসিন্দা। মসজিদের প্রতিষ্ঠাতাদের কয়েকজনের নাতিপুতিরা তাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতিরক্ষায় প্রতীকীভাবে এই মসজিদটি আবারো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করেন। যদিও তারা কেউই মুসলিম নন। তারা ইসলাম ধর্ম থেকে হারিয়ে গেছেন। মসজিদের আঙিনায় রয়েছে তাদের পূর্বপুরুষদের কবরস্থান। প্রতিটি কবরে রয়েছে তাদের পূর্বপুরুষদের মুসলিম নামফলক। ১৮৮০-এর দশক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের লেভান্ট অঞ্চল-বর্তমান সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান ও ফিলিস্তিন থেকে বহু মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন শুরু করে। অর্থনৈতিক সুযোগের সন্ধানে এবং অটোমান সাম্রাজ্যের শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে অনেকেই আমেরিকায় পাড়ি জমান।

এই অভিবাসীদের বেশিরভাগই প্রথমে নিউইয়র্ক, ওহাইও, মিশিগান ও মিনেসোটা হয়ে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হন। নর্থ ডাকোটার বিস্তীর্ণ কৃষিভিত্তিক এলাকায় সস্তায় জমি পাওয়া যেত, কারণ ১৮৬২ সালের হোমস্টেড অ্যাক্ট অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র সরকার অভিবাসীদের কৃষিকাজের জন্য বিনামূল্যে বা স্বল্প মূল্যে জমি বরাদ্দ করছিল। এই সুবিধা গ্রহণ করেই বহু মুসলিম পরিবার রস শহরে বসতি স্থাপন করেন এবং ধীরে ধীরে তাদের ধর্মীয় চর্চার জন্য একটি উপাসনালয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।

নর্থ ডাকোটার প্রচণ্ড শীত ও প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও মুসলিম অভিবাসীরা কঠোর পরিশ্রম করে নিজেদের জীবন প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্য বজায় রাখার লক্ষ্যে তারা ১৯২৯ সালে রস শহরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন। এই মসজিদটি ছিল কাঠের তৈরি একতলা একটি সাধারণ ভবন। ভেতরে ছিল মাটির মেঝ এবং একটি ছোট মিনবার। এটি শুধু নামাজ আদায়ের স্থান ছিল না, বরং স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য সামাজিক ও ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার কেন্দ্রস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

রস মসজিদের প্রতিষ্ঠার পেছনে কয়েকজন বিশিষ্ট মুসলিম অভিবাসীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সিরিয়ান কৃষক এলিয়াস জ্যাকব, যিনি স্থানীয় মুসলিমদের সংগঠিত করে ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। লেবাননের অভিবাসী ব্যবসায়ী হাসান জাফর মসজিদের নির্মাণ কাজে আর্থিক সহায়তা দেন। এছাড়া নাসের হোসেন নামে এক প্রভাবশালী মুসলিম মসজিদের জন্য জমি দান করেন। মোহাম্মদ শেইখ নামে একজন ধর্মীয় নেতা ও ইমাম এই মসজিদে নামাজের ইমামতি করতেন এবং স্থানীয় মুসলিমদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করতেন।

১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকে মুসলিম অভিবাসীদের নতুন প্রজন্ম উচ্চশিক্ষা ও চাকরির সন্ধানে বড় শহরগুলোর দিকে চলে যেতে থাকলে রস শহরের মুসলিম জনসংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যায়। ফলস্বরূপ, মসজিদের ব্যবহার হ্রাস পায় এবং এটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ১৯৭০-এর দশকে মসজিদটি ধসে পড়ে এবং অবশেষে ধ্বংস হয়ে যায়। কয়েক দশক ধরে এটি বিস্মৃত অবস্থায় পড়ে থাকে এবং শুধুমাত্র স্থানীয় মুসলিম অভিবাসীদের কিছু পরিবারই এর ইতিহাস সম্পর্কে জানতো।

দীর্ঘদিন পর, রস শহরের মুসলিম অভিবাসীদের উত্তরসূরিরা তাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি রক্ষার জন্য ২০০৫ সালে একই স্থানে একটি ছোট আধুনিক মসজিদ পুনর্নির্মাণ করেন। নতুন মসজিদটি ইটের তৈরি এবং একটি ছোট গম্বুজবিশিষ্ট স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এটি এখন ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষিত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম অভিবাসীদের ঐতিহ্য রক্ষার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।রস মসজিদ শুধুমাত্র একটি উপাসনালয় নয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের দীর্ঘ ইতিহাসের প্রতীক। যখন এটি ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের সংখ্যা ছিল অত্যন্ত কম। কিন্তু আজকের দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ লাখেরও বেশি মুসলমান বসবাস করছেন।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ৩ হাজার ২০০-এর বেশি মসজিদ রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে মুসলিম অভিবাসীরা শত বছর আগেই আমেরিকার অর্থনীতি ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছিলেন। রস মসজিদ সেই ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য, যা মুসলিম অভিবাসীদের ত্যাগ ও সংগ্রামের প্রতিচিত্র বহন করে।

রস মসজিদ যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম অভিবাসীদের সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। এটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমেরিকায় ইসলাম কোনো নতুন ধর্ম নয়, বরং এটি বহু শতাব্দী ধরে এখানে চর্চিত হয়ে আসছে। যদিও মূল মসজিদটি এখন আর নেই, তবে এর উত্তরসূরিরা ধর্মীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রস মসজিদ যুক্তরাষ্ট্রের বহুমাত্রিক ধর্মীয় সহাবস্থানের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে চিরস্থায়ী স্বাক্ষর হয়ে থাকবে।

শেয়ার করুন