১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ০৫:১০:৩৬ পূর্বাহ্ন


৮৪ জনের পর এবার ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ গ্রেফতার
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৪-২০২৫
৮৪ জনের পর এবার ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ গ্রেফতার গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তুরিন আফরোজকে


আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে জুলাই আন্দোলনে ছাত্র হত্যার মামলা। সে সূত্র ধরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে ছাত্র হত্যা মামলায় যুক্ত ৮৪ জন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। 

তবে শুধু তুরিন আফরোজই নয়, এমন বহু আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন ও বিভিন্ন কারণে বিগত সরকারের সময়ই বিতর্কিত হয়ে দায়িত্ব বা চাকরি হারিয়েছেন। এমন যারা রয়েছেন, তাদের অনেকে নতুন করে আওয়ামীপ্রেমী হতে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছুদিন যাবৎ বিগত সরকারের সুবিধা নিয়ে অপকর্ম করেছেন তাদের ব্যাপারে নমনীয়তা দেখিয়ে ধীরে চলো নীতিতে থাকলেও ইদানীং একটি চক্রের গোপন তৎপরতা বাড়ছে বলে জানা গেছে। এমন অভিযোগ বা গোপন সংবাদে অনেককে আটক করা হলেও পরবর্তীতে তাদের জামিন দেওয়া হয়। এদের মধ্যে কাউকে কাউকে পরিবারের জিম্মায়ও ছেড়ে দেওয়া হয়, সরকারবিরোধী তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারের পরও। 

তুরিন আফরোজের গ্রেফতার প্রসঙ্গে পুলিশ বলছে, তুরিন আফরোজের ব্যবহৃত ল্যাপটপ ও মোবাইল তল্লাশি করে সরকারবিরোধী পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গত ৭ এপ্রিল রাতে তুরিন আফরোজকে গ্রেফতারের পর উত্তরা পশ্চিম থানায় সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, উত্তরায় আব্দুল জব্বার (২১) নামের একজন ছাত্রকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবিদ্ধ করার ঘটনায় মামলা হয় তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে। এই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়েছে। তার মোবাইল ও ল্যাপটপ চেক করে দেখা গেছে তার ফেসবুকে অনেক সরকারবিরোধী প্রচারণা রয়েছে।

সরকারবিরোধী প্রচারণার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ৮ এপ্রিল তুরিন আফরোজকে রিমান্ডের আবেদন করে সোপর্দ করা হবে।

তুরিনের বাসা থেকে কোনো অস্ত্র পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে ডিসি মহিদুল ইসলাম বলেন, বাসা থেকে কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি। এর আগে সোমবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে তুরিন আফরোজকে গ্রেফতারে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের বাসায় অভিযান পরিচালনা করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। অভিযান শেষে তুরিনকে গ্রেফতার করা হয়। জানা গেছে, তুরিন আফরোজ ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন।

৮৪ জনকে কারাগারের প্রেরণ

জুলাই আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার কর্মসূচি চলাকালে হামলা, ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার মামলায় আওয়ামীপন্থী ৮৪ জন আইনজীবীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোরও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ ছাড়া ৯ আইনজীবীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হয়। এর মধ্যে ৮ জনই নারী আইনজীবী। গত ৬ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশে দেয়। এর আগে ৯৩ জন আইনজীবী আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন।

এদিন সকালে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আত্মসমর্পণপূর্বক জামিনের আবেদন করেন এসব আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তাদের জামিন শুনানি শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে বিকাল ৫টার পর আদালত এই আদেশ দেয়। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খোরশেদ মিয়া আলম। তিনি বলেন, আসামিপক্ষে জামিন চাওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে। শুনানি শেষে আদালত সন্তুষ্ট হয়ে ৯ জনের জামিন মঞ্জুর করেছেন। এর মধ্যে ৮ জন নারী আইনজীবী রয়েছেন।

আওয়ামীপন্থী ৯৩ আইনজীবীর মধ্যে রয়েছেন- বারের সাবেক সভাপতি সাইদির রহমান মামিক, শাহ আলম, মাহবুবুর রহমান, আবু সাইদ সাগর, আসাদুর রহমান রচি, সাইবার ট্রাইব্যুনালের পিপি নজরুল ইসলাম শামিমসহ বারের সাবেক সদস্যরা। এর আগে গত ৪ আগস্ট আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা, চেম্বার ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আওয়ামীপন্থী ১৪৪ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী বাবু। এ ঘটনায় হাইকোর্ট থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন নিয়েছিলেন ১১৫ জন। ৭ এপ্রিল অন্তর্বর্তী জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগেই আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ৯৩ আইনজীবী।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে আসামিরা ঢাকা আইনজীবী সমিতির সম্মুখ থেকে বেআইনি জনতাবদ্ধে আবদ্ধ হয়ে অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। তারা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই’, ‘রাজপথ ছাড়ি নাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

এ সময় ভুক্তভোগী আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী বাবু মামলার শুনানি শেষ করে ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে আসেন। তখন আসামি আনোয়ার শাহাদাৎ শাওন হেলমেট পরে পিস্তল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি তাক করেন। আসামি ওয়াকিল লোহার রড দিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করেন। এতে তিনি গুরুতর রক্তাক্ত জখম হন। 

এছাড়া অন্য আসামিরা স্লোগান দিয়ে বাদীসহ অন্য আইনজীবীদের কিল-ঘুষি মারেন এবং লোহার রড ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারাত্মক আঘাত করেন। আসামিরা বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর ও লাখ লাখ টাকা মূল্যের মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যান। 

অভিযোগে আরো বলা হয়, আসামিরা আশপাশের আইনজীবীদের প্রাণনাশের হুমকি দেন। তারা ঢাকা আইনজীবী সমিতির চেম্বার ভবন ও ভবনের গুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এক কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করেন।

শেয়ার করুন