০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:৬:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


প্যালেস্টাইনপন্থী স্টিকার বহন : নার্স বরখাস্তে মামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৬-২০২৫
প্যালেস্টাইনপন্থী স্টিকার বহন : নার্স বরখাস্তে মামলা


প্যালেস্টাইনপন্থী স্টিকারযুক্ত পানির বোতল কর্মস্থলে নিয়ে যাওয়ার কারণে বেআইনিভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়েগোর লরেন গাও নামে এক নার্স ইউনাইটেড হেলথ গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। লরেন গাও লা জোল্লার আউটপেশেন্ট সার্জারি সেন্টারে কর্মরত ছিলেন এবং সেখানেই এই ঘটনাটি ঘটে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, কর্মস্থলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে এবং গাজার যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে নিন্দা জানিয়ে স্টিকারযুক্ত পানির বোতল নিয়ে যাওয়ার কারণে তাকে বেআইনিভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। লরেন কর্মস্থলে দুটি স্টিকারযুক্ত পানির বোতল নিয়ে যেতেন। একটিতে লেখা ছিল: ‘ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা করছে’ এবং অন্যটিতে ছিল: ‘প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি’। লরেনের দাবি, তিনি কখনোই রোগী বা সহকর্মীদের সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা করেননি, শুধু ব্যক্তিগত মতপ্রকাশের জন্যই এই স্টিকারগুলো ব্যবহার করেছিলেন। তা সত্ত্বেও তাকে প্রথমে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় এবং পরে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়। গাও দাবি করেছেন, তিনি কখনো কর্মক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতবাদ নিয়ে আলোচনা করেননি এবং তার ছাঁটাই ক্যালিফোর্নিয়ার শ্রম আইনের পরিপন্থী। মামলাটি ফেডারেল আদালতে দায়ের করা হয়েছে এবং এতে বলা হয়েছে, ইউনাইটেড হেলথ গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেআইনিভাবে তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করেছে।

এই মামলাটি কর্মস্থলে রাজনৈতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। যদিও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে সংবিধানগত ফ্রি স্পিচ প্রযোজ্য নয়, ক্যালিফোর্নিয়ার শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো কর্মচারীকে রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে শাস্তি দেওয়া বেআইনি। গাওর আইনি দল বলছে, এ বরখাস্তের মাধ্যমে তার অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে এবং তারা ক্ষতিপূরণসহ আদালতের কাছ থেকে ঘোষণা চাচ্ছেন, এই ছাঁটাই বেআইনি। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কোনো কর্মস্থল রাজনৈতিক বার্তা প্রদর্শনের অনুমতি দেয়, তাহলে তা সব মতামতের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হতে হবে। এই মামলার ফলাফল ভবিষ্যতে কর্মক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতপ্রকাশের ন্যায্যতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

লরেনের আইনজীবী ক্রিস্টোফার হো, যিনি লিগ্যাল এইড অ্যাট ওয়ার্ক নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছেন, বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রাণ হচ্ছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। কর্মক্ষেত্রে এই স্বাধীনতা হরণ করা হলে তা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। তিনি বলেন, এই মামলার মাধ্যমে কর্মীদের সংবিধানসম্মত রাজনৈতিক মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষা করা হচ্ছে।

লরেন জানান, জানুয়ারি ২০২৪-এ প্রথম একটি স্টিকার নিয়ে আপত্তি ওঠে। একটি শিফট শেষে এক চিকিৎসক তাকে বলেন, স্টিকারটি সহকর্মীদের বিরক্ত করছে এবং কর্মস্থল রাজনৈতিক বার্তার স্থান নয়। লরেন বোতলটি না আনার সিদ্ধান্ত নেন। তবে পরে তিনি তার একমাত্র বিকল্প বোতলটি নিয়ে কাজে যান, যেখানে ছিল বিতর্কিত স্টিকার ‘প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি’। এরপর আবারও তাকে তলব করে তিনজন সুপারভাইজার জানান, স্টিকারটি হয়রানির শামিল এবং প্রতিষ্ঠান নীতিমালার পরিপন্থী।

‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি’ বাক্যাংশটি বিতর্কিত ও বিভাজক হিসেবে বিবেচিত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইহুদি সংগঠন অ্যান্টি-ডিফামেশন লিগ (এডিএল) একে ঘৃণাসূচক বক্তব্য বলে মনে করে। তাদের মতে, এই বাক্য ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিলুপ্তির আহ্বান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস ও জিউশ ভয়েস ফর পিসের মতো সংগঠনগুলো দাবি করে, এটি সমান অধিকারের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের সহাবস্থানের ডাক। লরেন জানান, তার দৃষ্টিতে এটি ছিল ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের আহ্বান, সহিংসতা নয়। মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, স্টিকার নিয়ে তলবের পর কর্মস্থলে এক চিকিৎসক তাকে জনসমক্ষে অপমান করেন এবং ইতিহাস জানার পরামর্শ দেন।

এ ঘটনার পর লরেন কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি জানানো হয় তার চাকরি শেষ। অথচ সেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যিনি উল্টো রাজনৈতিক মতপ্রকাশ করেছিলেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। এসসিএ হেলথের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, লরেনের আচরণ প্রতিষ্ঠানটির মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। পরে চূড়ান্ত বরখাস্তপত্রে বলা হয়, তিনি কোনো “নীতি বা নিয়ম ভঙ্গ করেছেন।লরেন এখন নতুন একটি চাকরি পেয়েছেন, তবে বলেন, এ অভিজ্ঞতা ছিল তার জীবনের মানসিকভাবে অত্যন্ত কঠিন সময়, এবং নিজেকে সামলে নিতে অনেক সময় লেগেছে। মামলায় তিনি তার চাকরি থেকে বরখাস্তকে অবৈধ ঘোষণা, বকেয়া বেতন ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।এই মামলাটি কর্মক্ষেত্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিশেষ করে রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে মতভিন্নতা সংক্রান্ত বৈষম্য ও হয়রানির প্রশ্নকে সামনে নিয়ে এসেছে। মামলার রায়ের উপর নির্ভর করে ভবিষ্যতে কর্মীদের রাজনৈতিক মতামতের ভিত্তিতে নিয়োগ বা ছাঁটাই কতটা আইনসঙ্গত হবে তা নির্ধারণ করা হবে।

শেয়ার করুন