১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ৬:০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন


নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নানা চ্যালেঞ্জ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৮-২০২৫
নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নানা চ্যালেঞ্জ প্রতীকী ছবি


জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতা আন্দোলন ছিল বিপন্ন নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান কনস্টিটিউশনের অধীনে আদালতের বিশেষ পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে সীমিত বিষয়াদি দেখভাল করে সীমিত সময়ের জন্য দায়িত্ব অর্পণ করে। দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের। দেশ শাসনে অনভিজ্ঞ দুর্বল সরকার নিজেদের দায়িত্ব এবং ক্ষমতার অতিরিক্ত বিশাল পরিসরে কর্মকাণ্ড শুরু করে সবকিছু এলোমেলো করে ফেলেছে। সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অশুভ শক্তি দেশজুড়ে হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, মব সন্ত্রাসে জনজীবন অতিষ্ঠ করে ফেলেছে। এক বছরের দীর্ঘ সময়েও পারেনি পুলিশ বাহিনীকে সুসংগঠিত করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে, না পেরেছে বেসামরিক প্রশাসনে আস্থার সৃষ্টি করতে। 

সেনাবাহিনীকে দীর্ঘসময়ে পুলিশি দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত রাখায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের কাজে সমন্বয় প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছে। সরকার সমর্থক একটি সদ্য গঠিত রাজনৈতিক দলকে মাত্রাতিরিক্ত প্রশ্রয় দিয়ে সরকার শুধু মাত্র রাজনৈতিক মহলে বিতর্কিতই হয়নি, বরং দলটি এখন সরকারের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করে সরকার রাজনৈতিকভাবে বিশাল চ্যালেঞ্জ নিয়েছে। সংস্কার বিষয়ে নানা টালবাহানা করলেও কোথাও কোনো সংস্কার দৃশ্যমান হয়নি। 

সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় সরকার ঘনিষ্ঠ মহলের কারো কারো ব্যাপক দুর্নীতির নির্ভরযোগ্যযোগ্য খবর মিলছে। তৃণমূলে বিএনপি, জামাত এবং এনসিপি পারস্পরিক বিতর্ক এবং দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে সার্বিক পরিস্থিতি বিষিয়ে তুলেছে। এমনি অবস্থায় দেশ-বিদেশের নানা মহলের চাপে সরকার ফেব্রুয়ারি ২০২৬ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচনে বিজয় সম্ভব্য দল এবং তাদের অনুগামী দলগুলো নির্বাচন পথনকশা ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও কয়েকটি প্রান্তিক দল নানা অজুহাতে নির্বাচন প্রতিহত করার হুমকি দিচ্ছে। 

এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিচ্ছে, দুর্বল সরকার নিজেদের সুসংগঠিত করে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে কি না? কেন কিছু রাজনৈতিক শক্তিকে বারবার একটি বিশেষ দেশের কূনৈতিকদের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে? কেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন একটি বিশেষ দেশের দূতাবাসের দ্বারস্থ হয়েছে?

বিদ্যমান অবস্থায় আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রেখে নির্বাচন হলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বিএনপি। নির্বাচনের পর প্রান্তিক দলগুলো এবং সরকার সমর্থক রাজনৈতিক শক্তি জনরোষে পড়তে পারে। আর আওয়ামী লীগ তৃণমূলে শক্তিশালী থাকায় নির্বাচন নির্বিঘ্ন হবে বলে মনে হয় না। 

জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ছিল স্বৈরাচারবিরোধী এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। বর্তমান সরকার এবং সরকারঘনিষ্ঠ মহলের কার্যক্রমকে কোনো বিবেচনায়ই স্বৈরাচারবিরোধী বৈষম্যবিরোধী বলা যাবে না। বরং এই সময়ে সৃষ্ট মব সন্ত্রাসের দায়দায়িত্ব বর্তমান সরকারকে বহন করতে হবে। জুলাই-আগস্ট ঘটনাবলির নেপথ্যের ঘটনাবলি ক্রমান্বয়ে উন্মোচিত হলে অনেকের জন্যই সংকট সৃষ্টি হবে। নতুন সরকারকেও বিব্রত হতে হবে।

তারপরও বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক মহল আশা করে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। অবাধে ভোট প্রদানের সুযোগ পেলে জনগণ সঠিক নেতৃত্ব বেঁচে নেবে। বাংলাদেশে ভারত, পাকিস্তান বা পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থাপত্রে সবকিছু চলবে না। ৩০ লাখ জনগণ ১৯৭১ জীবন বিসর্জন বা জুলাই-আগস্টের সাধারণ মানুষ স্বাধিকার আর স্বাধীনতার জন্যই প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে।

শেয়ার করুন