২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৬:৫৫:২০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


বিদ্যুতে নাজুক অবস্থা কেন?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৭-২০২২
বিদ্যুতে নাজুক অবস্থা কেন?


বাংলাদেশে বিরাজ করছে একধরনের আতঙ্ক। বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কী আবারো সেই পেছনের ভয়াবহ দিকে ফিরছে? বিদ্যুৎ সংকটের নেপথ্য দেখানো হচ্ছে গ্যাস সরবরাহ সংকট। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, জ্বালানি বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে। প্রতিমন্ত্রী বলছেন, গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বলছেন, সংকট চলবে সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ। দেশে এইতো কিছুদিন আগেও কত তোড়জোড় হলো বিদ্যুৎ সক্ষমতা, জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে। দেশে যদি আবারো তীব্র বিদ্যুৎ সংকট, জ্বালানি সংকট হয়- তাহলে কী অর্জন হলো ১৩ বছরে? কেউ কোথাও অন্তর্ঘাত করছে না তো? 

মিডিয়াতে আসছে প্রতিনিয়ত খোদ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র গরমে বারবার লোডশেডিং হচ্ছে। রাজধানীতে কোনো কোনোদিন একেক এলাকায় দিনে৫-৬ বারও লোডশেডিং হচ্ছে। প্রতিবার অন্তত এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং হওয়ার খবর মিলছে। গ্রামগঞ্জের পরিস্থিতি আরো খারাপ। এতে শঙ্কা সর্বত্র- অনেকেই ২০০৯-২০১০ তীব্র সংকটের কথা ভেবে আতঙ্কিতও। আশা করি, দেশবাসীকে সম্পৃক্ত করা  কিছু আউটঅব টি-বক্স পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন আপদকালীন সময় পার করা যাবে। 

দুনিয়ার অনেক দেশেই সপ্তাহে একদিন বিকেল ৬টার পর বিপণিবিতান খোলা থাকেনা। বাংলাদেশেও জরুরি সেবাপ্রতিষ্ঠানসমূহ ছাড়া সকল প্রতিষ্ঠান মাসতিনেক সন্ধ্যা পিক সময়ে বন্ধ থাকতে পারে। এখন সরকার অফিস-আদালত সকাল নয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত চলার সিদ্ধান্ত, কিছু মানুষের ওয়ার্কিং ফ্রম হোম সিদ্ধান্ত বিবেচনা ঠিক আছে। সরকারি অফিস-আদালতে এয়ার কন্ডিশনার তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নির্ধারণ করা যেতে পারে। পাঁচ তারকা হোটেল ছাড়া ক্লাব, রেস্টুরেন্টগুলোতে সন্ধ্যা ৮টার পর আয়োজন নির্ধারণ করা যেতে পারে। সপ্তাহের শুধুমাত্র ছুটির দিনগুলোতে বিয়ে, জন্মদিনের অনুষ্ঠান দিনের বেলা হতে পারে। মোটকথা, সর্বক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সাংসদ,সচিবরা নিজ থেকে পালন করে উপমা সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে মানুষ উদ্বুদ্ধ হবে। 

বিশ্ব পরিস্থিতিতে সর্বক্ষত্রে কৃচ্ছ্রতা সাধনের প্রয়োজন আছে। কিন্তু বিশেষ আইনের আশ্রয় নিয়ে যেভাবে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে স্বেচ্ছাচার আর দুর্নীতি করা হয়েছে, তার মাশুল গুনছে এখন বিদ্যুৎ-জ্বালানি সেক্টর। আমলানিয়ন্ত্রিত জ্বালানি সেক্টর না পারছে গ্যাস সরবরাহ করতে, না পারছে এলএনজি আমদানি করতে। দায় নিতে হবে জ্বালানি উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রীর। ২০১০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত জ্বালানি সচিবদেরও। 

বলা হয়েছে, ২৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা, সর্বোচ্চ গ্রিড চাহিদা কখনো ১৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়নি। গ্যাস ছাড়াও তরল জ্বালানি, কয়লা ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। অন্তত ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। 

দেশে প্রায় ৬০০-৭০০ মেগাওয়াট তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেনার আছে। সরকার সবাইকে বিদ্যুৎগ্রিডের আওতায় আনার বড়াই করে। কিন্তু গ্রীষ্মকাল শুরু হতে না হতেই তীব্র লোডশেডিং দেশজুড়ে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই করোনা এবং যুদ্ধ বিশ্ব জ্বালানি বাজারকে অস্থির করে রেখেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মাটির নিচে কয়লা মজুদ আছে, গ্যাস আছে। কেন গণতন্ত্রের  ধ্বজাধারী দেশের সরকার দেশের কয়লা মাটির নিচে রেখে, প্রয়োজন অনুযায়ী গ্যাস উত্তোলন না করে জ্বালানি খাতকে সংকটাপন্ন রাখলো? কি জবাব আছে জ্বালানি উপদেষ্টা, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী,সংশ্লিষ্ট সচিবদের? 

দেশে গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা ২৩০০ এমএমসিএফডি, প্রতিদিন কমছে। অনেকেই মনে করেন ২০২৩ শেষ নাগাদ ২ হাজার এমএমসিএফডিতে নেমে যেতে পারে।  ১ হাজার এমএমসিএফডি সক্ষমতার এলএনজি আমদানি ক্ষমতার প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ সরবরাহ হয়েছে ৮৫০ এমএমসিএফডি। স্পট মার্কেট এলএনজির গগণচুম্বী মূল্যের কারণে পরিমাণ কমে ৬৫০ এমএমসিএফডি হয়ে যাওয়ায় এখন সর্বোচ্চ গ্যাসপ্রাপ্তি ৩ হাজার এমএমসিএফডি। চাহিদা ৪৩০০-৪৪০০ এমএমসিএফডি। কাকে রেখে কাকে গ্যাস দিবে পেট্রোবাংলা। 

এই পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী সরকারের ব্যর্থ পরিকল্পনা এবং আনাড়ি বাস্তবায়ন সক্ষমতা। বিশেষজ্ঞরা ১০ বছর ধরেই তাগাদা দিয়ে আসছেন কয়লা উঠানোর, স্থলে-জলে গ্যাস উত্তোলনের। কোন ভরসায় সরকার কানে তুলো দিয়েছিলো?

দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা হিসাবে এখনই সময় কয়লা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে পেশাদারিত্ব ফিরিয়ে আনার। জাতি অবশ্যই ২০০৯ পরিস্থিতে ফিরে যেতে চাইবেনা। অনেক ভুল হয়েছে আর ভুল করার সুযোগ নেই।


শেয়ার করুন