২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:৫৪:২৮ পূর্বাহ্ন


জ্বালানি এখন জাতীয় সংকট
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৭-২০২২
জ্বালানি এখন জাতীয় সংকট


বলার অবকাশ রাখে না,করোনা ও গোটা বিশ্বে ছায়া যুদ্ধ না হলে বাংলাদেশে বিরাজমান বর্তমান জ্বালানি সংকট, মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি না-ও হতে পারতো। আর যেসব কারণে বাংলাদেশ জ্বালানি খাত বেসামাল হয়ে পড়েছে, সেগুলো বড় করে দেখার সময় এখন নয়। এখন অতীব প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় সংকট মোকাবিলা করার। সংকট সময়ে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের বাহাস কারোই ভালো লাগার কথা নয়। জনদুর্ভোগ নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। অবশ্যই কিছু মানুষের দূরদৃষ্টির অভাব এবং দুর্নীতির কারণে বর্তমান সংকট বাংলাদেশে ঘনীভূত হয়েছে। এখনো সঠিক পরিকল্পনা আর অনেকটা যুদ্ধতুল্য প্রস্তুতি নিয়ে কঠোর কৃচ্ছ্রতাসাধন করলে সংকট উতরে যাওয়া সম্ভব। প্রয়োজন সবাই মাইল জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং তদারকি। 

বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে বাংলাদেশ মার্চ এপ্রিল থেকেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতা অনুশীলন করা হলে এখন সহনীয় হয়তো পর্যায়ে থাকতো সব। কিন্তুঅনেক অফিস-আদালত থেকে শুরু করে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ করে এয়ারকন্ডিশন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণের কথা না বলে সরাসরি মসজিদসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে শীতাতপ যন্ত্র বন্ধ রাখার ঘোষণা ভুল সঙ্কেত দিয়েছিলো। প্রতিক্রিয়া বিবেচনা না করেই ঢালওভাবে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখার কারণে উত্তর বাংলায় এখন বিদ্যুৎ হাহাকার। একমাত্র চালু কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও অচিরে কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে গেলে সংকট ঘনীভূত হবে। লোডশেডিংয়ের সময় শহরাঞ্চলে অসংখ্য ডিজেলচালিত জেনারেটর চলছে। অনেক গার্মেন্টস,শিল্পপ্রতিষ্ঠানও নিরুপায় হয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ডিজেল ব্যবহার করে বিদ্যুতের চাহিদা কিঞ্চিৎ হলেও মেটাচ্ছে। তাই ডিজেল সাশ্রয়ের কৌশল কতটুকু কাজে লাগছে বোধগম্য নয়। আমি নিশ্চিত নই ফিডারগুলোর লোডবিন্যাসের ওপর এনএলডিসির সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ আছে। যদি থাকতো তাহলে কিছু অঞ্চলে এক ঘণ্টার লোডশেডিং তিন ঘণ্টা চার বা পাঁচ ঘণ্টা হতো না। এগুলো প্রমাণ করে জাতীয় গ্রিড নিয়ন্ত্রণ এখনো নিরঙ্কুশ নয়।  

সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা স্থগিতকরণ।  পরিস্থিতি বিচারে ভর্তুকি দিয়ে হলেও অন্তত অক্টোবর মাস পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা উচিত ছিল। আমি মনে করি, অচিরেই তালগোল পাকানো বিদ্যুৎব্যবস্থা সরকারকে বাধ্য করবে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনতে।পাশাপাশি আরেকটু দুশ্চিন্তার বড় কারণ ইতিমধ্যে অনেকের নজরে রয়েছে। সেটা দেশের প্রমাণিত গ্যাস সম্পদ দ্রুত কমে আসছে। এটা মারাত্মক পরিস্থিতির তৈরি হওয়ার ইঙ্গিত দেবে। বাপেক্সের কার্যক্রমে সামান্য কিছু গ্যাস যোগ হলেও হতে পারে ২০২৫ পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়ে নিজেদের উৎপাদন ২৩০০ এমএমসিএফডি থেকে অনেক কমে যাবে। এর মাঝে যদি বিবিয়ানায় সংকট হয়, তাহলে দেশ আঁধার হয়ে যাবে। এতে করে ২০২৫ মধ্যে বাড়তি এলএনজি আমদানির সুযোগ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছেই।

যতোই আমরা বলি, বাংলাদেশ পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের আগে কয়লা উত্তোলন বা গভীর সাগরে গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এমতাবস্থায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে কিছুটা আশার আলো দেখাবে। আমি অন্তত আরো তিনমাস স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের সুপারিশ করবো। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ জ্বালানি ব্যবহার হিসাবি হবার সকল কার্যক্রম নিবিড়ভাবে তদারকি নিশ্চিতকরণ করতে হবে।

বুঝতে হবে ২০০৯ এবং ২০২২ সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষিত। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ সারা দেশে বিস্মৃত। ২০০৯,২০১০ ছিল জ্বালানি বিদ্যুৎ দুর্ভিক্ষ। এখন বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে সংকট। কিছু লোকের ইচ্ছাকৃত ভুল সিদ্ধান্ত সংকট ঘনীভূত করেছে। যথাসময়ে নিজেদের জ্বালানি উত্তলোন করা হলে আর জ্বালানি সক্ষমতা নিয়ে বাগাড়ম্বর করা না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকতো। ভুলের কারণে শাসক দলের রাজনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। তবুও মূল বিরোধীদলের পুলকিত হবার কারণ নেই। বাংলাদেশি সবার জেলি মাছের মতো সৃষ্টি শক্তি না। তারা সবাই জানেন, বিএনপি ১৯৯০-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ জ্বালানি বিদ্যুৎ নিয়ে কিছুই করেনি।

 

শেয়ার করুন