২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ১১:৫০:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


কথার কথকতা
মাইন উদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-১২-২০২২
কথার কথকতা


মৃত্যুকে এতো বীভৎস ও ভীতিকর করে চিত্রায়িত করে মানবসমাজে সবচেয়ে ভয়ংকর একটা অনুভূতি সৃষ্টির প্রচেষ্টা কবে শুরু হয়েছিলো তা আমরা জানি না। তবে এই ভীতির তীব্রতা আমরা মরার আগেই টের পয়ে যাই। তাই ভীতি ক্রমশ বাড়তেই থাকে। আপনি পৃথিবীতে কখন এসেছেন, তা আপনি জানেন না আর কখন এখান থেকে চলে যাবেন তাও আপনি জানেন না- এ কথাগুলো সবাই জানে। জীবদ্দশায় ভালো কাজ করলে পরজীবনে পুরস্কার আছে আর খারাপ কাজ করলে শাস্তি আছে এটাও ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সবাই জানে। মানবজাতির মধ্যে প্রচলিত সব ধর্মই কল্যাণের কথা বলে, অন্যায় করতে মানা করে। ইহকাল ও পরকালের বিষয়টিও একরকম স্পষ্ট। তাহলে মৃত্যু বিষয়টি এতো ভয়ংকর হয়ে উঠলো কখন ও কীভাবে? ক্ষণস্থায়ী জীবনের পর দীর্ঘস্থায়ী আত্মিক জীবন সম্পর্কেও মোটামুটি সবাই জানে। তার মানে এ জীবন থেকে প্রস্থানের বিষয়টিও পরিষ্কার। তাহলে মৃত্যু নামক তোরণ এবং এটি অতিক্রমের বিষয়টি এতো ভীতিপ্রদ করে চিত্রায়িত করতে হবে কেন? ভালো কাজ করে প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেই তো হয়! হয়তো কেউ কেউ বলবেন, বলা যতো সহজ প্রস্তুতি অতো সহজ নয়। আমরা বলবো, জটিল না করে তুলে সহজ রাস্তায় গেলেই তো হয়। যাক, এ বিষয়টি কঠিন করে তুলে কেউ বাণিজ্য করার চেষ্টা করছে কি না, তার অনুসন্ধানে আজ আমরা যাচ্ছি না। আজ আমরা আমাদের এক বন্ধু কীভাবে এ বিষয় নিয়ে একটা সংকটে পড়েছেন সেটা দেখবো। যেখানে কষ্টে থাকা মানুষও পৃথিবী ছেড়ে যেতে চান না, সেখানে তিনি আর এখানে থাকার অর্থই খুঁজে পাচ্ছেন না। অবশ্য স্বেচ্ছায় বিদায় নেয়ার মতো অঘটন ঘটাতেও তিনি রাজি নন। তাহলে বিষয়টার জটিলতা কোথায়? চলুন খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করা যাক।

আমাদের এই বন্ধুটির নাম আবদুল হক। চিন্তা-ভাবনা এবং কথাবার্তায় অন্যরকম মানুষ, স্বকীয়তাম-িত। তার কথা একেবারেই ভিন্নরকম। তার বক্তব্য অনেকটা এই রকম- সৃষ্টিকর্তা কাদামাটি দিয়ে মানুষ বানালেন, তাতে তিনি রুহ ফুঁকে দিলেন, এটি সচল হলো আর তিনি সবাইকে বললেন এই সৃষ্টিটিকে স্বাগতম জানাতে। জীবনযাপনের পর একসময় তিনি তাঁর ফুঁকে দেয়া রুহ প্রত্যাহার করে নেবেন আর এটি অচল হয়ে যাবে এবং আবার মাটিতে মিশে যাবে। জীবনের ভালো-মন্দ কাজের জন্য পুরস্কার ও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

আবদুল হকের কথা হলো: সবই তো পরিষ্কার, এতে অস্পষ্ট এবং রহস্যজনক কিছু তো নেই। ভালো কাজ করলেই তো হলো। তাহলে ফিরে যাবার ভীতি মনে আসবে না, প্রস্থানকে একটি স্বাভাবিক ও রুটিনমাফিক বিষয় মনে হবে। অন্যদিকে মানুষ খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য সচেষ্ট হবে।

এই স্বাভাবিক হিসাব-নিকাশের বাইরে অবশ্য আবদুল হকের একটা ব্যতিক্রমী প্রশ্ন আছে। তার কথা হলো: শরীরটা মাটির আর প্রাণটি হলো সৃষ্টকর্তার ফুঁ; স্রষ্টার মাটির মানুষ সচল করা স্বীয় রহস্য বস্তুটি ফিরিয়ে নেয়ার পর যেটি রইলো সেটি হলো মাটির পুতুল যা মাটিতেই মিশে যাবে। তাহলে আমি আবদুল হক কই? আবদুল হক তো নেই!

আবদুল হকের এই শেষোক্ত প্রশ্নটি অনেক জটিল ও গভীর, এটা সমাধানের জন্য উচ্চমানের প-িত লাগবে, আমরা পারবো না। সুতরাং এ বিষয়টিও এখন থাক। এখন আমরা একটা বিষয় নিয়েই কথা বলবো, তা হলো, আবদুল হক বলছে: আমার এখন পৃথিবীতে থাকার কি দরকার? শত দুঃখ-কষ্টে থাকার পরও মানুষ যেখানে পৃথিবী ছেড়ে যেতে চায় না, সেখানে তার চলে যেতে চাওয়াটা অবশ্যই ভাববার বিষয়। সে বলে, আমার এখন তো এখানে কোনো কাজ নেই! সমাজ আমাকে যতোটুকু জীবন-চুল্লিতে ভাজবার তা ভাজা হয়ে গেছে। আমি আত্মরক্ষার যতোটুকু চেষ্টা করার ছিলো তাও হয়ে গেছে। এখন আর আমার করণীয় কিছু নেই। কেউ কোনো সমাধান দিতে না পারলে আমি আমার স্রষ্টার কাছ থেকেই উত্তরটা জেনে নেয়ার চেষ্টা করবো।

তার শেষোক্ত কথাটিও তারই মতো রহস্যজনক। আমাদের আরেক বন্ধু বললো, স্রষ্টার অফিসটা কি সিটি অফিসের মতো যে, গিয়ে জানতে চাইলেই জানা যাবে? আমি একে বললাম, চুপ থেমে যা, কোনো কথা নয়। আমরা ওর শেষ বক্তব্য শোনার জন্য দু-একদিন অপেক্ষা করে দেখি।

আবদুল হকের পরবর্তী রিপোর্টের জন্য আমাদের কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিলো। স্রষ্টার কাছ থেকে পৃথিবীতে আরো থাকবার প্রয়োজনের বিষয়টার কোনো সমাধান এসেছে কিনা তা জানতে চাইলে আমরা তার কাছ থেকে যা জানলাম তাও অন্যরকম। আবদুল হকের ভাষ্য আমরা এখানে তুলে ধরছি।

এক রাতে স্বপ্নে দেখলাম, আমি এক বিশাল নির্জন মাঠে একা হাঁটছি। হঠাৎ দূরে একটি আলোর কু-ুলি চোখে পড়লো। আমি সেদিকে এগিয়ে গেলাম। দেখি এক শশ্রূমণ্ডিত সুদর্শন বৃদ্ধ বসে বসে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছেন। আমি কাছাকাছি যেতেই তিনি মন্তব্য করলেন- খোলা মাঠে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়ানো হচ্ছে বুঝি? উত্তর পাওয়া গেলো? আমি উত্তর দিলাম- জি না, পাওয়া যায়নি। তিনি বললেন, বসো উত্তর পাবে। উত্তর আসলে তুমিও জানো কিন্তু প্রয়োজনের সময় উত্তরটি মনে আসেনি। বসো, আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি।

তুমি যদি পৃথিবীতে না থাকো, তাহলে পৃথিবীর মানুষের জন্য কল্যাণ কামনা করতে পারবে না। জীবিত না থাকলে মৃত মানুষদের জন্য মঙ্গল প্রার্থনা করা সম্ভব হবে না। প্রাণ না থাকলে তুমি নিজের ইহকাল ও পরকালের জন্য হাত তুলে মোনাজাত করতে পারছো না। তো পৃথিবীতে আরো কিছুদিন থাকার প্রয়োজন আছে বল কি মনে হয়?

আবদুল হক বললো- কিন্তু আমার খাবার আসবে কোত্থেকে? উত্তর এলো- তোমার পায়ের কাছের ওই অতিক্ষুদ্র পিঁপড়াটি এবং সমুদ্রের ওই বিশাল তিমি মাছটি, ওদের খাবার কে জোগায়? এসব নিয়ে কোনো চিন্তাই করবে না, স্রষ্টার বিষয়, তিনিই জানেন কীভাবে কি হয়।

এতোটুকু শোনার পর আমার হঠাৎ শরীর কেঁপে উঠলো, আমার শরীর থেকেও আলোর বিচ্ছুরণ হতে শুরু করলো। প্রকম্পিত অবস্থায় ঘর্মাক্ত কলেবরে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। কতক্ষণ নির্বাক বসে থেকে অনেকটা প্রশান্ত হবার পর আমার কণ্ঠ থেকে কয়েকটা শব্দ বেরোলো- জানা থাকা বিষয়গুলো কীভাবে আমি ভুলে গেলাম?

শেয়ার করুন