৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৭:৫৫:০৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


শ্রীলঙ্কার সরকার পতনই শেষ নয়: ইউএসএআইডি
বিশ্বমন্দার কবলে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া
কাজী ইবনে শাকুর
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৮-২০২২
বিশ্বমন্দার কবলে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া


অর্থনৈতিক অস্থিরতা, মুদ্রাস্ফীতি, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমতি, বিভিন্ন স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশকে আইএমএফের মুখাপেক্ষী করেছে। ডলারের মূল্যমান বৃদ্ধি ও একইসাথে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আমেরিকার অর্থনীতিকেও ক্রমান্বয়ে আরেকদফা মন্দার দিকে ধাবিত করছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশসহ প্রত্যেকটি দেশ কোভিড-১৯ ও রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রভাবে এখন একদিকে যেমন অর্থনৈতিক মন্দা, শিল্পোৎপাদনে তেলের দামে ঊর্ধ্বগতিতে প্রভাব, প্রধান বিদেশি মুদ্রা অর্জনের খাত গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি নুয়ে পড়া উৎপাদন ও বিদেশি মুদ্রা রিজার্ভে যে টান পড়েছে, তাতে পরিশেষে আইএমএফের দ্বারস্থ হতে হয়েছে।

এদিকে বিশ্বমন্দার ভয়ে বিদেশ থেকে স্বদেশে অর্থ পাঠানোও কমে গেছে ব্যাপক হারে। গত ২৭ জুলাই নিউইয়র্ক টাইমস পুরো দক্ষিণ এশিয়ার চিত্র তুলে ধরে এক প্রতিবেদনে বলেছে যে, একদিকে বাংলাদেশে এখন চলছে বিদ্যুতের রেশনিং, অন্যদিকে পেশ হয়েছে আইএমএফের ঋণের জন্য আবেদন। ২০১১ সালের পর এই প্রথম বাংলাদেশ আইএমএফের ঋণ চেয়েছে। শ্রীলঙ্কার সরকার পতনের পর আইএমএফের ঋণের জন্য প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে।

অন্যদিকে পাকিস্তান ৬ বিলিয়ন ডলারের প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে আইএমএফের সাথে। যেসব দেশের অর্থনীতিতে আমদানি করা তেলের ওপর নির্ভর করতে হয়, সেসব দেশের অবস্থা বড়ই সঙ্গীণ। রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে বিপরীত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে সবচেয়ে বেশি। আমদানিকৃত তেলের ওপর নির্ভরতা এসব দেশে সৃষ্টি করেছে অসহনীয় মন্দা, আগামীতে তা আরো প্রকট হতে পারে। বাণিজ্যিক ঘাটতির কারণে বিদেশি মুদ্রা রিজার্ভেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে এ বছরের গোড়ার দিকের ৪৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ এখন ৩৮ বিলিয়নে নেমে এসেছে। চার মাসের আমদানি খরচ রিজার্ভে থাকলেও বিদেশি মুদ্রার আয় কমছে। ব্যয়বহুল ডিজেল আমদানি, গ্যাসোলিন ও রান্নার গ্যাস আমদানিতে দক্ষিণ এশিয়ায় সরকারগুলোর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।

শ্রীলঙ্কায় গাড়িতে তেল ভরার জন্য কয়েকদিন লাইনে দাঁড়াতে হয়। সরকার গত এপ্রিল মাসে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। সরকারের পতন ঘটায় এই ব্যর্থতা। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্সির প্রশাসক সামান্ত পাওয়ার বলেন, শ্রীলঙ্কা সরকারের প্রথম পতন হলেও অন্তত খাদ্য ও জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির কারণে মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে ১৭টি দেশে। যদি ইতিহাস আমাদের চালিকাশক্তি হয়, তাহলে শ্রীলঙ্কা সরকার শেষ সরকার নয় যার পতন হয়েছে।

নেপাল হচ্ছে এই অঞ্চলের দরিদ্রতম দেশগুলোর অন্যতম। তারা কোভিড-১৯ ও হিমালয়কেন্দ্রিক সফর থেকে আয়ের পতনের কারণে বিদেশি মুদ্রার চরম অভাবে আছে।

নেপাল সরকার তাদের আমদানিকৃত ডিজেল, গ্যাস ও অন্যান্য পেট্রোলিয়ামের জন্য বাজেটের এক-পঞ্চমাংশ ব্যয় করেছে। ভারতের কাছে তারা তেলের জন্য ঋণগ্রস্ত। আর এ ঋণ ভয়ঙ্কর পর্যায়ে বেড়েছে। জ্বালানি মূল্য বাড়লে সবকিছুর মূল্য বাড়ে। 

একইভাবে ভারতেও বিদেশি মুদ্রা জলের মতো ব্যয় হচ্ছে। গত সপ্তাহে ভারতের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৭.৫ বিলিয়ন ডলার কমেছে বলে নিউইয়র্ক টাইমস-এ রিপোর্ট হয়েছে। ভারত এ জন্য সস্তায় রাশিয়ার তেল আমদানির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতের পার্লামেন্টে এ নিয়ে প্রতিবাদ চরমে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে প্রতিবাদের জন্য গত সপ্তাহে মঙ্গলবার স্বল্পসময়ের জন্য আটক করা হয়েছিল। বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন। ভারত তার মুদ্রামান ঠিক রাখার জন্য ডলার বিক্রি করে দিচ্ছে। 

পাকিস্তান আইএমএফের সাথে চুক্তি করার পর বাংলাদেশ চুক্তির জন্য আবেদন করেছে। সম্ভবত বাংলাদেশ ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে। আইএমএফের চুক্তি মোতাবেক পাকিস্তানে যেমন কৃচ্ছ্রতা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও প্রধানমন্ত্রী কৃচ্ছতা, কৃচ্ছতা বলে চিৎকার করছেন। টাকা পাচারের কথা না বললেও অগোচরে নিজের মাথার চুল ছিঁড়ছেন। ২০২০ সালে বাংলাদেশে দ্রুত অর্থ মন্দা দেখা দিয়েছিল কোভিডের শুরুতে। এর পাওয়ার হাউজ হচ্ছে গার্মেন্টস এক্সপোর্ট ইন্ডাস্ট্রি। বিশ্বের দ্বিতীয় গার্মেন্টস রফতানিকারক দেশ। এই সেক্টর অর্থনীতির মন্দা কাটাতে সহায়ক রয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সৃষ্টি করে। বাংলাদেশ সরকার এক সপ্তাহ ধরে নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিচ্ছে। ডিজেলচালিত পাওয়ার প্ল্যান্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ ডিজেলের দাম আকাশচুম্বী। তাছাড়া গ্যাসস্টেশন সপ্তাহে একদিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির কারণে গার্মেন্টস শিল্পের লাভের খাতায় ঘাটতি পড়ছে। 

কোনো শিল্পে অর্ডার বেড়েছে। ১. তেলের মূল্যবৃদ্ধির আগে যেখানে ১০০ থেকে ১৫০ লিটার তেল লাগতো, সেখানে এখন লাগে ১ হাজার লিটার। বাংলাদেশ এখন দুটি আঘাত সহ্য করছে। একটি কোভিড, অন্যটি রাশিয়া-ইউক্রেন ওয়ার। তবে এ দেশের এতো আঘাত সহ্যের ক্ষমতা নেই।

আইএমএফের মন্দায় হুঁশিয়ারি

এদিকে আইএমএফ বিশ্বব্যাপী মন্দার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সাম্প্রতিক ওয়ার্ল্ড ইসলামিক আউটলুকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউক্রেনের অর্থনীতিতে মন্দা আরো প্রকট হবে। ইউক্রেনে যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি ও অতিমারীপূর্ণ প্রাদুর্ভাব সব মহাদেশে দুর্যোগ টেনে এনেছে। যদি এই হুমকি আরো বাড়ে, তাহলে ১৯৭০ সালের পর বিশ্ব অর্থনীতি আরেকদফা দুর্বল সময় অতিক্রম করবে। 

আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়ারে অলিভার গৌরিনচস বলেন,, মন্দার ওপর দাঁড়িয়ে বিশ্ব অতিশিগগিরই কাঁপবে। আর তা হবে ২ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার। 

বিশ্ব প্রবৃদ্ধি ও আইএমএফ কমিয়ে দেখছে গত বছর যেখানে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬.১ শতাংশ এ বছর ২০২২ সালে তা ৩.২ শতাংশে নেমে আসবে। আগামী বছর তা আরো কমবে। আইএমএফ এই বছর যে হারে মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনার কথা বলেছিল তা আরো দ্রুত ও বেশি হারে বাড়ছে। ধনী দেশসমূহে যেখানে ৬.৬ শতাংশ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, উন্নয়নশীল বাজারে তা হবে ৯.৫ শতাংশ বৃদ্ধি।

এর মধ্যে ডলারের দাম আরো বাড়বে। বাংলাদেশে এখন ১ ডলার সমান ১১২ থেকে ১১৪ টাকা। মুদ্রাস্ফীতি আরো বাড়বে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাড়বে যেভাবে তেলের মূল্য।


 

শেয়ার করুন