২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১১:৪৮:২০ অপরাহ্ন


শেখ হাসিনার ভারত সফর : প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সমীকরণ মেলানো দায়
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৯-২০২২
শেখ হাসিনার ভারত সফর : প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সমীকরণ মেলানো দায় শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি


কঠিন সংকট সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ ভারত সফর। প্রত্যাশিত এ সফরে বেশকিছু দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুলচেরা বিশ্লেষণে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সমীকরণ মেলাবেন অর্থনীতিবিদরা বা কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল। আমি সেই দীর্ঘ আলোচনা বা বিতর্কে যাবো না। তবে করোনা, রাশিয়া যুদ্ধ যেভাবে বিশ্ব অর্থনীতিকে নাড়া দিয়ে বিপর্যস্ত করে রেখেছে, তখন দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মাঝে বিরাজিত বিভিন্ন সমস্যার কতটুকু নিষ্পত্তি হলো সেটির নাতিদীর্ঘ বিশ্লেষণ হতেই পারে।

বাংলাদেশকে ভারতের করিডোর বাধাহীনভাবে ব্যবহার করে শুল্কবিহীন তৃতীয় দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করার ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিত করা উল্লেখযোগ্য অর্জন বলতেই হবে। সেই সঙ্গে ভারত বাংলাদেশ বাণিজ্য ঘাটতি দূরীকরণে শুল্ক অশুল্ক বাধা কতটুকু দূর হয়েছে- সেটি বিবেচনা করার দরকার আছে। বাংলাদেশ কি পারবে বাধাহীনভাবে ভুটান-নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে? 

তিস্তা পানি বণ্টন ফাইল বন্দি রেখে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন বিষয়ে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক আমি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো মনে করি। তবুও দীর্ঘ ১২ বছর পর যৌথ যদি কমিশনের বৈঠক থেকে কিছু একটা হলো। এটির দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই। সেই সঙ্গে চাই সকল অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন বিষয়টির ন্যূনতম সময়ে বাস্তব সম্মত সমাধান। 

নদীসমূহের দূষণ রোধ এবং নাব্য সংরক্ষণ করার জন্য উভয় দেশের অঙ্গীকার বন্ধু দেশ দুটির সার্বভৌমত্বকে একই সমতলে বিবেচনা করে সমাধান করতে হবে। উজানের দেশ হিসেবে ভারতের দায় এখানে বেশি। উজানে অনেক বাঁধ দিয়ে পানি অপসারণ করার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের নদীগুলো নাব্য হারিয়েছে। ভারতকে বাস্তবতা মেনে নিয়ে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। 

ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ নিবিড় এবং নিশ্চিত করার জন্য সকল ভারতীয় বাধা অপসারণের সিদ্ধান্তকেও সাধুবাদ জানাই। এটি অনেক আগেই হয় উচিত ছিল। 

ভারত বাংলাদেশ দীর্ঘ সীমান্তে কেন বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করতে হয়? কারণটা কম-বেশি সবার জানা। আমি এবার অন্তত দুটি সীমান্ত পরিদর্শন করেছি, ওখানে বিভিন্ন সোর্স থেকে জানার চেষ্টা করেছি। সীমান্তে এমন কিছুর আলামত দেখিনি যে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য বিএসএফকে গুলি করে মানুষ হত্যা করতে হবে। দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে এবং সীমান্ত এলাকায় বৈধ বাণিজ্য সরলীকরণের মাধ্যমে মৃত্যুশূন্য করার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি। 

ভারত মাঝে মাঝেই পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে পেঁয়াজ, চিনি, আদা, রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রফতানি স্থগিত করে। সংকট সৃষ্টি হয় বাংলাদেশে। এই বিষয়ে আগাম তথ্য বিনিময়ের সম্মতিকে সাধুবাদ জানাই। সেই সঙ্গে নিজেদের উৎপাদন বাড়িয়ে বাংলাদেশের উচিত স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ভারত নির্ভরতা সীমিত করা। 

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মুজিবনগরের সঙ্গে ভারতের সড়ক যোগাযোগ উন্নত হলে এলাকাটির পর্যাপ্ত সুবিধা সম্প্রসারিত হবে সন্দেহ নেই।

শুনেছি, বাংলাদেশের জ্বালানি সমস্যা সমাধানের অন্যতম উপায় হিসেবে ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়ে আলাপ হয়েছে। ভারত নিজেই বিভিন্ন দেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করছে। এমনকি রাশিয়া থেকেও সুলভ মূল্যে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানি করে বাণিজ্য করছে। বাংলাদেশের কাছেও কিন্তু রাশিয়া তেল এবং তেল জাতীয় দ্রব্য সুলভ মূল্যে রফতানি করার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। প্রশ্ন থাকবেই কেন তেল আমদানির জন্য ভারতের দ্বারস্থ হতেই হবে? 

আশা ছিল, আকাশচুম্বী, অর্জন হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে।  জানি না সকল আলোচনা উভয় দেশের সার্বভৌমত্ব সম্মান করে সমতল ভূমিতে হয়েছে কিনা। বাংলাদেশ সার্বভৌমত্ব অধিকার আছে দুনিয়ার যে কোনো দেশের সঙ্গে বাধাহীন বাণিজ্য করার। আমি রাশিয়া থেকে বাংলাদেশের জ্বালানি আমদানির সিদ্ধান্ত দেখতে চাই। সেটি হলে সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে কমিয়ে আনতে পারবে মনে করি। সেটি দ্রুত প্রয়োজন। ভারত বাংলাদেশ সমস্ত সড়কগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বা অপর্যাপ্ত বলবো। তবুও তো কিছু হলো।

শেয়ার করুন