২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৮:২৯:০১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


রোহিঙ্গা ফেরত না নিতে অজুহাত খুঁজছে সামরিক জান্তা
মিয়ানমারের উসকানীতে পা দেবে না বাংলাদেশ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৯-২০২২
মিয়ানমারের উসকানীতে পা দেবে না বাংলাদেশ মিয়ানমারের কয়েকজন সেনা সদস্য


বাংলাদেশ দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছে মিয়ানমারের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে চায় না বাংলাদেশ। এমনিতেই মিয়ানমারের উপর একটা আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। যাতে তারা তাদের দেশ থেকে আসা ১২ লাখের উপর রোহিঙ্গা ফেরত নেয়। কিন্তু সেটা তো তারা নিচ্ছেই না উল্টা উসকানীমূলক কর্মকান্ড শুরু করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। বাংলাদেশ এসব উসকানিতে জড়ানোর অর্থই রোহিঙ্গা ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা বেড়ে যাওয়া ও মিয়ানমারের জান্তা সরকারের অজুহাত দাঁড় হয়ে যাওয়া। এ জন্যই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মর্টারশেল হামলা ও আকাশ সীমা লংঘন করে যুদ্ধ বিমান ও যুদ্ধে ব্যাবহার করা হেলিকাপ্টার ঢুকে উসকানীর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এতে বাংলাদেশ টেকনিক্যালী ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। 

তবে মিয়ানমার বারবার বাংলাদেশের ভুখন্ডে আরাকান আর্মি ও আরসার ক্যাম্প ও পরিখা রয়েছে বলে মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে সীমান্তে হামলার উপলক্ষ তৈরি করেছে। এ ব্যাপারে একটা প্রতিবাদমূলক চিঠিও তারা বাংলাদেশের মিয়ানমারস্থ রাষ্ট্রদূত মনজুরুলের নিকট হস্তান্তর করে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতকে ডেকে যে সব কথা তারা বলেছে তার মধ্যে তারা এটা উল্লেখযোগ্য। তারা বলছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মি ও আরসার পরিখা এবং ঘাঁটি রয়েছে। এমন তথ্য অবশ্য গত ৭ সেপ্টেম্বর কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরীকে জানিয়েছিল মিয়ানমার। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সোমবারের বৈঠকে  আবার সে বিষয়টি তুলে ধরেন জ ফিউ উইন। তিনি ওই ঘাঁটিগুলোর বিষয়ে তদন্তের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং সেগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। পরে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে একটি অনানুষ্ঠানিক পত্র হস্তান্তর করেন। এটাও মিয়ানমারের একটা উসকানীমূলক প্রিপ্ল্যান কর্মকান্ড। তবে বাংলাদেশ এটা নিয়ে বাড়াবাড়িতে যায়নি।  

এদিকে মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি ও হতাহতের ঘটনায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ডেকে বাংলাদেশের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে সরকার। গত ২০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আসিয়ানভুক্ত দেশের বাইরে অন্য সব দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানে তাদেরকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনার বিষয়ে ব্রিফ করেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশেদ আলম। আগের দিন ১৯ সেপ্টেম্বর সোমবার আসিয়ানভুক্ত সাত দেশের মিশন প্রধানদের একই রকম ব্রিফ করেছিলেন তিনি। 

মঙ্গলবার কূটনীতিকদের ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের খুরশেদ আলম বলেন, “আজকে যারা এসেছিলেন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রদূতদের আমরা একই কথা বলেছি যে, আমরা রোহিঙ্গাদের নিয়েছি ৫ বছর হয়ে গেল, তারা একজন রোহিঙ্গাও আজ পর্যন্ত ফেরত নেয়নি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন যে, আমরা ধৈর্য্যের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু আমরা এমন কিছু করি নাই, যার জন্য মিয়ানমারের গোলা এসে আমাদের জনগণ, যারা আমাদের সীমান্তের ভিতরে আছে, তাদের জানমালের নিরাপত্তা ব্যাহত করবে এবং তারা গরু-বাছুর নিয়ে বাইরে যেতে পারবে না, তাদের ধানক্ষেতে যেতে পারবে না, তাদের ঘরবাড়িতে থাকতে পারবে না! এটাতো চলতে দেওয়া যায় না!  

তিনি আরও বলেন, 'এই কারণে আমরা তাদের বলেছি যে, আপনাদের সাহায্য আমরা চাই, যাতে করে মিয়ানমার এ অঞ্চলে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভবিষ্যতে ফায়দা লুটতে না পারে।” খুরশেদ আলম আরো বলেন, “আমরা কোনোভাবেই এখানে জড়িত হতে চাই না। এখানে জড়িত হলে মিয়ানমার হয়ত সুযোগ পাবে, এই রোহিঙ্গাদের ফেরত না নেওয়ার জন্য অজুহাত পাবে। সে রকম কোনো অজুহাত আমরা মিয়ানমারকে এই মুহূর্তে দিতে চাচ্ছি না।” 

এ সময় ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “ব্রিফিংয়ে আমরা বলেছি, ইচ্ছাপূর্বক আমাদেরকে এই কনফ্লিক্টে জড়ানোর যে প্রচেষ্টা হচ্ছে সেই প্রচেষ্টায় জড়িত হব না। আমরা আপনাদেরকে এটা অবহিত করলাম, আপনারা যে অ্যাকশন নেওয়া মনে করেন, যথাযথ মনে করবেন, সেটা আপনারা নেবেন।”  

এদিকে মিয়ানমার সীমান্তে থেমে থেমে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে এটা একেবারেই বন্ধ। আবার কিছুদিন পর আবার শোনা যায়। বলা হচ্ছে মিয়ানমার তাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে রাখাইন এলাকায় আরকান আর্মি ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কথিত সে লড়াই চলছে দুমাস থেকে। তবে এগুলো কী আসলেই লড়াই নাকি বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ফেরত না নেয়ার মহড়া বা উসকানি সেটা পুরাপুরি ঠাহর করা না গেলেও ওই (রাখাইন) অঞ্চল নিয়ে মিয়ানমারের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।

এমনিতেই দেশে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী লড়াই চলছে। সে অস্থিরতা রয়েছে। এরপর রাখাইন অঞ্চল নিয়েও তাদের টেনশন। সাধারণভাবে আন্তর্জাতিক সাপোর্টও নেই দেশটির উপর। গোপনে কেউ কেউ কিছু সহায়তা দিলেও সেটা পর্যাপ্ত নয়। সব মিলিয়ে মিয়ানমারের জান্তা সরকার একটা অস্বস্থির মধ্যদিয়েই যাচ্ছে। যার কিছু টেনশন তারা বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছে বৈ কি!   

সর্বশেষ, মিয়ানমারের ভেতরে গোলাগুলি অব্যাহত থাকায় এখনও আতঙ্ক কাটেনি সীমান্তে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু এলাকার জনজীবন পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। গত সোমবারও দফায় দফায় সীমান্তের ওপারের গোলার বিকট শব্দ এপারের বাসিন্দাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। আবার কখন গোলা এসে পড়ে- আছে সেই আতঙ্কও। তবে সেটা আগের তুলনায় কমে গেছে অনেকাংশে।

শেয়ার করুন