২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৯:২০:১২ পূর্বাহ্ন


নির্বাচন নিয়ে ‘অশনিসঙ্কেত’
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১০-২০২২
নির্বাচন নিয়ে ‘অশনিসঙ্কেত’


বিধি মোতাবেক ২০২৩-এর শেষ অথবা ২০২৪-এর সূচনায় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। এখনো সে নির্বাচনের বাকি ১৪ মাসের অধিক। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নির্বাচন নিয়ে আগাম ভাসছে যে সব কথা- সেগুলো শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। শীর্ষ রাজনীতিবিদদের কেউ কেউ বলছেন জোরজবরদস্তির মাধ্যমে নির্বাচন হবে বলে আভাস পাচ্ছি। আবার এক পক্ষ বলছে নির্বাচনে বাধা ও বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করলে বিএনপিকে আগুনের মুখে পড়তে হবে। দুটি কথাই এসেছে সরকারি দল ও সরকারি দলের জোটে থাকা ও বর্তমানে সংসদে বিরোধীদলের আসনে থাকা নেতৃত্বের কাছ থেকে। আসলেই কী? 




দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বহুদিন থেকেই শুরু হয়েছে উত্তাপ। যেমনটা বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলো বলে আসছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে হবে এবারের নির্বাচন। ক্ষমতাসীনরা সেটা উড়িয়ে দিচ্ছেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে নতুন করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে নতুন নির্বাচন কমিশন। তারাই এখন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের। তারা মনে করছে দেড় শতাধিক আসনে ইভিএমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের। এতে করে প্রয়োজনীয় ইভিএম ক্রয়ের আপ্রাণ চেষ্টা তাদের। সংলাপও করেছেন তারা এর আগে রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে। তবে এ প্রক্রিয়ায় যাবে না নির্বাচনে বিএনপি যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ দাতাদেশসমূহের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন আয়োজনের। এরই মধ্যে দুই রাজনীতিবিদের আগাম কথা একধরনের কানাঘুষা চলছে।  



সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের  

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, ‘চলমান সহিংস রাজনীতি আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য অশনিসঙ্কেত। সহিংসতার মাধ্যমে জোরজবরদস্তির একটি নির্বাচন হবে, সরকারি দল থেকে এমন মেসেজ আমরা পাচ্ছি। এটা দেশ ও জাতির জন্য দুঃখজনক।’

সন্ত্রাসীদের হামলায় পা বিচ্ছিন্ন হওয়া জাতীয় পার্টির নেতা সফিকুল ইসলামকে গত শনিবার (১ অক্টোবর ’২২) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এসব কথা বলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। জিএম কাদের বলেন, কথা বলা, সভা সমাবেশ ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের অধিকার থাকতে হবে। স্বাভাবিক রাজনীতি বাধাগ্রস্ত হলে সহিংস রাজনীতি আসে, যা দেশের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনবে। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলামকে সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে পা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। 



গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয়ভাবে সফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি শেষ সময় পর্যন্ত নির্বাচনে লড়েছে। ফলে সরকার সমর্থকরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে পারেনি। নির্বাচনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের হয়রানিমূলক মামলা ও হামলার শিকার হচ্ছেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা। এমন একটি হয়রানিমূলক মামলায় হাজিরা দিতে যাচ্ছিলেন সফিকুল ইসলাম। পথে হামলার শিকার হন তিনি।




ওবায়দুল কাদের 

নির্বাচন প্রতিহত করার নামে দেশে কোনো বিশৃঙ্খলা করলে জনগণের প্রতিরোধে বিএনপিকে আগুনের মুখে পড়তে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ১ অক্টোবর রাজধানীর হাজারীবাগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘বিএনপি-জামায়াতের আগুন-সন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নৈরাজ্যের’ প্রতিবাদে বিক্ষোভ এবং সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির ইচ্ছায় নয়, ‘সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে ৩০ আসনও পাবে না। তাহলে কি বিএনপির মহাসচিব জ্যোতিষবিদ হয়ে গেছেন?’ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালেও বিএনপির নেত্রী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ৩০ আসনও পাবে না। কিন্তু ভোটে দেখা গেল উল্টো বিএনপিই ৩০ আসন পায়নি।’ আগামী নির্বাচনের ফলাফল কী হবে, তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ও দেশের জনগণ জানে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপির নির্বাচনে আসা, না আসা প্রসঙ্গে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, ‘আগেরবারও বিএনপি নির্বাচনে আসবে না বলে জানিয়েছিল। কিন্তু গাধা পানি ঘোলা করে খায়; এটা প্রমাণ করতে তারা পরে ঠিকই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।’

ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হলে বিএনপির কপাল পুড়বে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ জন্যই তারা এর বিরোধিতা করছে। বিএনপি হচ্ছে ভোট ডাকাতের সরদার, তাই বিএনপি ভোট ডাকাতি করার জন্য ইভিএমের বিরোধিতা করছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে আসা, না আসা বিএনপির একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। তবে আওয়ামী লীগ চায় বিএনপি নির্বাচনে আসুক। কিন্তু কাউকে জোর করে নির্বাচনে আনার কোনো দরকার নেই।

হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ সেলিমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, কেন্দ্রীয়  কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন, শাহাবুদ্দিন ফরাজি এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী, সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, সাংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন প্রমুখ। 

তবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের শঙ্কা জোরজবরদস্তির কথা ও ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনে বিএনপির বাধাদান প্রসঙ্গটা এত আগেভাগে কেন উচ্চারিত হচ্ছে প্রশ্নটা সেখানেই। যেহেতু এক বছরের অধিক সময় বাকি এমনি মুহূর্তে কোথাকার পানি কোথায় গড়াবে সেটা তো অনেক দূর। বিএনপি এক্ষুনি নির্বাচনে বাধা দেয়ার বিষয়টা নিয়ে আলোচিত হচ্ছে কেন? সড়ক ও সেতুমন্ত্রী তো বুঝেশুনেই কথা বলবেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। তিনি যে কথা উচ্চারণ করেছেন নির্বাচনে বাধাদান সেটা তৎপর্যপূর্ণ। 

একই সঙ্গে যখন তাদের সাবেক শরিক দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানও যখন বলছেন যে জোরজবরদস্তির একটা নির্বাচন হবে বলে খবর পাচ্ছি এবং একটা ম্যাসেজও তার কাছে গিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তখন সেটা কী কোনো আগাম নির্বাচন কি-না সেটাও ওই সাধারন মানুষের আলোচনার টেবিলে গুরুত্বসহকারে স্থান পাচ্ছে।

শেয়ার করুন