২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৫:১৬:৪৩ পূর্বাহ্ন


জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী বনে যাওয়ার নেপথ্যে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৪-২০২২
জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী বনে যাওয়ার নেপথ্যে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে পরস্পর সম্প্রীতির এক সময়ের মুহুর্ত : ফাইল ছবি


আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি (জাপা)’র বক্তব্য দলের ভেতরে বাইরে নানান রহস্যের সৃস্টি করেছে। এধরণের বক্তব্য কিসের জন্য দিচ্ছে দলটি বা এর নেপথ্যেই বা কি সে ব্যাপারেও সরকারেও রয়েছে উৎসক্য। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে নানান প্রশ্ন। আবার খোদ সরকারের বিরুদ্ধে এমন ধরণের বক্তব্যের সাথে নিজেদের অবস্থান নিয়ে কথাবার্তা তারা একেতো বিব্রত অন্যদিকে দলটিকে চোখে চোখে রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। খবর সংম্লিস্ট সুত্রের। 

জাতীয় পার্টি (জাপা) কন্ঠে বিদ্রোহের সুর

আবারো বিদ্রোহের সুরে কথা বলছে জাতীয় পার্টি (জাপা) । এর আগে দলটি বিশেষ করে একটি বিশেষ সময়ে গত বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে বেশ চড়া ভাষায় ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন দলের শীর্ষ নেতারা। এমন কি সে বছরে আমন্ত্রণ পেয়েও দলের নেতারা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী মত রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া নিয়ে নানান বক্তব্য চোখে পড়ে। বরং মার্চ জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের হঠ্যাৎ বলে উঠেন জাতীয় পার্টি কোনো জোটে নেই। এমন কি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন। আবার অভিমানের সুরে বলেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে চায় না, জাতীয় পার্টিও আওয়ামী লীগকে চায় না। আবার দলটির পক্ষ থেকে বলা হয় সাংবিধানিকভাবেই দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দেশের সব ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে, তিনি যা বলেন, তার বাইরে কিছু হয় না। আইনি এবং সাংবিধানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত এই একনায়কতন্ত্র ভাঙতে হবে।

এবার কি বলছে জাপা?

সম্প্রতি জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের নিজের দলের নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ‘যারা অন্য দলের দালালি করবে তাদের জায়গা জাপায় হবে না। যারা ব্যক্তি স্বার্থে অন্য দলের দালালি করবে তাদের কঠিন শাস্তি পেতে হবে। জাতীয় পার্টি কোনো দলের বি-টিম নয়। জাপা শুধু তাদের সঙ্গেই বন্ধুত্ব করবে, যারা ক্ষমতায় গিয়ে লুটপাট করবে না। জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিরোধী দলের উপনেতা জিএম কাদের। তিনি আরো বলেন, ‘দেশের মানুষ ভালো নেই। সীমাহীন অর্থনৈতিক কষ্টে আছে। সরকার বলছে দেশ অনেক এগিয়েছে, মানুষের আয় বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি ঈর্ষণীয় পর্যায়ে। কিন্তু টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন দেখলেই বোঝা যায় মানুষ কতটা ভালো আছে।’ আরেক জায়গায় তিনি বলেন, দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আইনশৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, দেশে এখন পরতে পরতে দুর্নীতি। কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। আরেক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে। দেশের কোথাও জবাবদিহিতা নেই। পরতে পরতে দুর্নীতি ছেয়ে গেছে, প্রতিদিনই দুর্নীতি বাড়ছে দেখার যেন কেউ নেই। এভাবে চলতে পারে না। দেশের মানুষ এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায়।’দেশের মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, স্বামী ও সন্তান নিয়ে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হচ্ছেন নারী, ইজ্জতের নিরাপত্তা নেই। নিজের ঘরেও মানুষের নিরাপত্তা নেই। এখন নিজের জমিতে ঘর তুলতেও চাঁদা দিতে হয়। মানুষ জানে না, কার কাছে গেলে কী সমাধান পাওয়া যায়।

কি বলতে চায় জাপা

এদিকে দলের অন্য নেতারাও বলছেন নানান ধরণের কথা। দলের মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন,দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর নাখোশ আর বিএনপিকে বিশ্বাস করে না। গণমানুষের অধিকার নিয়ে মাঠে নামলেই দেশের সুশীল সমাজ জাতীয় পার্টির সঙ্গে থাকবে।  মো. মুজিবুল হক চুন্নু আরো বলেন, ‘দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণে বর্তমান সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। দুর্নীতি, দুঃশাসন আর সরকারি দলের কর্মীদের অত্যাচারে দেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সরকার বলে অনেক উন্নয়ন করেছে অথচ টাকা দিয়ে টিকেট কিনে মানুষ গণপরিবহনে উঠতে পারে না। অন্যদিকে দলের কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন,  এরশাদের সৈনিকরা জেল, জুলুম ও অত্যাচার ভয় পায় না। অন্যদিকে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘এরশাদের জাতীয় পার্টি মানুষের কষ্টে ঘরে বসে থাকতে পারে না।

এসব বক্তব্যে নেপথ্যে কি?

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি (জাপা)’র নেতাদের এসব বক্তব্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিভিন্নভাবে দেখছেন। তারা মনে করে জাপা’র এসব বক্তব্য তাদের মধ্যে এধরণের হতাশা থেকেই বলে যাচ্ছে। কারণ তারা মনে করে আওয়ামী লীগ সমানের দিনে জাতীয় পার্টি (জাপা)’কে সাথে নিয়ে সরকার গঠন করবে কি-না সন্দেহ। এনিয়ে সন্দিহান জাতীয় পার্টি। এর পাাশাপাশি দলটি সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও তেমন কোনো সুবিধা নিতে পারছে না। এমন ক্ষোভের বহি:প্রকাশও ঘঠছে সম্প্রতি কিছু বক্তব্যে। এতে বলা হয় সরকারি দল না করলে এখন কেউ চাকরি পায় না, ব্যবসা করতে পারে না। দেশের সব ক্ষমতাই এক ব্যক্তির হাতে। এটাকে গণতন্ত্র বলা যায় না। ফলে না বেদনায় হয়তোরা সরকারের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি (জাপা) এমন নেতারা কথা বলে যাচ্ছে। 

অন্য উদ্দেশ্য?

রাজনীতিতে এখন নানান কানা ঘুষা চলছে। তাছাড়া চলছে পর্দার আড়ালে নানান জল্পনা-কল্পনা।  বিএনপিসহ প্রায় সব বিরোধী দল বলছে দেশে একটি পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। সরকারের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি (জাপা)’র মধ্যে এমন আশঙ্কাও রয়েছে তাদের জোটের প্রধান দলের ভবিষ্যত নিয়ে। তাহলে কি জাতীয় পার্টির নেতারা সামনের দিনে কোনো পরিবর্তনের সাখে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে এমন বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন? এটা কি তাদের পূর্ব প্রস্তুতি? তা না হলে কেনোইবা বলা হচ্ছে কোন ধরনের সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত- তা এখনই বলবে না সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)।

সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে দলের শীর্ষ নেতা বলেছেন, ভবিষ্যৎ পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে দলীয় ফোরামে আলোচনায় ঠিক করা হবে জাপা নির্বাচনের সময় কেমন সরকার চায়। অথচ আগের দুই জাতীয় নির্বাচন যে ব্যবস্থা ও পদ্ধতিতে হয়েছে- তাতে আওয়ামী লীগ সমর্থন পেয়েছে জাতীয় পাটির। আর এখন দলটির পক্ষ থেকে ভিন্ন সুরে কথা বলার নেপথ্যেই বা কি থাকতে পারে-প্রশ্ন রাজনৈতির বিশ্লেষকদের। অন্যদিকে মঙ্গলবার ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় তার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে সরকারবিরোধীদের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।  এছাড়া ক্ষুুব্ধ জোট শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচানোর পাশাপাশি ভব্যিষতে তাদেরকে কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে তা নিয়েও বৈঠক করা হয়েছে। অনেকে বলছেন ১৪দলের শরিকদের মান-অভিমান দূর করেই প্রধানমন্ত্রী জাপা নেতাদের সাথে বৈঠক করবেন। তার আগে মাঠ গরম করছেন কি-না তা সময় বলে দেবে। 


শেয়ার করুন