২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৭:০০:১১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


এসব কী বলছেন জ্বালানি উপদেষ্টা?
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-১০-২০২২
এসব কী বলছেন জ্বালানি উপদেষ্টা? ডক্টর তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম


বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘসময়ে জ্বালানি-বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডক্টর তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম গত রোববার (২৩ অক্টোবর)  রাজধানীর ওয়েস্টিনে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত ‘শিল্পে জ্বালানি সংকট সমাধান’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছেন, দেশের বিদেশি মুদ্রা রিজার্ভের যে অবস্থা তা থেকে আগামীতে দিনের বেলা বিদ্যুৎ ব্যবহার আর করবো না। তিনি আরো বলেছেন, বাংলাদেশ এখন এলএনজি আমদানি করছে না। ২৫ আমেরিকান ডলার মূল্য ধরে এলএনজি কিনতে হলে সরকারের কাছে ৬ মাসের রিজার্ভ আছেই কিনা, তিনি জানেন না।

জনাব ইলাহী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি পলিসি মেকার। উনার সুপারিশে দেশের জ্বালানি উত্তোলন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়, ওনার সুপারিশেই বিশ্ববাজার থেকে এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গ্যাস সংকটকালে উনার সিদ্ধান্তেই বেছে বেছে শিল্পকারখানাসমূহে গ্যাসসংযোগ প্রদান করা হয়েছে। অথচ দেশে চরমভাবে গ্যাস সংকট, জ্বালানি সংকটজনিত কারণে বিদ্যুৎব্যবস্থা এলোমেলো হয়ে যাবার সময়ে তার এ ধরনের পাবলিক প্লেজে দেয়া মন্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে মানুষ গ্রহণ করেছে। অনেকেই বলে থাকেন বিদ্যমান জ্বালানি সংকটের মূল কারণ দেশের জ্বালানিসম্পদ আহরণ আর উন্নয়নকে উপেক্ষা করে বিপুল চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববাজার থেকে জ্বালানি আমদানির আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। অনেকের মতে, সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে আছে জ্বালানি উপদেষ্টার বড় ভূমিকা। তাইতো বিশেষজ্ঞদের অভিমত মূল্যবান কয়লাসম্পদ উন্নয়ন না করা বা গভীর সমুদ্রে জ্বালানি আহরণে স্থবিরতার নেপথ্যেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এমন কারো কারো মুখ্য ভূমিকা রয়েছে।

ভোলায় মজুদ থাকা গ্যাস প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আরো বলেছেন, ‘আমাদের ভোলায় কিছু গ্যাস আছে, সেগুলো সিএনজিতে করে নিয়ে আসবো। সেখানে ৮০ এমএমসি গ্যাস আছে। আমরা দু-তিন মাসে সেটা নিয়ে আসার চেষ্টা করবো। অপরদিকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে যাচ্ছি। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ পাবো। আরো এক হাজার মেগাওয়াট সোলার প্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদন করবো। তখন অনেকটাই সমস্যার সমাধান করতে পারবো। আজ যদি আমরা গ্যাস বাঁচাতে চাই, তাহলে লোডশেডিং বাড়বে, তখন আপনারাই সমালোচনা করবেন।’

তার এ বক্তব্যে যেটা উনি বলেছেন যে, ভোলার গ্যাস সিএনজি করে আনার উদ্যোগের কথা। এটি আসলে কোনোভাবেই কারিগরি বিবেচনায় সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। কেন এতোদিনে ভোলার গ্যাস পাইপ লাইন দিয়ে জাতীয় গ্যাস গ্রিডে সরবরাহ করা হলো না? গ্যাস সংকট জেনেও কেন কিছু বাছাই করা শিল্পকে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছিল? কার পরিকল্পনায় বাপেক্সকে ১০৮টি গ্যাসকূপ খননের অবাস্তব প্রকল্প দেয়া হয়েছিল? অনেক সময় আর শ্রম অপচয়ের পর প্রকল্প বাতিল করা হলো। কেউ ব্যর্থ পরিকল্পনার দায় নিলো না। জিটিসিএলের মুচাই কমপ্রেশার স্থাপনের কাজ কার উদ্যোগে অবৈধভাবে সেভরনকে দেয়া হয়েছিল? শেভরন-পেট্রোবাংলার মধ্যে বিদ্যমান পিএসসির আওতায় আপস্ট্রিম কোম্পানিকে কোনোভাবে মিড স্ট্রিম জিটিসিএর দায়িত্বাধীন কাজ দেয়া আইনসম্মত নয়।  

সেমিনারে তার বক্তব্যে তিনি আরো বলেছেন, একসময় সব জায়গায় বিদ্যুৎ ছিল না। আমরা চাইলে এসি বন্ধ রাখতে পারি। বিদ্যুৎ ব্যবহার কমাতে পারি। সারাদেশে যে পরিমাণ এসি চলে, তাতেই ৫ থেকে ৬ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা আছে। আমরা এসি বন্ধ রাখবো বা কম চালাবো। এতে দু-তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, গ্যাস সাশ্রয় হবে। সবাই মিলে যদি রাজি হই লোড কমাবো, তাহলে কিছু গ্যাস রিলিজ হবে।

তৌফিক-ই-ইলাহী পেছনের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ‘যুদ্ধের সময় তো আমাদের কিছুই ছিল না তখনো আমরা চলেছি, এখনো পারবো। আমরা শপথ নেবো, দরকার হলে দিনের বেলা কোনো বিদ্যুৎ ব্যবহার করবো না।’

বর্তমান সরকার ২০০৯ যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে, তখন যেমন বিদ্যুৎ সংকট ছিল এখন গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট তার থেকে বেশি বই কম নয়। তাহলে গত ১৪ বছর কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে জনগণ কি পেলো? জনগণ প্রশ্ন করতেই পারে? 

সরকার বলছে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা। কিন্তু জ্বালানি সরবরাহের ব্যর্থতা আর অন্যান্য কারণে ১২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করতে পারছে না। জ্বালানি ব্যবস্থাপনাকে আমলানির্ভর করে মেধাহীন করা হয়েছে। দেশের সম্পদ আহরণ না করে ভ্রান্তনীতির কারণে ভুল পথে হেঁটে আমদানিনির্ভরতার পিছনে ছুঁতে সংকট ডেকে আনা হয়েছে? যিনি ওপরের কথাগুলো বলছেন, অনেকে তাকেও ব্যর্থতার জন্য দায়ী করে থাকেন। অনেকে বলেন, বহুমাত্রিক নিয়ন্ত্রণের কারণে জ্বালানি-বিদ্যুৎ সেক্টর নিয়ন্ত্রণহীন। কারো কোনো জবাবদিহিতা নাই যেন। 

বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়ে গেছে। মাস ১৩ পর ওই জাতীয় নির্বাচন। এই মুহূর্তে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের দিনের বেলা বিদ্যুৎ ব্যবহার না করা, এসি ব্যবহার না করাসহ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী করতে যে সমস্ত মূল্যবান পরামর্শ উনি ফরমাইছেন, এটা আসলে কীসের ইঙ্গিত? এটা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য আত্মঘাতী কথা নয় কি? 

তবে আমি মনে করি, এটি হয়তো সরকারের কথা নয়। তবু সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এক দায়িত্বে থাকা দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখ থেকে কেউই আশা করেনি। কারণ শতসংকটেও মানুষ আশার আলো দেখে। স্বপ্ন জিইয়ে রাখে। কিন্তু জ্বালানি উপদেষ্টার কথায় তেমন আশার আলো ক্ষীণ। আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে কিছু বলবেন।

আর বিদেশি মুদ্রা রিজার্ভ নিয়ে যে কথা বলছেন উপদেষ্টা মহোদয় সেটাও ভয়াবহ উদ্বেগজনক। এই ধরনের কিছু বলার আগে, এ কথা শোনার পর সাধারণ মানুষ কী মনে করবেন- সেটা যেমন ভাবা উচিত, তেমনি সবার আয়নায়ও মুখ দেখা উচিত।

শেয়ার করুন