২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৩:২৩:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীসহ শীর্ষ নেতৃত্বের বিদেশ সফর নিয়ে কৌতূহল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১০-২০২৩
রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীসহ শীর্ষ নেতৃত্বের বিদেশ সফর নিয়ে কৌতূহল রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিদেশযাত্রা


ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের একেবারে শেষলগ্ন উপস্থিত। দলের অভ্যন্তরে এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগ। ওই সরকারের কে কে থাকবেন, চিন্তা সেটা নিয়েও। যদি ব্যাপারটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই মুখ্য ভূমিকা রাখবেন দলের শীর্ষস্থানীয়দের মতামতের ভিত্তিতে। বসে নেই নির্বাচন কমিশন। আঙুলের কর গোনে দিন-ঘণ্টা গুনতে শুরু করেছেন। কখন ঘোষণা করবেন নির্বাচনী তফসিল। নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাদকার সময়টাও বার বার প্রকাশ করছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কে কোথায় নির্বাচন করবেন তার একটা ছক কষা ইতিমধ্যে শেষ। এমপি প্রার্থীরাও ছুটতে ব্যস্ত এলাকায়। সঙ্গে যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী তারাও। দীর্ঘ তিন টার্মে শুধু জাতীয় সংসদই নয়, স্থানীয় পর্যায়ে যে যেখানে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তিনিই সেখানে বিজয়ী দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া। ফলে নমিনেশন পাওয়া মানেই বিজয়ের উল্লাস করতে দেখা গেছে অনেককেই। এবারও তাদের তেমন প্রত্যাশা আশায় বুক বেঁধে আছেন।

যদিও এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। বরাবরের মতো রাজপথে বিএনপি ও তার মিত্র সরব। কিন্তু এদের অনেকটাই পরামর্শদাতা হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা তথা পশ্চিমা শক্তি। এক কথায় ন্যাটোভুক্ত পরাশক্তির দেশসমূহ। যদিও তারা এ মুহূর্তে বেজায় ব্যস্ত রাশিয়াকে মোকাবিলায় ইউক্রেনকে সাপোর্ট দেওয়া নিয়ে। কিন্তু এরপরও অন্যদিকেও তাদের নীতি সরবভাবে পরিচালিত হচ্ছে। 

বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধ নেই, তবু কেন অতো বড় পরাশক্তির মাথা গরম হয়ে আছে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এটা এখন পুরোনো কথা। ইন্দো-প্যাসিফিক জোন নিয়ে চীনের আধিপাত্য কমাতে বা মোকাবিলায় ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম। সেখানেই বাংলাদেশকে তারা পাশে চায় ভারতের মত। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্লিয়ার জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ কারো সঙ্গে শত্রুতায় যাবে না। দেশের কাছে সবাই বন্ধুত্ব বজায় রেখে চলবে। যার অর্থ ইন্দো-প্যাসিফিকে চীনের বিরুদ্ধে যেয়ে কোনো কিছুতেই রাজি নন তিনি। এখানেই মূলত বিরোধ। 

সামনের নির্বাচনে এর প্রভাব পরতে পারে বলেই কূটনৈতিক মহল ধারণা করছেন। কেননা বিগত দুই জাতীয় নির্বাচন এক কথায় সুষ্ঠু হয়নি। এক তরফা নির্বাচন হয়েছে ২০১৪ সালেন। যাতে নজীরবিহীন জয়লাভ আওয়ামী লীগের। ২০১৮ সনে অভিযোগ দিনের ভোট হয়ে গেছে রাতে। সেখানেও এক তরফা বিজয়ে ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসনে টিকে রয়েছে আওয়ামী লীগ। এসব প্রতিবাদে কিছু ভায়োলেন্স বা বিরোধী মত দমন ও মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাবের ওপর স্যাংশন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সে ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গণতান্ত্রিক সম্মেলনেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, যেখানে পাকিস্তানের মতো দেশকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাইডেনের গণতান্ত্রিক সম্মেলনে উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, চীনের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও এক কাতারে দাঁড় করিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের যে তাগিদ সেটা এখনো বহাল। যার ধারাবাহিকতায় মার্কিনিদের ভিসানীতি ঘোষণা ও প্রয়োগেরও ঘোষণা। 

এমন প্রেক্ষাপটের শেষ দৃশ্যের অবতারণা। বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের আগ্রহও অনিশ্চিত। পাশের দেশটি বেশ চুপচাপ। কূটনৈতিক মহল ধারণা করছে মার্কিনিদের নীতির সঙ্গে তারাও ঐকমত্য পোষণ করছে, বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে। 

বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা যে বার্তা পাঠাচ্ছেন তাতে খুব একটা কর্ণপাত নেই বললেই চলে ক্ষমতাসীন দলের। কেননা পশ্চিমাদের ফরমুলা মেনে নির্বাচনের অর্থ তত্ত্বাবধায়ক বা ক্ষমতা ছেড়ে পদত্যাগ করে নির্বাচন অনুষ্ঠান মানেই দেশে বিরাজমান যে বিতর্ক অর্থপাচার, দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে যাওয়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা সংকটে মানুষের আস্থা লাভে শঙ্কা। ফলে এর চেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা ও তাদের দেশের গণতন্ত্র ও তাদের বিভিন্ন নীতির কঠোর সমালোচনারত ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দ, যা প্রকাশ্যে এবং গতানুগতিক নির্বাচনের ধারাতেই থাকতে এখন স্বাচ্ছন্দ্যে দলটি। তবে পরিস্থিতি আঁচ করে কী ঘটতে পারে এমন একটা অবস্থায় শঙ্কার মধ্যে শুধু আওয়ামী লীগই নয়, গোটা দেশ-জাতি। এমনই প্রেক্ষাপটে দলটির শীর্ষপর্যায় বিদেশযাত্রায় মহাব্যস্ততা। যেখানে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে দেশেই নানা কার্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা, সেখানে একযোগে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের একের পর এক বিদেশ ভ্রমণে যাওয়া রাজনৈতিক মহলে কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে। 

রাষ্ট্রপতির সিঙ্গাপুর যাত্রা 

উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে রয়েছেন এখন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। গত ১৬ অক্টোবর সোমবার সেখানে গেছেন তিনি। ফিরবেন ৩০ অক্টোবর। দীর্ঘ ১৫ দিনের এ সফরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসারত তিনি। তার স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা এই সফরে তার সঙ্গে রয়েছেন। তবে দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, রাষ্ট্রপতির এমন দীর্ঘ সফরে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে চলে গেছেন। এটা সংবিধানসম্মত নয়। গত ১৮ অক্টোবর রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশে তো এখন রাষ্ট্রপতি নেই। নেই মানে? সংবিধানে নিয়ম আছে, রাষ্ট্রপতি যদি বাইরে যান, তাহলে কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে। এখন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। মানে এখন এই রাষ্ট্রের কোনো রাষ্ট্রপতি নেই। অর্থাৎ ওখানেও তারা (আ. লীগ সরকার) সম্পূর্ণভাবে বেআইনি কাজ করছেন, অসাংবিধানিক কাজ করছেন।’

প্রধানমন্ত্রীর বেলজিয়াম সফর 

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামের প্রথম সম্মেলনে অংশ নিতে ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার ব্রাসেলসে সফরে রয়েছেন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেইয়েনের আমন্ত্রণে তিনদিনের সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তার এই সফরে বেশ কয়েকটি ঋণ ও অনুদান চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরবেন ২৭ অক্টোবর শুক্রবার। 

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে প্রথম যুক্তরাষ্ট্র এরপর যুক্তরাজ্য সফরে ১৬ দিনের সফর শেষ করে চলতি মাসের শুরুর দিকে ঢাকায় ফেরেন।  

আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতৃত্বের ভারত সফর

গত ১০ অক্টোবর দিল্লি সফরে গেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী। স্পিকারের দফতর জানিয়েছে ১৯তম জি-২০ পার্লামেন্টারি স্পিকার সম্মেলনে (পি-২০) অংশ নিতে তিনি ভারতে যেয়ে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত স্পিকার ভারতে অবস্থান করেন। সেখানে তিনি নির্ধারিত কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু একই সময় ১০ অক্টোবর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুও ভারত সফরে ছিলেন। জানা গেছে ভারতের সরকার ও বিজেপির কয়েক শীর্ষনেতার সঙ্গে নয়াদিল্লিতে আমুর বৈঠক হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুর দিল্লি সফর নিয়ে আলোচনার মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ভারত সফরে যেতে পারেন এমন কথা শোনা যাচ্ছে। 

গত জুলাই মাসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের ভারত সফরে যাওয়ার কথা থাকলেও সেই সময় সফরটি হয়নি। পরে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে ৬ আগস্ট দিল্লি সফরে যায় আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। সেই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কার্যনির্বাহী সদস্য মেরিনা জাহান ও সংসদ সদস্য আরমা দত্ত। দলটির সাধারণ সম্পাদক না গেলেও এবার তিনি দিল্লি সফরে যেতে পারেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সেখানকার নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন তিনি। 

সবশেষ

ক্ষমতাসীন দলটির দীর্ঘ তিন টার্মে নেতৃবৃন্দের বিদেশ সফর এটা নতুন কিছু নয়। রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনেও তারা বিভিন্ন স্থানে যেতেই পারেন। তবে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে যখন দেশে বিরোধীদলগুলো আন্দোলনে মুখরিত করার প্ল্যানে বিভোর ক্ষমতাসীনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ও একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের নিমিত্তে- এমনি মুহূর্তে শীর্ষনেতাদের বিদেশ সফর নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের তৃণমুলে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন বার্তা। বলা হচ্ছে, সতর্ক থাকতে। সজাগ থাকতে বলা হচ্ছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের থেকে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় বাইরে থাকারা বিভিন্ন নিপীড়নের শিকার হয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থাও তাদের। এ শেষ মুহূর্তের আন্দোলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় কঠোর তারা। সব মিলিয়ে উত্তেজনাকর এক পরিস্থিতির অবতারণা। যদিও এসব সফরের আলোচনা সাময়িক, কারণ চলতি অক্টোবরের মধ্যেই সবাই আবার ফিরছেন দেশে। 

শেয়ার করুন