০৪ মে ২০১২, শনিবার, ০৩:২৮:১১ পূর্বাহ্ন


বাসে আগুন ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া অবরোধের দ্বিতীয় দিন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-১১-২০২৩
বাসে আগুন ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া অবরোধের দ্বিতীয় দিন অবরোধের দ্বিতীয় দিনে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট মিরসরাইতে অবরোধের সমর্থনে অবস্থান/ছবি সংগৃহীত


বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি’র ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে (বুধবার) ঢাকা ও চট্টগ্রামে কয়েকটি বাস ও ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ঢাকার মুগদা, সাভার এবং চট্টগ্রামে অন্তত চারটি বাসে আগুন দেবার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া সিলেট এবং বগুড়ায় অবরোধকারীদের সাথে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিবিসি।


নেতাকর্মী মারা যাওয়ায় সিলেট বিভাগের চার জেলায় এবং কিশোরগঞ্জে অবরোধের পাশাপাশি হরতাল পালন করেছে বিএনপি।
এদিকে, প্রথম দিনের মতো অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও ঢাকার রাস্তায় প্রায় সব ধরনের গাড়ির সংখ্যা কম দেখা করা গেছে। ফলে যানজটও ছিলো না। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কিছুটা বাড়তে দেখা গেছে। এছাড়া গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকেও দূরপাল্লার বাস খুব একটা ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। যদিও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।


মুগদায় একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়/ছবি সংগৃহীত


রাজধানীর মুগদায় একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। বুধবার সকাল ১১টার দিকে মুগদা আইডিয়াল স্কুলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেন মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল মজিদ। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন। এই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এরআগে, বুধবার ভোরে সাভারের মধুমতী মডেল টাউন এলাকায় একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। বাসটির সহকারী, যিনি ঘটনার সময় বাসের ভেতরেই ঘুমিয়ে ছিলেন, বলেন ভোর ৬টার দিকে একদল লোক এসে প্রথমে বাসের জানালার কাঁচ ভেঙে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এরপর তিনি দ্রুত বাস থেকে বের হয়ে যান।স্থানীয়দের সহায়তায় বাসের আগুন নেভানো হয়
এছাড়া চট্টগ্রামেও বুধবার সকালে দু'টি পরিবহনে আগুন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।


পাঁচ জেলায় হরতাল


অবরোধের প্রথম দিনে নিহতদেরকে দলীয়কর্মী দাবি করে এর প্রতিবাদে বুধবার কিশোরগঞ্জ এবং সিলেট বিভাগের চার জেলায় হরতাল পালন করে বিএনপি। এর মধ্যে সিলেট শহরে বিএনপি-জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বুধবার সিলেটে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের সাথে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংঘর্ষ।


এদিন বুধবার সিলেটে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের সাথে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে স্থানীয় প্রতিনিধি জানান, হরতাল-অবরোধের সমর্থনে বুধবার সকালে সিলেট শহরে মিছিল বের করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি বন্দরবাজার এলাকা আসলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ছয় জন আটক করা হয়েছে বলে স্থানীয় প্রতিনিধিকে জানান সিলেটের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ।

তবে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে সকাল-সন্ধ্যা এবং কিশোরগঞ্জে অর্ধবেলা হরতাল পালনকালে কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।
অবরোধের দ্বিতীয় দিন বগুড়ায় সড়ক অবরোধ করতে গেলে বিএনপিকর্মীদের সাথে পুলিশের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে বলে জানান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. স্নিগ্ধ আখতার।

তবে রাজধানী ঢাকায় প্রথম দিনের মতো অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও ঢাকায় সীমিত সংখ্যক যান চলাচল করতে দেখা গেছে। সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকার ধানমণ্ডি, গ্রিনরোড, কারওরান বাজার, ফার্মগেট, তেজগাঁও, বিজয় সরণী, মহাখালী, বনানী, গুলশান, মিরপুর, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ি সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রাস্তায় তুলনামূলক কম সংখ্যক যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, পিকআপ ভ্যান এবং ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে। এছাড়া রিক্সা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা অন্যান্য দিনের মতোই দেখা গেছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা কিছুটা বাড়তে দেখা যায়।

ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক

বুধবার সকালে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে স্বাভাবিক দিনের মতোই ট্রেন চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেল স্টেশনে যাত্রীদের সংখ্যা কম ছিলো। বুধবার সকালে ঢাকায় ট্রেন চলাচল করতে দেখা গেছে
বুধবার সকাল থেকে ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়তে দেখা যায়নি। গাবতলী টার্মিনালে বাসের টিকেট কাউন্টারগুলোর অধিকাংশই বন্ধ দেখা গেছে। যে অল্প সংখ্যক টিকেট বিক্রেতা সকালে কাউন্টার খুলেছেন, যাত্রীর অভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় তারা দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়তে পারেননি বলে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতাকে জানান। গাবতলী থেকে উত্তরবঙ্গের ২৬টি জেলা এবং দক্ষিণবঙ্গের ২২টি জেলায় প্রতিদিন অন্তত ১২০০ যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে বলে জানিয়েছে টার্মিনাল কর্তৃপক্ষ।


কিন্তু অবরোধ শুরু হওয়ার পর দূরপাল্লার বাসগুলো বন্ধ থাকায় পরিবহন ব্যবসায় স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে জানান বাসের টিকেট বিক্রেতারা। একই চিত্র দেখা গেছে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও। ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং প্রবেশপথগুলোতে র‌্যাব-পুলিশের সতর্ক অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে বলে জানা যায়। এছাড়া ঢাকা ও সাভারের কোথাও কোথাও বিজিবি-কেও টহল দিতে দেখা গেছে।


অবরোধ আহ্বান করা বিএনপির স্থানে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলোর বিভিন্ন মোড়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান দেখা গেছে। অনেক জায়গায় অবরোধবিরোধী মিছিল ও শান্তি সমাবেশ করেছে। সকালে ঢাকার মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, গাবতলী, যাত্রাবাড়ি, মিরপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় অবরোধ বিরোধী মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া সাভারের আমিনবাজার, হেমায়েতপুর এবং নারায়ণগঞ্জেও ছোট ছোট মিছিল করেছে সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা। এসময় তাদের কারো কারো হাতে লাঠি-সোটা এবং রড দেখা গেছে। তথ্যসূত্র: বিসিবি বাংলা অনলাইন।

শেয়ার করুন