২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৮:০৪:৫৭ পূর্বাহ্ন


দেশকে সাদিয়া খালিদ রীতি
এই নিয়োগ সম্মানের
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৯-২০২২
এই নিয়োগ সম্মানের সাদিয়া খালিদ রীতি


সাদিয়া খালিদ রীতি। সাংবাদিক ও ফিল্ম ক্রিটিক হিসেবেই বেশি পরিচিত। সম্প্রতি হলিউডের প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে হওয়া নামকরা অ্যাওয়ার্ড প্ল্যাটফর্ম গোল্ডেন গ্লোব ভোটার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে। 


প্রশ্ন: গোল্ডেন গ্লোবের বিচারক নির্বাচিত হয়ে কেমন লাগছে?

সাদিয়া খালিদ রীতি: অবশ্যই অনেক ভালো লাগছে। কারণ এটা হঠাৎ করে হয়ে যায়নি। এটার জন্য অনেক হার্ড ওয়ার্ক করেছি। শ্রম করে পাওয়ার যে আনন্দ ও তৃপ্তি সেটাই পাচ্ছি। 

প্রশ্ন: আপনার আগেও মনে হয় একজন বাংলাদেশী এই সুযোগ পেয়েছিল

সাদিয়া খালিদ রীতি: হ্যাঁ, আমার আগে ১৯৯৩ সালে একজন এই অ্যাওয়ার্ড প্ল্যাটফর্মে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশি তবে আমেরিকান নাগরিক ছিলেন এবং আমেরিকান জার্নালিস্ট হিসেবেই তিনি ভোটার হয়েছিলেন। মূলত ফটো জার্নালিস্ট ছিলেন তিনি।

প্রশ্ন: গোল্ডেন গ্লোবের ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়াটা আসলে কি?

সাদিয়া খালিদ রীতি: আগে গোল্ডেন গ্লোব শুধু আমেরিকার নাগরিকদের মধ্যে থেকে ভোটার হিসাবে নিত। এবার ওরা অন্য দেশ থেকেও ভোটার নিচ্ছে, যাদের হাইপ্রোফাইল মনে করছে। আগে ভোটার সংখ্যা ছিল ১০০ জনের মধ্যে, এখন সেটা ডাবলের মতো হয়ে যাচ্ছে। আর আমি যে প্রক্রিয়ায় ভোটার হয়েছি তার গল্পটা হলো যে, হঠাৎ করে একদিন গোল্ডেন গ্লে¬াবের ভোটিং বডির প্রেসিডেন্ট মেইল করল। আমি ভেবেছিলাম এটা হয়তো প্রি-সিলেকশন, আমি বোধহয় সিলেকশন হয়ে গিয়েছি। পরে দেখলাম, না, ওরা অ্যাপ্লিকেশন চেয়েছে এবং সেগুলো থেকে যাচাই-বাছাই করে তারপর চূড়ান্ত করবে। কয়েকটা মাস টেনশনে ছিলাম, হয় কি না।

প্রশ্ন: শেষমেশ জয়ের হাসি হাসলেন। এখন করণীয় কি?

সাদিয়া খালিদ রীতি: অনেকগুলো সিনেমা দেখতে হবে। নেটফ্লিক্স এবং ডিজনি এরই মধ্যে স্ক্রিনার (প্রমোশনাল) পাঠানো শুরু করেছ। অনেক বড় কাজ। সবাই দোয়া করবেন কাজটা যেন ঠিকমতো করতে পারি। গোল্ডেন গ্লে¬াব কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে একজনকে নিয়েছে, দেশের সম্মানটা যেন রাখতে পারি।

প্রশ্ন: আপনার ফেস্টিভ্যাল কেন্দ্রিক জার্নির শুরুটা কিভাবে?

সাদিয়া খালিদ রীতি: আমি ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের (ডিআইএফএফ) সঙ্গে যুক্ত হই ২০১২তে। ২০১৮তে ফেস্টিভ্যালের জুরি হিসেবে দায়িত্ব পাই। ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালকে এখানকার মানুষ বোঝে কি না জানি না, কিন্তু এটা অনেক বড় ফেস্টিভ্যাল। ওই বছরেই আমার অনেকগুলো ফেস্টিভ্যাল থেকে ডাক আসে।

প্রশ্ন: এসব ফেস্টিভ্যালে যুক্ত হয়ে দেশের সিনেমার লাভ কী? 

সাদিয়া খালিদ রীতি: ফায়দা হলো, আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমাদের অংশগ্রহণ বাড়বে। ওরা কিন্তু আমাদের পয়েন্ট অফ ভিউটাই জানে না। ইউরো সেন্ট্রিক পয়েন্ট অফ ভিউ বা ওয়েস্টার্ন পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে ফিল্ম ক্রিটিসিজমটা চলে আসছে। ফেস্টিভ্যালে যখন কোনো ক্রিটিক সিনেমা দেখছে তার অধিকাংশই ওয়েস্টার্ন। ওরা সিনেমা দেখার পর যখন কথা বলে আমাদের সঙ্গে, তখন আমি বুঝি যে আমাদের কালচার সম্পর্কে ওদের কোনো ধারণাই নেই। এতে করে সমস্যা হলো, আমাদের এখান থেকে সিনেমা নির্মাণ হবে ঠিকই, কিন্তু ওরা বুঝবেই না কিছু এবং এ অঞ্চলের সিনেমার যথার্থ মূল্যায়ণ হবে না। ফিল্মের ইকোসিস্টেমের মধ্যে এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা পার্ট, যে ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যাটফর্মে বসার মতো ফিল্ম ক্রিটিকও থাকতে হবে।

প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সিনেমার সাথে দেশের সিনেমার পার্থক্য কি বলে মনে হয় আপনার?

সাদিয়া খালিদ রীতি: আর্ট হাউস সিনেমাগুলো তো ইউরোপের ফিল্ম মুভমেন্ট থেকে শুরু হয়েছে। আমরা আমাদের আর্ট হাউস করতে গিয়ে ওদের অনেক ক্ষেত্রে কপি করেছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের মানুষ, দর্শক ও দর্শনকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। আমরা কিন্তু এখনও স্ক্যাটার্ড, আমাদের ন্যাশনাল ফিল্ম আসলে কী? কেউ ইউরোপকে ফলো করছে, কেউ বলিউডকে ফলো করছে।

প্রশ্ন: অস্কারের জন্য বাংলাদেশ থেকে মনোনীত করা হয়েছে ‘হাওয়া’ সিনেমাটি। এর সম্ভাবনা কেমন?

সাদিয়া খালিদ রীতি: অস্কারে লবিং হয়, প্রচুর লবিং হয়। আমি যখন লসঅ্যাঞ্জেলেসে কাজ করতাম তখন দেখতাম আমাদের অফিসে এসে কেক দিয়ে যাচ্ছে, গিফট দিয়ে যাচ্ছে। একবার দেখেছিলাম যে টম হ্যাঙ্কসের কোনো একটি সিনেমা, নাম মনে করতে পারছি না, ওরা এক মাস ধরে প্রতি রাতে পার্টি দিয়েছে। তবে ইন্টারন্যাশনাল ফিচার ফিল্মে এই লবিং মনে হয় না প্রযোজ্য। এ ক্ষেত্রে ওরা দেখে ফেস্টিভ্যালে কেমন পারফর্ম করেছে সিনেমাটি। হাওয়া তো সেই অর্থে ফেস্টিভ্যালে পারফর্ম করেনি। তার পরও সিনেমাটি যদি কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে, সেটাই আমাদের পাওয়া হবে।

শেয়ার করুন