২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ১০:৫৬:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


ঘোলাটে পরিস্থিতির দিকে রাজনীতি
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১১-২০২২
ঘোলাটে পরিস্থিতির দিকে রাজনীতি


বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে ৯৯ শতাংশই বলবেন, আরেকটি ওয়ান-ইলেভেন আর চাই না। ওই সময়ের আর্মি ব্যাক তত্ত্ববধায়ক সরকারের যে রূঢ় আচরণ, রক্তচক্ষু। মাইনাস টু (শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া) নীতি গ্রহণ করে সংস্কারের উদ্যোগ। গণহারে মামলা খেয়ে জেলের ঘানি টানা, সে ঘটনায় এখনো অনেকে আঁতকে ওঠেন। ভুলতে না পারা ওই সকল দিনের কথা এখনো অনেকেই জনসম্মুখে বলেন। ক’দিন আগেও মির্জা আব্বাস জনসভায় বলেছেন, ‘অনেকেই জেলে বসে কান ধরে উঠবস করে বলেছিলেন, বাকি জীবনে আর রাজনীতিই করবে না। কিন্তু তারা ভুলে গেছেন।’ ক্ষমতাসীন সরকারেরও শীর্ষপদে থাকা কেউ কেউ বলেছিলেন, ‘অন্যায় দুর্নীতি না করেও আরেকবার জেলে যাওয়া। আর সম্ভব না।’ 

শুধু রাজনীতিবিদগনই নন। বহু ব্যবসায়ীও জেলে গিয়েছেন। ব্যবসা হারিয়েছেন। এবার হয়তো ওয়ান-ইলেভেন আর আসবে না। তবে আসতেও পারে ওই রকমের চেয়েও বেশিকিছু। যেভাবে রাজনীতিতে বিভাজন চলছে এবং সেটা এতোটাই চরম আকার ধারণ করতে যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অপরের ছায়াও দেখতে নারাজ। অথচ দেশের ক্রান্তিলগ্নে ওইরকম এক টেবিলে বসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুই দলের এক টেবিলে বসার যে পরিবেশ বা সম্ভাবনা, সেটা নেই বিন্দুমাত্রও। যেমনটা হয়েছিল ওয়ান-ইলেভেনপূর্ব মুহূর্তে। ফলে দেশের এমন অবস্থাতে আবারও কোনো অমন রাজনীতিবিদদের ওপর দমনপীড়ন আসে কি-না এ আশঙ্কা এখন জনমনে!  

কেন ওয়ান-ইলেভেন এসেছিল  

২০০৬-০৮ সনের রাজনৈতিক সংকটের শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালের অক্টোবরে যখন বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। তৎকালীন সংবিধান অনুসারে, কোনো দল ক্ষমতা হস্তান্তরের ৯০ দিন পর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং মধ্যবর্তী ৯০ দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া তদারকি করবে ও এর অধীনেই নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হবে। তবে রাজনৈতিক সংকট শুরু হয় রাজনৈতিক দলগুলো পাঁচজন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার প্রার্থীর ব্যাপারে একমত হতে না পারার কারণে। বাধ্য হয়েই তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিলে নিরপেক্ষতার ধুয়া তুলে মানতে অস্বীকৃতি জানায় বিরোধীরা। ফলে ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সূচনা হয় সহিংস বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ‘লগি-বৈঠা’ সহিংস আন্দোলন ও বিক্ষোভ শুরু করে ও চরমভাবে উত্তপ্ত হয় বাংলাদেশের রাজনীতি। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ব্যাপক আলোচনার পর দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোকে এক টেবিলে আলোচনায় আনতে সমর্থ হয় এবং ৩ জানুয়ারি ২০০৭ সালে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হয়। আওয়ামী লীগ থেকে ঘোষণা করা হয়, তারা নিজে ও এর সাথে যুক্ত ছোটদলগুলো ২২ জানুয়ারি ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচন বর্জন করবে। তারা ভোটার তালিকা সঠিকভাবে প্রণয়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ তোলে। পরবর্তীতে এটাকে কেন্দ্র করে দেশে আরো সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরপরই আসে বহুল বিতর্কিত ও কলঙ্কময় ওয়ান ইলেভেন। 

রাজনীতির মাঠে অস্থিতিশীল এমন এক পরিস্থিতির অবতারণা হয় সেদিন, যেখানে ঐক্যের কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই মেরুর দুই দল। যাদের পেছনে ছিল অন্যান্য দলসমূহ। পরিস্থিতি এতো জটিল আকার ধারণ করে যে বাধ্য হয়েই বিদেশি দূতাবাসগুলো হস্তক্ষেপে নেমে আসে এবং সেসব দূতাবাসে হয় আলোচনা। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে আর্মি ব্যাক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। 

সে সরকারের বেনিফিশিয়ারি বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হলেও তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যেন আর না আসতে পারে সাংবিধানিকভাবে সে পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন। এটা জনসাধারণের জন্যও একটা স্বস্তির। রাজনীতিবিদদের জন্য তো বটেই। কিন্তু গণতন্ত্রের যে ধারার সূচনা হওয়ার কথা ছিল সেটা কী হয়েছে? 

কোন পথে হাঁটছে বাংলাদেশের রাজনীতি 

২০০৮ সনের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। মানুষ যে পরিবর্তন চেয়েছিল সে পরিবর্তনের সূত্র ধরে ওয়ান-ইলেভেন সরকার হয়ে নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর গণতান্ত্রিক সে ধারা কি চর্চা হয়েছে? 

ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যে গণহারে মামলা-মোকদ্দমা হয় তা ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ তাদের ও তাদের অনুসারীদের মামলাগুলো প্রত্যাহার করলেও বিএনপি ও তাদের সমমনাদের কোনো মামলা প্রত্যাহার করেনি। বিভাজনের শুরু এখান থেকেই। প্রতিহিংসার রাজনীতির বিজ বপন এখান থেকেই। ওই ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের মামলার সূত্র ধরেই শুরু হয় বিএনপিকে দমনপীড়ন। ধীরে ধীরে শীর্ষ দুই দলের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। এরপরের ঘটনা অনেক। খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া। জেলে নেয়া থেকে শুরু করে অনেক কিছু। এর মধ্যেই ২০১৪ সনের নির্বাচন ও ২০১৮ সনের নির্বাচনের প্যাঁচাল আর না বললেও চলে। এভাবেই চলে আসছে।

এবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচন ঘিরে শুরু হয়ে গেছে মাঠের উত্তেজনা। এখনো বর্তমান সরকারের এক বছরের বেশি সময় অবশিষ্ট। কিন্তু এরই মধ্যে রাজনীতির মাঠ যেভাবে উত্তপ্ত হচ্ছে সেটা মোটেও কাঙ্ক্ষিত নয়। আর মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার একমাত্র কারণ বিএনপির মাঠে নামা। এক যুগের বেশিরভাগ সময় বিএনপি ঘরে বসে সময় কাটিয়েছে। মাঠের আন্দোলন করেনি। এবার তারা নেমেছে নজিরবিহীন বিদ্যুতের লোডশেডিং, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, গণপরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে। বিএনপির দাবি ব্যাপক দুর্নীতির।

যেহেতু গত দুই নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হওয়ার পরও মানুষ ভোট দিতে পারেনি বা ভোটের কোনো প্রয়োজনই হয়নি। তখন মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই তাদের মাঠে নামা। মির্জা ফখরুল বারবার বলছেন ‘আপনাদের ভোটাধিকার ফেরানোই আমাদের মূল উদ্দেশ্য’। 

কিন্তু বিএনপির এ মাঠে নামা মোটেও সহ্য করতে পারছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পাল্টা হুমকি-ধমকি দিয়ে উত্তপ্ত করে ফেলেছে রাজনীতির মাঠ। 

বিএনপি তৃণমূলে কিছু কর্মসূচি পালন করে এখন শুরু করেছে বিভাগীয় সম্মেলন। এ পর্যন্ত গোটা পাচেক সম্মেলন করেছে তারা। কিন্তু এতে মানুষের যে উপস্থিতি সেটাই ভয়ের কারণ হয়ে গেছে ক্ষমতাসীনদের। বিভিন্নভাবে সমাবেশে মানুষের যাতে উপস্থিতি না ঘটে তাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি। তাতেও যখন কাজ হচ্ছে না, এবার পাল্টা হুমকি। ‘বিএনপি ভাড়া করে অর্থ বিলিয়ে লোকের উপস্থিতি ঘটাচ্ছে।’ ‘বিএনপির সমাবেশে খুব বেশি মানুষ হচ্ছে না।’ ‘বিএনপি যদি বাড়াবাড়ি করে তাহলে খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হবে।’ ‘বিএনপিকে নভেম্বর পর্যন্ত ছাড় দেয়া হবে।’ ‘আওয়ামী লীগ ঢাকার রাজপথে অবস্থান নিলে বিএনপি পালানোর পথ পাবে না। বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঘরে থাকতে পারত না। বর্তমান সময়ে এসি রুমে বসে বিএনপির নেতা-কর্মীরা রাজনীতি করে। এই দিন দিন না, আরও দিন আছে। অপেক্ষা করুন, আন্দোলন কত প্রকার ও কী কী আওয়ামী লীগ তা বুঝিয়ে দেবে। খেলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। বাঁশের লাঠিতে জাতীয় পতাকা নিয়ে রাস্তায় নামলে খবর আছে।’ ‘ডিসেম্বরে বিএনপি কী করবে তার চেয়ে চারগুণ বেশি মানুষের উপস্থিতি ঘটানো হবে’- এ জাতীয় বক্তব্য পরিস্থিতি ঘোলাটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি, সমাবেশ এগুলো একটি রাজনৈতিক দলের মৌলিক অধিকার। হ্যাঁ, তাতে জনগণের জানমালের যেন কোনো ক্ষতিসাধিত না হয়। হওয়ার আশংকা যাতে না হয় সেটা দেখার দায়িত্ব সরকারের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কিন্তু বিএনপির এ পর্যন্ত ৫ সম্মেলনে অমন কিছু ঘটেনি। এরপরও ক্ষমতাসীনদের বক্তব্যগুলো রাজনীতির মাঠে নতুন উত্তেজনা তৈরি হওয়া শুরু। 

বিএনপি দাবি একদফার দিকে 

আওয়ামী লীগের ক্রমাগত বক্তব্যে বিএনপিও তাদের দাবি দাওয়ায় ভিন্নতা আনতে শুরু করে দিয়েছে। যেমনটা তারা শুরুটা করেছিল যে সব দাবি-দাওয়া নিয়ে। এখন এসব বাধা-বিপত্তি পেয়ে শুরু করে দিয়েছে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের। অথচ এখনো সরকারের এক বছরেরও বেশি সময় বাকি। ইচ্ছা করলে ক্ষমতাসীন সরকার এ সময়েও দেশের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের মাঠে বলিষ্ঠভাবে নিজেদের উপস্থিতি ঘটাতে। কারণ বর্তমান সরকার যে পরিমাণ উন্নয়ন করেছে। দেশে যে পরিমাণ সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট করেছে, সেটা সত্যিকার অর্থেই দেশের মানুষের জন্য খুবই উপকারী। দেশের অর্থনীতির উন্নতি বাস্তব ভূমিকা রাখবে। 

তার সঙ্গে বিরাজমান সংকটের অন্তত ৫০ শতাংশ সমাধান করলেও সফল সমাপ্তি করে আবার নির্বাচনের মাঠে গলা উঁচু করেই ভোট প্রার্থণা করতে পারেন। কিন্তু সমস্যা সমাধানের বিষয়ে বিএনপির দাবির জবাব সঠিকভাবে আসছে না সরকারের প্রতিটা ডিপার্টমেন্ট থেকে। 

বিরাজমান সংকট নিরসনে নেই সঠিক পরিকল্পনা ও আশাবাদ 

মানুষের মনে একটা ভীতির তৈরি হয়েছে এ সময়। বিরাজমান সংকটে কী হবে সেটা ভেবে তটস্থ মানুষ। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন, ঘরে ঘরে কৃচ্ছ্রতা সাধনের। বলছেন দুর্ভিক্ষের কথা। সচেতন হতে বলছেন। কিন্তু এগুলো থেকে উত্তরণের পরিকল্পনাটাও শুনতে চায় মানুষ। কত দিন চলবে এমন সমস্যা।  সমস্যার সমাধানে আশ্বাস বা রূপরেখা দিয়ে মানুষকে  আশ্বস্ত করলে মানুষ আশা নিয়ে থাকতেন। কেননা হানাহানির রাজনীতি- সাধারণ মানুষ কখনই পছন্দ করে না। করবেও না। কিন্তু সে আশ্বাস নেই। ক্লিয়ার কোনো বক্তব্য নেই। প্রতিবাদে বিএনপি যে আন্দোলন, বক্তব্যের মধ্যে সরকারকে বাকি এক বছর ব্যতিব্যস্ত করে রাখার পথ বেছে নিয়েছে এটা তাদের রাজনীতির কৌশল। সেটাতেই পা দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। স্বাভাবিকভাবেই বিএনপি চাইবে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতা ত্যাগ করুক বড় কোনো দুর্বলতা নিয়ে। মানুষ যাতে তাদের আর ভোটদানে উৎসাহী না হন। সরকার এমন পরিস্থিতিতে ঠান্ডা মাথায় সব সমাল দিয়ে তার কার্যমেয়াদ শেষ করবে এটাই সঠিক প্রক্রিয়া। কিন্তু ক্রমশ জড়িয়ে যাচ্ছে তারা বাগযুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগেও বলেছে দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন সংসদে শক্তিশালী বিরোধীদল। 

বিএনপি সম্পর্কে তার যে সোর্স থেকে পাওয়া তথ্য সেটাতে ভুল ম্যাসেজ ছিল, বিধায় তিনি অনুমান করতে পারেননি। মাঠে নেমেই বিএনপিকর্মীদের ঢল দেখে সরকার পক্ষ দুশ্চিন্তায়। এতে বরং খুশি হওয়ার কথা। যে বিএনপি শক্তিশালী উপায়ে ফিরেছে। এবার সংসদে শক্তিশালী বিরোধীদলই পাওয়া যাবে। কিন্তু বিএনপির মাঠের আন্দোলনে কেন এখন নাখোশ এটা বোধগম্য না। 

পরিস্থিতি দিন দিন জটিলতার দিকে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের সম্মেলনে যেমন বাধা দেয়া হয়নি। ময়মনসিংহে কিছুটা এরপর রংপুর,  খুলনা ও বরিশালে যেটা হয়েছে, তাতে ক্রমশই এ বাধা বাড়লে মানুষ কিছুটা উত্তেজিত হয়েই মাঠে নামবে এটা স্বাভাবিক। তবে স্বাভাবিকভাবে বিএনপি এতো মানুষ শুধু খালেদা জিয়ার উপস্থিতির সম্মেলন ছাড়া দেখেছে বলে মনে হয় না। খালেদা জিয়া রাজনীতি থেকে দূরে। ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বিদেশে। মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রমুখদের সম্মেলনে এতো মানুষের উপস্থিতি সেটা মূলত বিএনপির প্রতি মানুষের ভালোবাসা অগাধ সেটা জানান দেয়ার জন্যই। 

আবারো মধ্যস্থতা করতে ভিনদেশিরা 

বাংলাদেশের রাজনীতি পরিস্থিতিতে দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবশে বজায় রাখা ও আগামী নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সে জন্য ইতিমধ্যে প্রভাবশালী বিদেশি রাষ্ট্রগুলো তৎপরতা শুরু করেছেন। তারা বলছেন বাংলাদেশে তারা একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেখতে চান। মানুষ যেন তাদের অধিকার রক্ষা করতে পারেন। নিজেরাই যাতে নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নিতে পারেন সেটা নিশ্চিতকরণে তাদের প্রচেষ্টা বেশ কিছুদিন থেকেই চলে আসছে। এরপরও রাজনীতির মাঠের পক্ষগুলোর হুঁশ ফিরছে না। ভিনদেশিদের হস্তক্ষেপে কোনো দলই ক্ষমতা লাভ করবে বলে মনে হয় না। তারা প্রথম একটি সুষ্ঠু রাজনীতির পরিবেশ তৈরি করে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করার পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা দেবেন। যেমনটা তারা ওয়ান-ইলেভেনে সহায়তা করেছিলেন। ফলে তার পরিণামটা আর লিখে বুঝানোর প্রয়োজন নেই। একই দেশের মানুষ, একে অপরের কাছের বিভিন্ন দিক থেকে। এক মাটিতে জন্ম ও বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের অধিকার ও ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করার মহৎ দায়িত্ব গ্রহণে যদি রাজনীতিবিদদের মধ্যে এতোটা বিভাজন হয়, তাহলে সেটা সাধারণ বাংলাদেশিদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। 

রাজনীতিতে সমঝোতা 

রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। এখানে বৈরিতা থাকে। আবার সমঝোতাও রয়েছে। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের আমলেও এরশাদকে ঠেকাতে এই বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা এক টেবিলে বসেছিলেন। একসঙ্গে আন্দোলন করেছেন। এদের রাজনীতিতে মাঠে নামার আগেও দু’জনের মধ্যে সখ্য কম ছিল না। 

একে অপরকে খুব ভালো করে জানেন, চেনেন। মুখোমুখি দু’জনের সম্পর্কও ভালো। কিন্তু এরা এক টেবিলে বসবেন না কেন জাতীয় সংকটে। দেশে বিরাজমান পরিস্থিতি এটা জাতীয় সংকট। বিশেষ করে বৈশ্বিক কারণেই এ সংকটে দেশ। এ সময়ে দুই শীর্ষ নেত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্প্রীতি বাড়বে। কিন্তু সেটা হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে আমার সাধ্যমতো বা আমার হাতে যতোটুকু ছিল সেটুকু দিয়ে জেলে না রেখে বাসায় থাকার সুযোগ করে দিয়েছি। খালেদা জিয়ার প্রতি যে তার একটা টান রয়েছে ওখানেই স্পষ্ট। তাহলে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়ে তার সঙ্গে আলোচনায় বসে যাবতীয় সমস্যা সমাধানে যৌথভাবে কাজ করলেই বিষয়টার বড় ফয়সালা হয়ে যায়। ক্রমাগত ভয়ংকর অনিশ্চিত রাজনীতির সংকট পানে দেশ যেতো না। 

এ ব্যাপারে বারবার সুশীলসমাজের পক্ষ থেকেও আবেদন করা হচ্ছে। কিন্তু একটা পর্যায়ে যেয়ে বিষয়টি থমকে রয়েছে। কেন সেটা কে জানে? তবে বর্তমান যে ধারায় এগোচ্ছে বাগযুদ্ধ পক্ষে-বিপক্ষে। এটা চলতে থাকলে সংঘাতপূর্ণ অবস্থা অনিবার্য। যা ২০০৭ সনে একবার দেখেছিল মানুষ। রাজনীতিবিদরা সেটা এবার না চাইলেও ওই পথেই রাজনীতির গতি সেটা ওয়ান-ইলেভেনের পূর্বমুহূর্তের সময়গুলোর দিকে নজর দিলে প্রতীয়মান হবে বৈকি! ১/১১-এর সেই পথেই হাঁটছে বাংলাদেশের রাজনীতি।

শেয়ার করুন