২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১০:০৯:১৩ পূর্বাহ্ন


যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের বিবৃতি
নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়নি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০১-২০২৪
নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়নি


বাংলাদেশে সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি বলে জানান দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর গত ৮ জানুয়ারি সোমবার রাতে দেয়া এক বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয়, একই ধরনের বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্যও। একই ইস্যুতে কথা বলেছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার হাইকমিশনারও। 

যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণ এবং গণতন্ত্র, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি তাদের আকাক্সক্ষাকে সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেছে, ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধী দলের হাজার হাজার সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিন অনিয়মের খবরে উদ্বিগ্ন। পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে একমত যে, এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করায় আমরা হতাশ।’ 

নির্বাচনকালীন সময়ে এবং এর আগের মাসগুলোতে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব সহিংসতার গ্রহণযোগ্য তদন্ত এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। সব দলের প্রতি সহিংসতাকে পরিহার করারও আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন। 

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অবাধ ও মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় (ইন্দো-প্যাসিফিক) অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করা, বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষা ও নাগরিক সমাজের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি মনে করছে যুক্তরাজ্য 

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদ- অনুযায়ী হয়নি বলে অভিমত দিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ৮ জানুয়ারি সোমবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতার ওপর। মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময় এসব মানদ- ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা হয়নি। ভোটের আগে বিরোধী দলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’ 

নির্বাচন সামনে রেখে এবং নির্বাচনের প্রচার চলাকালে সহিংসতা ও ভয়ভীতি দেখানোর কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘রাজনীতিতে এ ধরনের কর্মকা-ের কোনো স্থান নেই।’ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘সব দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। সে কারণে বাংলাদেশের মানুষের ভোট দেওয়ার যথেষ্ট বিকল্প ছিল না।’ 

যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একটি টেকসই রাজনৈতিক সমঝোতা ও সক্রিয় নাগরিক সমাজের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি মতভিন্নতা দূর করে জনগণের স্বার্থে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অভিন্ন পথ বের করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। এই প্রক্রিয়ায় সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান যা বলছেন 

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার টার্ক এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেফতার এবং আটকাবস্থায় মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন। তিনি প্রকৃত অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের জন্য সরকারকে 'গতিপথ পরিবর্তন করার' আহবান জানিয়েছেন। ৮ জানুয়ারি সোমবার দেয়া এক বিবৃতিতে টার্ক নবনির্বাচিত সরকারকে দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি পূরণে পদক্ষেপ নিতে আহবান জানান। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান বলেছেন, “২৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাসহ প্রায় ২৫ হাজারের মতো কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। গত দুই মাসে অন্তত ১০ জন বিরোধী দলের সমর্থক জেল কাস্টডিতে মারা গেছে বা খুন হয়েছে। অনেক মানবাধিকার কর্মী আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন, কেউ কেউ দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন, যেখানে নভেম্বরেই বেশিরভাগ সন্দেহভাজন জোরপূর্বক গুমের ঘটনার খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিবৃতিতে টার্র্ক বলেছেন, “এসব ঘটনার স্বাধীন তদন্ত হওয়া উচিত এবং যারা জড়িত তাদের অবশ্যই স্বচ্ছ এবং ন্যায় বিচারের আওতায় আনতে হবে।” 

যা বললো কানাডা 

৮ জানুয়ারি সোমবার ঢাকায় কানাডিয়ান হাইকমিশন এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, সাতই জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে কোনও পর্যবেক্ষক পাঠানো হয়নি। তারা বলছে,পর্যবেক্ষক হিসেবে চিহ্নিত কানাডার দু’জন নাগরিক ’স্বতন্ত্রভাবে’ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। কাজেই নির্বাচন নিয়ে তাদের দেওয়া মতামতের সাথে কানাডা সরকারের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। 

উল্লেখ্য যে, রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ শেষে সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন বিদেশি পর্যবেক্ষকদের একটি দল। এতে চন্দ্রকান্ত আর্য এবং ভিক্টর ওহ নামে কানাডার দু’জন নাগরিক অংশ নেন। তখন ’ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে’ বলে সাংবাদিকদের জানান আর্য। তার এই মন্তব্য যে কানাডা সরকারের বক্তব্য নয়, ফেসবুক পোস্টে সেটাই পরিষ্কার করে বিবৃতি দিলো কানাডা হাইকমিশন। 

অন্যদিকে, বাংলাদেশে টানা চতুর্থবারের মত নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ায় সোমবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে ভারত, চীন এবং রাশিয়াসহ মোট ১৯টি দেশ। এর মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোনে অভিনন্দন জানান। সোমবার বিকেলে নরেন্দ্র মোদী নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে এক পোষ্টে এ অভিনন্দন জানানোর ব্যাপারটি জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন,“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বললাম এবং সংসদ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছি।”

শেয়ার করুন