২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১০:২৭:২২ পূর্বাহ্ন


বিজয়ের আনন্দ : পতাকার উজ্জ্বল আলো
ফকির ইলিয়াস
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-১২-২০২২
বিজয়ের আনন্দ : পতাকার উজ্জ্বল আলো


একাত্তরের ডিসেম্বর বাঙালির গৌরবের মাস। এই মাসেই জন্ম দেয় একটি স্বাধীন দেশ-বাংলাদেশ। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই অনুমান করা শুরু হয়ে যায়, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আর পেরে উঠছে না! চারিদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের বড় বড় জেলা শহরগুলোর দিকে এগোতে শুরু করেন। ভারত কী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকৃতি দিচ্ছে! এমন একটা গুঞ্জন বিশ্বব্যাপী ছড়াতে থাকে।

অবশেষে ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। সেদিন লোকসভায় দাঁড়িয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে বিশাল বাধার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রাম এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করার পর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

বাংলাদেশের স্বীকৃতি নিয়ে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় ৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে লেখা হয় ‘স্বীকৃতির তিলক বাংলাদেশের ললাটে। বাংলাদেশের আজ বিচলিত হওয়ার কিছু নাই। সূর্যোদয়কে যাহারা অস্বীকার করে, তাহারা অন্ধ মাত্র, অস্বীকৃতির দৃষ্টিহীনতা সকালের রশ্মিজলকে মিথ্যা করিয়া দিতে পারে না।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বক্তব্য শেষ না হতেই ভারতের সংসদ সদস্যদের হর্ষধ্বনি আর ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে ফেটে পড়েন তারা। সেদিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মিত্ররাষ্ট্র ভারতের জওয়ানদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘ভারতের সৈন্যবাহিনীর জওয়ানরা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশের মাটি থেকে হানাদার শত্রুদের নির্মূল করার জন্য আজ যুদ্ধ করে চলেছে।’

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ায় পাকিস্তান, ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। ভারতে মার্কিন অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যায়। উত্তর ভিয়েতনামে যুদ্ধরত দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত মার্কিন সপ্তম নৌবহরকে  বঙ্গোপসাগরের দিকে যাত্রার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু রণাঙ্গনে ততোক্ষণে পাকিস্তানি হানাদাররা পলায়ন শুরু করেছে।

মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি জাতিকে একটি পতাকা দিয়েছে। দিয়েছে একটি স্বাধীন মানচিত্রের ভূমিরাষ্ট্র। ২০০৪ সালের ১২ জানুয়ারি পল্টনে এক মহাসমাবেশ করার পর ওই বছর থেকেই সারা দেশে ১ ডিসেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম।

আজকের প্রজন্মের উচিত, মহান মুক্তিযুদ্ধকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যাওয়া। উচিত, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পড়া। কারণ এই মহান মুক্তিযুদ্ধই আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার শক্তি দিয়েছে।

শেয়ার করুন